Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
মিশন নির্মল বাংলা

প্রতি বাজারে শৌচালয় গড়বে প্রশাসন

শুধু বাড়িতে নয়। এ বার বাজার-বাসস্ট্যান্ডেও শৌচালয় তৈরিতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। শুধু বাড়িতে শৌচালয় থাকলেই যে মিশন নির্মল বাংলা বা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লক্ষ্য সফল হবে না, তা সকলেরই জানা। মেদিনীপুর শহরের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে ইতিমধ্যেই শৌচালয় রয়েছে।

সুমন ঘোষ
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৫ ০১:১৩
Share: Save:

শুধু বাড়িতে নয়। এ বার বাজার-বাসস্ট্যান্ডেও শৌচালয় তৈরিতে উদ্যোগী হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন।

শুধু বাড়িতে শৌচালয় থাকলেই যে মিশন নির্মল বাংলা বা স্বচ্ছ ভারত অভিযানের লক্ষ্য সফল হবে না, তা সকলেরই জানা। মেদিনীপুর শহরের সেন্ট্রাল বাসস্ট্যান্ড-সহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে ইতিমধ্যেই শৌচালয় রয়েছে। তবে শহর থেকে দূরে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলিতে বাসস্ট্যান্ড ও বাজারে শৌচালয় না থাকায় সমস্যায় পড়েন অনেকে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) পাপিয়া ঘোষ রায়চৌধুরীর কথায়, ‘‘এই অভিযানের লক্ষ্যই হল যত্রতত্র নয়, নির্দিষ্ট জায়গাতেই শৌচকর্ম করতে হবে। তাই কেবলমাত্র বাড়িতে শৌচালয় করলেই হবে না, বাসস্ট্যান্ড-বাজার সহ সর্বত্রই এই ব্যবস্থা করা হবে। সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ।’’

প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পের জন্য বাজার কমিটিকে কোনও খরচ করতে হবে না। টাকা দিতে হবে না স্থানীয় মানুষকেও। তবে উদ্যোগী হতে হবে স্থানীয়দেরই। হাট-বাজার-বাসস্ট্যান্ডে যেখানে শৌচালয় প্রয়োজন সেখানে প্রথমে একটি কমিটি তৈরি করতে হবে। কমিটি শৌচালয় তৈরির জন্য লিখিত ভাবে আবেদন জানাবেন। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে সেই আবেদন বিডিও-র কাছে যাবে। বিডিও অনুমোদন করার পরেই ২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাবে।

প্রশ্ন হল, শৌচালয় তৈরি হলেও তা রক্ষণাবেক্ষণ করবে কে?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ক্ষেত্রেও ওই কমিটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ওই কমিটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শৌচালয় ব্যবহারকারীদের থেকে ন্যূমতম অর্থ নিতে পারবেন। সেই টাকা দিয়ে লোক রাখা যাবে। সারা মাসে যে টাকা আয় হবে। তা দিয়ে যেমন কর্মীর মজুরি দেওয়া যাবে, তেমনই শৌচালয় রক্ষণাবেক্ষণের কাজও করা যাবে। এর ফলে কয়েকজন লোকের কর্মসংস্থানও হবে।

ইকিমধ্যে গড়বেতা-২ ব্লকের মাকলি বাজার, পিংলার মীরপুর বাজার, মোহনপুরের নীলদা বাজার, ঘাটালের রাধানগর বাসস্ট্যান্ড, কুঠিঘাট বাসস্ট্যান্ড, চন্দ্রকোনা-১ ব্লকের শ্রীনগর বাজার, জাড়া চকবাজার, কালিকাপুর বাসস্ট্যান্ড, মাংরুল বাজার, দাসপুরের লঙ্কাগড় হাওয়ামহল বাসস্ট্যান্ডে শৌচালয় তৈরির আবেদন জমা পড়েছে। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই সব এলাকায় শৌচালয় তৈরির জন্য টাকাও দিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে কাজও শুরু হয়ে গিয়েছে। শীঘ্রই শৌচালয় তৈরির কাজও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।

বাজার ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যে শৌচালয় তৈরি জরুরি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ধরা যাক, মেদিনীপুর-গড়বেতা রাস্তার কথা। গোদাপিয়াশাল কাচারিমোড়ের দু’দিকে সারি সারি দোকান। প্রতিদিন কয়েকশো মানুষের যাতায়াত। বহু লোক বাজার করতে এখানে আসেন। আবার অনেকে বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরে মেদিনীপুরেও যান। কিছুটা দূরেই গোদাপিয়াশাল হাট। সংলগ্ন এলাকার প্রায় ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ সেখানে সব্জি কিনতে আসেন। কিন্তু নেই কোনও শৌচালয়। গড়বেতা ঢোকার মুখে ময়রাকাটাতেও একই অবস্থা। হাতে গোনা কয়েকটি জায়গায় প্রস্রাবাগার রয়েছে। শৌচালয় নেই বললেই চলে।

সমস্যা মেটাতে প্রশাসন এ বার জেলার সর্বত্রই শৌচালয় তৈরির কাজে গতি আনতে চাইছে। তবে এ ক্ষেত্রে দু’টি সমস্যা দেখা দিতে পারে। প্রথমটি হচ্ছে জমির সমস্যা। প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, রাস্তার ধারে জমির ক্ষেত্রে খুব সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা পূর্ত দফতরের জমি। তবে সর্বত্র শৌচালয় তৈরি করতে গেলে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদেরও সক্রিয় হতে হবে। তবে বাস্তবে কমিটি তৈরি করা, শৌচালয় তৈরির জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন করা, রক্ষণাবেক্ষণ করা- সকলেই দায়িত্ব এড়াতে চান। অথচ, শৌচালয় তৈরি হলে যে বহু মানুষ উপকৃত হবেন তা নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে।

সচেতনতা বাড়াতে কয়েকটি ক্ষেত্রে প্রকল্প বাস্তবায়িত করার পর এ বিষয়ে প্রচারেরও পরিকল্পনা নিয়েছে প্রশাসন। তারই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এলাকায় জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের মাধ্যমে পানীয় জলের ব্যবস্থা করা, বিদ্যুত্‌ দফতর বা অন্য দফতরের সাহায্যে প্রতীক্ষালয়ে সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে আলোর ব্যবস্থা করারও পরিকল্পনা রয়েছে। এখন তো সৌরবিদ্যুতের মাধ্যমে পানীয় জলের প্রকল্পও হচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসকের কথায়, ‘‘সৌরবিদ্যুত্‌ হলে বিদ্যুত্‌ বিলের বিষয়টি থাকে না। আবার পাম্প চালানোর জন্য কর্মীরও প্রয়োজন নেই। ফলে আশা করি, তখন সকলেই আগ্রহী হবেন।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE