E-Paper

‘আরএল’ কি শনিবারেও দেওয়া হচ্ছিল

নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা ছিল না, ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ বা অন্য বিভিন্ন জিনিসের যে ‘স্টক’ বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে তার কী হবে? তার ফলে মেদিনীপুর-সহ একাধিক হাসপাতালে ৭ জানুয়ারির পরেও বিতর্কিত ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ ব্যবহৃত হয়েছে।

— প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০২৫ ০৭:০৩
Share
Save

‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ (আরএল) দেওয়ার পরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে প্রসূতি-মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রাজ্য তোলপাড়। প্রশ্ন, গত ১০ ডিসেম্বর ড্রাগ কন্ট্রোল ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’ সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’-সহ মোট ১৪ ধরনের ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধের নির্দেশ জারির পরেও, কী করে তা হাসপাতালে ব্যবহার হচ্ছিল! এমনকি, শনিবারেও উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে তা ব্যবহার হচ্ছিল বলে ধরা পড়ে। বিরোধীরা বলছেন, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর কি এ ব্যাপারে জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিকদের জানায়নি? ওই সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ বা অন্য ওষুধ, যা বিভিন্ন হাসপাতালে মজুত রয়েছে, তার ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়নি?

চলতি মাসের ৭ তারিখে স্বাস্থ্য দফতরের ‘সেন্ট্রাল মেডিক্যাল স্টোর্স’-এর নির্দেশিকায় ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’ সংস্থার ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’-সহ ১৪টি ওষুধের উৎপাদন ও সরবরাহ বন্ধ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। জানানো হয়েছে, যে হেতু রাজ্যের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে একমাত্র ওই সংস্থাই ১৪টি ওষুধ সরবরাহ করত, তাই এই পরিস্থিতিতে জোগান না থাকায় অভাব তৈরি হতে পারে। সমস্যার সমাধানে হাসপাতালগুলিকে স্থানীয় ভাবে ওই ১৪টি জিনিস কিনতে বলা হয়।

কিন্তু নির্দেশিকায় স্পষ্ট করা ছিল না, ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ বা অন্য বিভিন্ন জিনিসের যে ‘স্টক’ বিভিন্ন হাসপাতালে রয়েছে তার কী হবে? তার ফলে মেদিনীপুর-সহ একাধিক হাসপাতালে ৭ জানুয়ারির পরেও বিতর্কিত ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ ব্যবহৃত হয়েছে। এ দিন দুপুরে উত্তরবঙ্গের রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজে ওই ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’ ব্যবহার হয়েছে জানার পরে শোরগোল পড়ে। ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগিণীর স্বামী হিতেন বর্মণ বলেন, “হঠাৎ দেখলাম যে, দুপুরে স্ত্রীর স্যালাইন খুলে দিল। শুনলাম, যে স্যালাইন চলছিল, তা নিষিদ্ধ। ভয় পেয়ে গিয়েছি।” অনেকে হাসপাতালের বাইরের দোকানে স্যালাইন কিনতে ছোটেন।

রায়গঞ্জ মেডিক্যালের চিকিৎসকদের দাবি, অন্য কোনও সংস্থার স্যালাইন হাসপাতালে মজুত ছিল না বলে বাধ্য হয়েই রোগীদেরওই বিতর্কিত সংস্থার স্যালাইন শনিবারে দেওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জ মেডিক্যালের সুপার প্রিয়ঙ্কর রায় জানিয়েছেন, এ দিন দুপুরে ওই সংস্থার স্যালাইন বাতিলের সরকারি নির্দেশিকা পেয়েছেন।

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে বিতর্কিত স্যালাইন ব্যবহার হয়েছে বলে দাবি। জলপাইগুড়ি এবং কোচবিহার মেডিক্যাল কলেজ অবশ্য দু’-এক দিন আগে থেকেই ওই সংস্থার স্যালাইন ব্যবহার বন্ধ রেখেছে বলে দাবি করেছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া এবং পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শুক্রবারের পরে স্থানীয় ভাবে অন্য সংস্থার স্যালাইন কিনে ব্যবহার করা হচ্ছে। তার আগে রাজ্যের তরফে ওই ‘রিঙ্গার্স ল্যাকটেট’-এর ব্যবহার বন্ধের কোনও নির্দেশ আসেনি বলে দাবি তিন জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরই। ঝাড়গ্রাম মেডিক্যালেও শুক্রবার থেকে সাধারণ স্যালাইন ব্যবহার হচ্ছে।

রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, “ড্রাগস কন্ট্রোলার জেনারেল অব ইন্ডিয়া (ডিসিজিআই) এবং সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজ়েশনের উপযুক্ত তদন্ত করে দেখা দরকার যে, সংশ্লিষ্ট সংস্থাটি রাজ্যের শাসক দলের সঙ্গে যোগসাজসের জন্য সরকারি স্বাস্থ্য-ব্যবস্থায় সুবিধা পেয়েছে কি না।” সমাজমাধ্যমে তাঁর অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’ সংস্থার ১৪টি দ্রব্যের উৎপাদন ড্রাগ কন্ট্রোল নিষিদ্ধ করার পরেও স্বাস্থ্য দফতরের ‘স্টোর ম্যানেজমেন্ট ইনফর্মেশন সিস্টেম’-এ সেটা তোলা হয়নি এবং স্বাস্থ্য আধিকারিকেরাও তা প্রচারে গুরুত্ব দেননি’। প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেছেন যে, “কেন খুনের মামলা রুজু করাহবে না? মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরের ঘটনা, অথচ, তিনি চুপ কেন?”

রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “তদন্ত চলছে। হাসপাতাল কেন ওই স্যালাইন ব্যবহার করেছে, তাদের আগে থেকে বারণ করা হয়েছিল কি না, তদন্ততেই উঠে আসবে। আলাদা করে বলার প্রয়োজন নেই।” ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’-এর কর্ণধার কৈলাস মিত্রুকা ফোন ধরেননি। জবাব মেলেনিমোবাইল-বার্তার।

মাসখানেক আগে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে বেশ কয়েকটি স্যালাইনের বোতলে তুলো বা ছত্রাক জাতীয় বস্তু পাওয়া যায়। ঘটনাচক্রে, সে স্যালাইন প্রস্তুতকারক সংস্থা ছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ফার্মাসিউটিক্যাল’।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

midnapore Saline Midnapore Medical College and Hospital

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।