পাশাপাশি: মেলার মঞ্চে সাংসদ দিলীপ ঘোষের পাশে বিধায়ক সমরেশ দাস। এই অনুষ্ঠান থেকে শুরু বিতর্ক। নিজস্ব চিত্র
মেলার উদ্বোধনী মঞ্চে বিরোধী দলনেতার সঙ্গে হাজির হয়ে শীর্ষ নেতৃত্বের কোপে পড়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। তাতে আপাতত ‘ভীত’ দলের অন্য নেতৃত্বও। কেউ বলছেন এতে নিচু তলার নেতাদের কাছে ভুল বার্তা যাবে, তো কেউ কোনও অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়ার আগেই উদ্যোক্তাদের কাছে জানতে চাইছেন— ‘বিজেপির কেউ আসছেন না তো’!
গত শুক্রবার এগরা মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান ছিল। সেখানে এক মঞ্চে বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের সঙ্গে হাজির ছিলেন তৃণমূলের বিধায়ক সমরেশ দাস এবং এগরা-১ ব্লকের তৃণমূলের সভাপতি সিদ্ধেশ্বর বেরা। এর পরেই শো-কোজ করা হয়েছে সমরেশকে। পদ থেকে সরানো হয়েছে সিদ্ধেশ্বরকে। বিজেপি’র ঝাড়গ্রামের সাংসদ কুনার হেমব্রমের সঙ্গে একই মঞ্চে মিনিট দেড়েক থাকাতেই রবিবার শো-কজ করা হয়েছে শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাতকে। বিষয়গুলি নিয়ে শোরগোল পড়েছে দলের নিচু স্তরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে। প্রকাশ্যে কিছু না বলেও তাঁদের বক্তব্য, সামাজিক অনুষ্ঠানে সৌজন্য দেখাতেও গিয়ে যদি দলের শাস্তির মুখে পড়তে হয়, তাহলে এটা নিয়ে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। অনেকের আবার প্রশ্ন, কোনও দিন রাজ্যে তৃণমূল বিরোধী দল হয়ে গেলে, সে সময় যদি শাসকেরা তৃণমূলের নেতাদের প্রতি সৌজন্য না দেখান, তা হলে কেমন লাগবে?
তবে আড়ালে আবডালে যে যাই বলুন না কেন, সমরেশকে শো-কজ সকলে ভাবিয়েছে, তার প্রমাণ মিলেছে এই দু’দিনেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক বিধায়ক জানিয়েছেন, সম্প্রতি পটাশপুরের একটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তাঁকে আমন্ত্র জানানো হয়েছিল। ওই বিধায়কের কথায়, ‘‘উদ্যোক্তারা আমন্ত্রণপত্রে আমার নাম ছাপানোর অনুমতি চেয়েছিলেন। আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি সেখানে বিজেপির এক জেলা নেতা থাকবেন। তাই আমি জানিয়েছিলাম আমার যাওয়া সম্ভব নয়।’’
এদিকে, যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই সমরেশ রবিবার জানিয়েছেন, তিনি এখনও পর্যন্ত শো-কোজের কোনও চিঠি পাননি। সমরেশ বলেন, ‘‘শো-কজের চিঠি হাতে আসেনি। কে শো-কজ করেছেন বুঝতে পারছি না। তাই কাকে জবাব দেব, তাও জানি না। আমি আরও দুদিন অপেক্ষা করব। তার পরেও চিঠি হাতে না এলে নিজেই দলের জেলা এবং রাজ্য নেতৃত্বকে ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাব। এভাবে শো-কজ করলে মানুষের কাছে ভুল বার্তা যাবে। এতে দলে ক্ষতি হবে।’’
তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী অবশ্য এ ব্যাপারে বলেন, ‘‘শো-কজের চিঠি পাঠানো হয়েছে। সময় মতো উনি পাবেন।’’ ভুল বার্তার দাবি প্রসঙ্গে শিশির বলেন, ‘‘উনি ওঁর বক্তব্য রাখতেই পারেন। এ নিয়ে আমার বলার কিছু নেই।’’
সমরেশকে শো-কজ এবং সিদ্ধেশ্বরকে সরানো প্রসঙ্গে অবশ্য দলের একাংশ তাঁদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন। যেমন সমরেশের পাশে দাঁড়িয়ে রামনগরের তৃণমূল বিধায়ক বলেন, ‘‘মেলার আমন্ত্রণপত্রে শিশিরবাবুরও নাম ছিল। নাম ছাপানোর ক্ষেত্রে উনি অনুমতি দিয়ে থাকলে সেখানে সমরেশ গিয়ে বড় কিছু ভুল করেছে বলে মনে করি না। এক্ষেত্রে কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।’’
আবার সিদ্ধেশ্বরকে পদ থেকে সরানো প্রসঙ্গে অখিল বলেন, ‘‘এভাবে ব্লক সভাপতিকে সরানোর এক্তিয়ার জেলা সভাপতির নেই। রাজ্য সভাপতির অনুমতি প্রয়োজন। দলের জেলা কমিটিতেও এ নিয়ে আলোচনা হয়নি।’’ অপসারিত ব্লক সভাপতিকে ফেরানোর দাবিতে রবিবার দলের সভাপতি সুব্রত বক্সী, জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী এবং শুভেন্দু অধিকারীকে চিঠি দিয়েছেন এগরা-১ ব্লক অঞ্চল তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রয়োজনে তাঁরা শিশিরের সঙ্গে দেখা করবেন বলেও জানিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে আগামী ৭ জানুয়ারি বালিঘাইয়ে কৃষি মেলায় হাজির থাকার কথা শিশির এবং সমরেশের। সেখানে দুই নেতার মধ্যে দূরত্ব দূর হয় কি না দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy