প্রতীকী চিত্র।
গরু তুমি কার?
কমলাকান্ত জবাব দিয়েছিলেন, যে দুধ খায় তার।
জঙ্গলমহলের এক পঞ্চায়েত প্রধান অবশ্য অন্য উপায় বাতলালেন। গরুর মালিকানা নিয়ে দুই পড়শির বিবাদ মেটাতে তিনি নিদান দিলেন, গরু যার বাড়িতে যাবে, গরু তারই।
মঙ্গলবার গরু নিয়ে দুই দাবিদারের কাজিয়া মেটাতে পঞ্চায়েত প্রধানের এমন অভিনব মীমাংসার সাক্ষী রইল ঝাড়গ্রাম জেলার গোপীবল্লভপুর।
গোপীবল্লভপুরের মন্দির রোডের বাসিন্দা স্নাতকস্তরের পড়ুয়া তুফান কুণ্ডু ও পেশায় দিনমজুর রবিকান্ত দাস পড়শি। দু’জনেই দাবি করছেন, গরুটি তাঁদেরই। তুফানের দাবি, দিন পনেরো আগে তাঁদের সাদা রঙের গরুটিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কয়েকদিন আগে তুফান জানতে পারেন, রবিকান্তের গোয়ালে তাঁর সেই গরু বাঁধা রয়েছে। তুফান রবিকান্তের বাড়িতে গিয়ে গরু ফেরত চাইলে রবিকান্ত দাবি করেন, গরুটি তিনি হাট থেকে কিনে এনেছেন। এই নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়।
গরু ফেরত পেতে তুফান মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন গোপীবল্লভপুর থানায়। গত শনিবার পুলিশ দু’পক্ষকে ডেকে অভিযোগ শোনে। কিন্তু সমস্যা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খায় পুলিশ। পরীক্ষামূলক ভাবে গত শনিবার গরুটিকে মাঝরাস্তায় ছাড়া হয়। উদ্দেশ্য গরুটি কোন মালিকের বাড়ি চিনে যাবে সেটা দেখা। কিন্তু গরুটি গোপীবল্লভপুরের ইকো পার্কের কাছে মাঝ রাস্তায় বসে জাবর কাটতে শুরু করে। রবিকান্ত গরুটিকে ফের নিজের গোয়ালে নিয়ে চলে যান। এরপরই মীমাংসার জন্য তুফানকে পঞ্চায়েতে যাওয়ার পরামর্শ দেয় পুলিশ।
সেই মতো তুফান গোপীবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অম্বিকা বেরার দ্বারস্থ হন। তুফান জানান, প্রতিদিন সকালে গরুটিকে বাড়ি থেকে ছাড়া হত। ছাড়ার পর গরুটি ইকোপার্কের কাছে গিয়ে বসে থাকত। গরুটির পায়ের ক্ষুরে সাদা-কালো দাগ রয়েছে। গত ১৫ দিন আগে গরুটি হারিয়ে যায়। তিন-চারদিন খোঁজাখুজির করেও গরুটিকে খুঁজে পাই নি। পরে ইকোপার্কের কাছে রবিকান্ত দাসের বাড়িতে সেই গরু বাধা রয়েছে বলে খবর জানতে পারেন। গিয়ে দেখেন ঘটনা সত্যি। তুফানের কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধানকে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও গরু ফেরত পাইনি। রবিকান্ত আমার গরুটিকে জোর করে বেঁধে রেখেছে।’’
অন্য দিকে রবিকান্ত বলেন, ‘‘আমি টাকা জমিয়ে ওই গরু হাট থেকে কিনে এনেছি। গরু আমার।’’
সমস্যা যে তাঁর কাছে মীমাংসার জন্য এসেছে তা মানছেন গোপীবল্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অম্বিকা বেরা। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে এক পক্ষ লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন। গরুটিকে বাজার এলাকায় ছেড়ে দেওয়া দিয়ে দেখা হবে সে কোন মালিকের বাড়ি যাচ্ছে। তারপরে পদক্ষেপ করা হবে।’’
কিন্তু এই উপায়ে কি সত্যি গরুর মালিক বাছা সম্ভব হবে! পঞ্চায়েতের লোকজনই বলছেন, আর উপায়ই বা কি। গরুর তো আর আধার কার্ড আর ভোটার পরিচয়পত্র হয় না। তাই গরু তার নিজের মালিককে চিনে নেবে, এতেই ভরসা রাখছে সকলে।
সত্যি চিনতে পারবে তো! অপেক্ষায় দাবিদার দুই মালিকই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy