শীতের মরসুমে সব্জির দাম কম। ভাল দাম না মেলায় উদ্বিগ্ন চাষিরা। আবার গ্রীষ্মে তুলনায় সব্জির দাম বেশি থাকে। তখন অগ্নিমূল্য সব্জি কিনতে গিয়ে হাত পোড়ে মধ্যবিত্তের। অসময়েও সব্জির জোগান বেশি রাখতে ‘গ্রিন হাউস’ চাষের পথ বাতলাচ্ছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
শীতে খাবারের পাতে হরেক সব্জি বাঙালির ফেভারিট। শীতের সব্জির তালিকায় প্রথম সারিতেই রয়েছে সিম, বেগুন, বাঁধাকপি, ফুলকপি। তবে সব্জির উৎপাদন ভাল হওয়ায় দাম কমছে। বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সব্জি চাষ হয়। ফলন ভাল, দামও কম।
‘গ্রিন হাউস’ কী?
গ্রিন হাইসে লোহার কাঠামোর চারিদিকে ও ছাদে স্বচ্ছ আবরণ থাকে। ১০০০ স্কোয়ার মিটার আয়তনের ‘গ্রিন হাউস’ বানতে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ। একবার ‘গ্রিন হাউস’ বানালে ৮-১০ বছর সহজেই চাষ করা যাবে। গ্রিন হাউসে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো ঢুকতে পারে। আবার অতিরিক্ত উত্তাপ সব্জির ক্ষতিও করতে পারে না। ফলে গরমেও সহজেই গ্রিন হাউসে সব্জি চাষ করা যেতে পারে। তবে ‘গ্রিন হাউস’ তৈরির খরচ বেশি। তাই ‘গ্রিন হাউস’-র ক্ষুদ্র সংস্করণ ‘শেড নেট’ তৈরির ব্যয় কম। ১০০০ স্কোয়ার মিটারের শেড নেট তৈরিতে খরচ পড়ে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার। তবে শেড নেট বড়জোড় ৩ বছর একটানা চাষ করা যেতে পারে। তবে এই পদ্ধতিতে সব্জি চাষ করলে লাভ ভাল হবে বলেই বিশেষজ্ঞদের অভিমত।
জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক কুশধ্বজ বাগের কথায়, “প্রথমেই খরচের অঙ্কটা বেশি দেখে চাষিরা ঝুঁকি নিতে চান না।” পিংলার গো গ্রামের চাষি সুব্রত মহেশ অবশ্য উদ্যান পালন আধিকারিকের যুক্তি মেনেই বলেন, “অসময়ের চাষে লাভ বেশি এটা জানি। তবে এককালীন এত টাকা খরচ করার আগে একটা ভয় থেকেই যায়।” গ্রিন হাউস তৈরির খরচের ৫০ শতাংশ তো সরকার দেবে। সুব্রতর কথায়, “টাকা তো পরে দেবে। প্রথমে তো আমাকেই খরচ করে চাষ করতে হবে। চাষের সাফল্য দেখে তবে সরকার ছাড় দেবে। তাই ঝুঁকি তো রয়েই যায়।”
যদিও ডেবরার মণ্ডত্ গ্রামের অমিত জানা বলছেন, “গত বছর খড়্গপুর আইআইটি-র একটি প্রশিক্ষণ শিবিরে যোগ দিতে গিয়ে গ্রিন হাউসের কথা জেনেছি। তারপর থেকেই ওই পদ্ধতিতে চাষ করার জন্য মনস্থির করেছি। উদ্যান পালন দফতরের সঙ্গেও কথা হয়েছে।’’ সাত একর জমি রয়েছে অমিতবাবুর। তাঁর কথায়, “গ্রামের জমিতে প্রচুর সব্জি হয়। কিন্তু এখন সব্জির দাম পাচ্ছি কোথায়? সিম টাকা দিয়ে কেউ কিনতে চাইছে না। কপিরও দাম কম। বেগুনের দাম কখনও ২ টাকা আবার কখনও ৫ টাকা প্রতি কিলোগ্রাম। কিন্তু অসময়ে সব্জি চাষ করলে ভাল লাভ পাব বলেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন। এ বার তাই করব।’’
জেলা উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে চাষিদের দিয়ে ৮টি গ্রিন হাউস ও ১৬টি শেড নেট তৈরির জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। চাষিদের তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। উদ্যান পালন আধিকারিকের কথায়, “কয়েকজনকে দিয়ে আগে চাষ করানো গেলে লাভ দেখে অন্যরাও উত্সাহিত হবেন। তখন চাষিরাই ওই পদ্ধতিতে চাষের জন্য আমাদের কাছে আসবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy