—প্রতীকী চিত্র।
নবম শ্রেণির এক ছাত্রী টানা কিছু দিন স্কুলে আসছিল না। স্কুলের কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরা খোঁজ নিয়ে জানে, তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। মেয়েটিকে স্কুলে ফেরানোর দাবিতে তার বাড়ির সামনে অবস্থানেও বসে একদল ছাত্রী। দিন কয়েক আগে কেশপুরের এই ঘটনায় ওই ছাত্রীর পরিবার শেষমেশ আশ্বাস দিয়েছিল, মেয়ে ফের স্কুলে যাবে।
এমন ঘটনা বারবারই সামনে আসছে। হাজারও সচেতনতা প্রচার, পুলিশ- প্রশাসন, স্কুলগুলির নজরদারি সত্ত্বেও নাবালিকা বিয়ে রোখা যাচ্ছে না। বছরে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার নাবালিকার বিয়ে হচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুরের। জেলায় ২১টি ব্লকের মধ্যে এ ক্ষেত্রে শীর্ষে কেশপুর। এই ব্লকে বছরে প্রায় ১,২০০ মেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই বিবাহিত হয়ে যাচ্ছে।
সম্প্রতি জেলায় এক প্রশাসনিক বৈঠকে নাবালিকা বিয়ের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ২০২২-’২৩ এর সার্বিক তথ্য খতিয়ে দেখে ব্লক ধরে ধরে পর্যালোচনা হয়েছে। ওই বছরে জেলায় মোট ১১,৫৮০জন নাবালিকার বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে কেশপুরেরই ১,২৪৪জন। মোট ১০টি ব্লকে পাঁচশোর বেশি নাবালিকা বিয়ে হয়েছে। কেশপুর বাদে বাকি ব্লকগুলি হল— দাঁতন-২, ডেবরা, গড়বেতা-১, ঘাটাল, খড়্গপুর- ২, মেদিনীপুর, নারায়ণগড়, সবং, শালবনি। বিয়ের পরে বেশিরভাগ কিশোরীরই পড়া বন্ধ হয়েছে। নাম উঠেছে স্কুলছুটের তালিকায়।
সমস্যা স্বীকার করে জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি বলেন, ‘‘বাল্য বিবাহ রোধে প্রচারাভিযান আরও জোরদার করা হচ্ছে। কন্যাশ্রীরা থাকছে। ধারাবাহিকভাবে জেলা জুড়ে সচেতনতা প্রচার করা হচ্ছে।’’ সম্প্রতি কেশপুরের প্রশাসনিক বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে ছিলেন মেদিনীপুরের (সদর) মহকুমাশাসক মধুমিতা মুখোপাধ্যায়। মহকুমাশাসক বলেন, ‘‘কেশপুরে নাবালিকা বিয়ের সংখ্যাটা বেশি। সচেতনতামূলক কর্মসূচি আরও হচ্ছে। আশা করি, এতে ওই সংখ্যাটা কিছুটা হলেও কমবে।’’ কেশপুরের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, স্কুলস্তরে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হবে। গ্রামেগঞ্জে যেখানে এ ধরনের ঘটনা বেশি, সেখানে ওই কর্মসূচি হবে। প্রচারে ধর্মগুরুদের সহায়তা নেওয়া হবে।
প্রচারে কন্যাশ্রীদের আরও বেশি করে শামিল করার পরিকল্পনা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের মতে, মেয়েদের সমস্যা মেয়েরাই ভাল বুঝতে পারে। ওরা সহপাঠীদের গুছিয়ে বলতে পারে। সচেতনতা প্রচারে কন্যাশ্রীরা সাইকেল মিছিল-সহ নানা কর্মসূচি করবে। মূলত বাল্য বিবাহ রুখতেই কন্যাশ্রী প্রকল্প চালু করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। দুঃস্থ পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়েতে সহায়তার জন্য চালু হয়েছে রূপশ্রীও। তাও কেন বাল্য বিবাহে রাশ টানা যাচ্ছে না? প্রশাসনের এক সূত্রের ব্যাখ্যা, কন্যাশ্রী- রূপশ্রীর মতো প্রকল্পের সুফল পুরোপুরি পেতে আরও কিছুটা সময় লাগবে।
বস্তুত, সচেতনতা বেড়েছে বলেই এখন নাবালিকারা নিজেরাই বিয়ে রুখছে। জেলার একাংশ প্রধান শিক্ষকের মতে, ‘‘কিছু নাবালিকা বিয়ে বন্ধ করা গেলেও সব বিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। গ্রাম পঞ্চায়েতস্তরে সহযোগিতার অভাব এর একটা বড় কারণ। গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ গ্রামে নাবালিকা বিয়ে হচ্ছে জেনেও আমাদের খবর পর্যন্ত দেন না। সকলের সহযোগিতা পেলে আরও নাবালিকা বিয়ে রোখা যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy