জোরকদমে: চলছে বাঁধের ভাঙা রাস্তা মেরামতের কাজ। নিজস্ব চিত্র
সমুদ্রে প্রবল জলোচ্ছাস। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া আর অবিরাম বৃষ্টি। এই ত্র্যহস্পর্শেই তাজপুরের কাছে সমুদ্র বাঁধ উপচে জল ঢুকল স্থানীয় জামড়া শ্যামপুর গ্রামে। ভেঙে গেল সমুদ্র বাঁধের উপরে পাকা সেতুর একাংশ।
পূর্ব মেদিনীপুরের পর্যটনকেন্দ্র শঙ্করপুর ও তাজপুরের মাঝামাঝি সমুদ্র লাগোয়া গ্রাম জামড়া শ্যামপুর। বাসিন্দা প্রায় ছ’শো। শুক্রবার সেখানে পৌঁছে দেখা গেল, সমুদ্র বাঁধ বরাবর গ্রাম জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে বৃহস্পতিবারের প্রবল জলোচ্ছাসের চিত্র। কোথাও উল্টে গিয়েছে মাছ ধরার নৌকো, কোথাও ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের লোহার স্তম্ভ। বছর খানেক আগে তৈরি পাকা সেতুর নীচের অংশে কালো গ্রানাইট পাথরের নির্মাণেরও বেশ কিছুটা ভেঙে পড়েছে। বিপজ্জনক ভাবে ঝুলছে সেতুর সেই ভাঙা অংশ। আর বাঁধ উপচানো সমুদ্রের জল ঢুকে ভাসিয়ে দিয়েছে আনাজ খেত। তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত এক কিলোমিটার অংশে কাঠের গুঁড়ির অস্থায়ী বাঁধও ভেঙে গুঁড়িয়ে গিয়েছে। এই অংশেই বড়বড় বোল্ডার ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ সব তছনছ করে দিয়েছে।
দুর্যোগ আর জলচ্ছ্বাসে গ্রাম তছনছ হয়ে যাওয়ায় শিশু, মহিলা-সহ বেশিরভাগ গ্রামবাসীই সমুদ্রের বাঁধের উপরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁদের ক্ষোভ, এই বিপর্যয়ের জন্য সেচ দফতর দায়ী। কারণ, বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথ ভাবে হয় না। স্থানীয় শুভজিৎ পাত্র বলছিলেন, “এমন ঝোড়ো হাওয়া থাকলে জোয়ারে সমুদ্র বাঁধের একটা বড় অংশ ভেঙে যেতে পারে। টানা বৃষ্টি আর জলোচ্ছাসে ইতিমধ্যেই বাঁধের বেশ কিছু জায়গায় পাথর সরে গিয়েছে।’’ এলাকার বাসিন্দা তপন জানার কথায়, “কাঠের গুঁড়ি, বালির বস্তা আর বোল্ডার ফেলে সমুদ্র ভাঙন আটকানোর চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু তার আয়ু আর কত দিন।” গ্রামের বৃদ্ধ হেমন্তকুমার জানা দাঁড়িয়ে ছিলেন বাঁধের উপর। তিনি বলেন , “এর আগে সমুদ্রের জল ঢোকায় চার বছর চাষ হয়নি। এ বার কী হবে ভাবছি।’’ আতঙ্কে বৃহস্পতিবার রাতেই বাড়ির মহিলা-শিশুদের আত্মীয়বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন বলেও জানালেন হেমন্তবাবু।
শুক্রবার এলাকা পরিদর্শনে এসেছিলেন প্রশাসনের কর্তারা। ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরি। অখিলবাবু বলেন, “বৃহস্পতিবার রাতে সমুদ্রের জল এখানে বিপদসীমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়ায় জলোচ্ছাস হয়েছে। জোয়ার আসার আগে বাঁধ মেরামত জরুরি। সেচ দফতরকে আপাতত বালির বস্তা ফেলে পরিস্থিতি সামাল দিতে বলেছি।’’ গ্রামবাসীকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরানোর ব্যবস্থা হচ্ছে বলেও জানান রামনগর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নিতাই সার। আর যুগ্ম বিডিও গণেশ কর্মকার বলেন, “ব্লকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। প্রয়োজনে কোস্টগার্ড,
কোস্টাল পুলিশ বা বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে ডাকা হবে।’’
সেচ দফতরের কাঁথি ডিভিশনের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার স্বপন পণ্ডিত মানছেন, ‘‘গোটা বর্ষা এই বাঁধ সমুদ্রের ঝাপটা সামলেছে। তাই কিছুটা দুর্বল ছিলই। আপাতত বালির বস্তা ফেলে মেরামত করা হচ্ছে। আর টাকা বরাদ্দ হলেই কংক্রিট দিয়ে বাঁধ সংস্কার করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy