রক্ষী নেই এটিএমে। মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের কাছে।
নজরদারির বালাই নেই। নিরাপত্তারক্ষী তো নেই-ই। অনেক জায়গায় নেই সিসিটিভিও। নিরাপদ নয় মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শহরের অনেক এটিএম!
ভুয়ো ফোন করে এটিএমের পিন নম্বর জেনে নিয়ে টাকা জালিয়াতির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। আস্ত এটিএম তুলে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার নজিরও রয়েছে। তারপরেও নিরাপত্তা এমন ঢিলেঢালা থাকবে কেন, প্রশ্ন অনেকেরই। মেদিনীপুরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘দিনের বেলায় তাও না হয় হল। রাতে রক্ষীবিহীন এটিএমে টাকা তুলতে রীতিমতো ভয় করে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘অনেক এটিএম কাউন্টারের সামনে থেকে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। কাউন্টারের বাইরে সিসিটিভি থাকে না। ফলে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করার উপায়ও নেই। ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়া উচিত।’’
নিরাপত্তার এমন হাঁড়ির হাল কেন? এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মেদিনীপুর শাখার ম্যানেজার বলেন, “এটিএমে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।” জেলার লিড ডিস্ট্রিক্ট ব্যাঙ্ক ম্যানেজার (এলডিএম) শক্তিপদ পড়্যা বলেন, “এটিএমগুলোয় নিরাপত্তারক্ষী থাকলে ভাল হয়। বিষয়টি দেখছি।” জানা গিয়েছে, এখন একাংশ ব্যাঙ্ক এটিএম মেশিনগুলোর বিমা করিয়ে নেয়। অর্থাৎ, মেশিনের কোনও ক্ষতি হলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছ থেকে ব্যাঙ্ক ক্ষতিপূরণ পেয়ে যাবে। যদিও গ্রাহকদের নিরাপত্তার বিষয়টি ততটা গুরুত্ব পাচ্ছে না বলে অভিযোগ! মেদিনীপুরের বাসিন্দা সুজাতা কয়ালের কথায়, “মেদিনীপুরের বেশির ভাগ এটিএমে নিরাপত্তা প্রায় নেই বললেই চলে! যেখানে একজন করে এটিএমে ঢোকার কথা সেখানে একাধিক লোক ঢুকে পড়ছে। সবার সামনেই পিন নম্বর দিতে হচ্ছে। নিরাপত্তারক্ষী থাকলে এমনটা হত না।”
একাধিক লোক ঢুকে পড়েছেন এটিএমে। খড়্গপুরের বোগদায়।
খড়্গপুরেও অবস্থা কমবেশি একই। বুধবার দেখা গেল, খড়্গপুর স্টেশন চত্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্কের এটিএমে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তি টাকা তুলতে ঢুকে পড়েছেন। রক্ষীর অবশ্য দেখা মিলল না। ওই ব্যাঙ্কের খড়্গপুর শাখার ম্যানেজার সরোজকুমার যাদব বলেন, ‘‘এটিএমে রাতে নিরাপত্তারক্ষী থাকে। আর স্টেশন চত্বর হওয়ায় রেলের নিরাপত্তারক্ষী থাকেই। কোনও গ্রাহক বিপদে পড়লে তাঁরাও এগিয়ে আসতে পারে। সিসিটিভিও রয়েছে।’’ কিন্তু এ ভাবে চার-পাঁচ জন এটিএমে ঢুকে পড়ায় পিন নম্বরের গোপনীয়তা কোথায়? ম্যানেজারের যুক্তি, ‘‘আমার মনে হয়, গ্রাহকদের সচেতন হওয়া জরুরি।’’
খড়্গপুরে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার অনেক এটিএমও অরক্ষিত। এ দিন এসবিআইয়ের পুরাতনবাজার এটিএমে গিয়ে দেখা গেল, একাধিক ব্যক্তি কাউন্টারে ঢুকে প়ড়েছেন। খড়্গপুর গ্রামীণের কাশীমালির বাসিন্দা গ্রাহক বুদ্ধদেব সিংহ বলেন, ‘‘এটিএম কাউন্টারে রক্ষী না থাকার সুযোগে একাধিক লোক ঢুকে যাচ্ছে। এতে বিপদের সম্ভাবনা আরও বাড়ছে।’’ এসবিআইয়ের রিজিওনাল ম্যানেজার মনমোহন রথ বলেন, ‘‘নিশ্চয় খোঁজ নেব কোথায় নিরাপত্তারক্ষীর অভাব রয়েছে। এটিএম কাউন্টারগুলিকে আরও সুরক্ষিত করার চেষ্টা করব।’’ অন্য কয়েকটি রাষ্টায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেরও কমবেশি একই অবস্থা।
জেলায় এটিএমের সংখ্যা ৩৬৯। এর বেশির ভাগই রক্ষীবিহীন। জেলার এক ব্যাঙ্ক কর্তার দাবি, “এটিএমের নিরাপত্তারক্ষী, টাকা তোলার পর এসএমএস-সহ বিভিন্ন বিষয়গুলোর জন্য এজেন্সির হাতে দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। একাংশ এজেন্সিই রক্ষী রাখে না।” পুলিশের এক সূত্রে খবর, বছর দু’য়েক আগে এক বৈঠকে এটিএমে রক্ষী মোতায়েন, উন্নত সিসিটিভ বসানো, এটিএমের দরজায় কার্ড পাঞ্চ করে ঢোকার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। যদিও পুলিশ-কর্তারা মানছেন, এটিএমের সুরক্ষায় সে ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে, এটিএমগুলো এখনও নিরাপদ নয়। জেলা পুলিশের এক সূত্রের দাবি, পরিস্থিতি দেখে এখন মেদিনীপুরের এটিএমগুলোয় সন্ধের পর সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয়। ভোর পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়াররা থাকেন।
যদিও আদতে এটিএমগুলো কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে সংশয় রয়েছেই।
নিজস্ব চিত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy