উমা সরেন। ফাইল চিত্র।
কারও নাম নেননি প্রাক্তন সাংসদ। তবে ইঙ্গিতে স্পষ্ট, তাঁর নিশানা ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক আয়েষা রানিই। দলীয় সভায় নজিরবিহীন ভাবে প্রাক্তন সাংসদ তথা জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র উমা সরেন দুর্নীতির অভিযোগ এনেছেন জেলাশাসকের বিরুদ্ধে। উমার বক্তব্যের ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেননি আনন্দবাজার) ছড়িয়ে পড়ায় শোরগোল পড়েছে জঙ্গলমহলের জেলায়।
রবিবার বেলিয়াবেড়া ব্লক তৃণমূলের উদ্যোগে বিজয়া সম্মিলনীর আয়োজন করা হয় নোটা এলাকায়। জেলা ও ব্লক নেতৃত্বদের পাশাপাশি আমন্ত্রিত ছিলেন উমা। প্রকাশ্য মঞ্চে বক্তৃতার সময় কেন দলের একাংশ বদনাম হয়ে গিয়েছেন সেই ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উমা নাম না করে জেলাশাসককে কাঠগড়ায় তোলেন। প্রাক্তন সাংসদ বলেন, ‘‘আমার দলের ৯৯.৯৯ শতাংশ সমস্ত নেতা-কর্মী ভাল, নন কোরাপ্ট। সবাই দিনান্ত পরিশ্রম করেন। তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যাটা হল না জানা। আমরা বেশিরভাগ বিষয়ই জানি না। কীভাবে কাজ করব। মাত্র একজন সরকারি অফিসার আপনাদের জন্য যে টাকা পাঠানো হচ্ছে, সেটা মাঝখান থেকে তুলে নিয়ে কেরল হয়ে দুবাই পাঠিয়ে দিচ্ছে।’’ উমার সংযোজন, ‘‘সেই টাকা কেরল হয়ে দুবাই পাঠিয়ে দিচ্ছে কিনা সেটা বড় প্রশ্ন। আর সমস্ত বদনাম, দুর্নামটা আপনাদের ঘাড়ে।’’
দু’বছরে জেলায় উন্নয়ন খাতে পাঁচশো কোটি টাকা এসেছে জানিয়ে উমা প্রশ্ন তোলেন সে টাকা কোথায়? উমা বলেন, ‘‘এইটুকু আপনাকে ভাগ দিয়ে আর দুর্নামের পাহাড় আপনার ঘাড়ে দিয়ে মাঝখান থেকে একটা অফিসার টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছে।’’ উমা আরও দাবি করেন, ৯৯.৯৯ শতাংশ সরকারি আধিকারিক সৎ এবং ভাল। তাঁরা চান সরকারি প্রকল্পগুলি যেন মানুষের কাছে পৌঁছয়। কোনও একজন অফিসার এই দলে এক-দু’জন চিটিংবাজ ও ফড়েদের ঢুকিয়ে দিয়ে নেতা-কর্মীদের বদনাম করে দেয়।
উমা এ দিন ফোন ধরেননি। জেলা তৃণমূলের সভাপতি দুলাল মুর্মু বলেন, ‘‘ওই সভায় আমিও ছিলাম। তবে প্রাক্তন সাংসদ কাকে উদ্দেশ্য করে ওই কথা বলেছেন তা আমার জানা নেই। তিনি যা বলেছেন সেটা তাঁর ব্যক্তিগত মত।’’ জেলা নেতাদের একাংশ মানছেন, উমার নিশানা যে জেলাশাসক তা স্পষ্ট। আয়েষার বাড়ি কেরলে। আর তাঁর স্বামী কর্মসূত্রে দুবাইয়ে থাকেন। তৃণমূলের নেতা ও জনপ্রতিনিধির একাংশ আড়ালে এ-ও বলছেন, ‘‘এতদিন জেলাশাসক সম্পর্কে স্পষ্ট করে তাঁরা যে কথা বলতে পারছিলেন না, সেটাই উমা প্রকাশ্যে বলে দিয়েছেন।’’ জেলাশাসক আয়েষা অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘যথেষ্ট প্রমাণ ছাড়া এই ধরনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মন্তব্য করা সম্ভব নয়।’’
পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফলের জেরে ২০১৮ সালের মাঝামাঝি আর অর্জুনকে জেলাশাসকের পদ থেকে সরিয়ে উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েষা রানিকে ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসা হয়। স্বচ্ছ প্রশাসন গড়ার লক্ষ্যে আয়েষা কাজ শুরু করেন। কিন্তু ক্রমে বেশিরভাগ তৃণমূল নেতা ও জনপ্রতিনিধির বিরাগভাজন হয়ে ওঠেন জেলাশাসক। করোনা তথ্য গোপন, জনপ্রতিনিধিদের এড়িয়ে পঞ্চায়েতস্তরে পরিকল্পনা রূপায়ণ থেকে নানা বিষয়ে আয়েষা একক সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন বলে অভিযোগ। তৃণমূলের হাতে গোনা দু’তিন জন নেতা-নেত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও বাকিদের আয়েষা গুরুত্ব দেন। জেলায় বেশ কিছু প্রশাসনিক আধিকারিক বদলি হয়েছেন। তারপরে প্রকাশ্য সভায় উমার এমন মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি ‘টিম পিকে’র কাছেও জেলার কয়েক জন নেতা অভিযোগ করেছিলেন, ভারতী ঘোষের মতো সর্বময় কর্ত্রী হয়ে উঠেছেন বর্তমান জেলাশাসক। শাসকদলের নেতাদের এড়িয়ে কাজ করছেন। যদিও জেলাশাসকের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, আয়েষা দুর্নীতি ঠেকাতে গিয়ে একটি মহলের রোষের মুখে পড়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy