প্রতীকী ছবি।
এ যেন দুর্নীতির আবহে স্বচ্ছতার বার্তা দেওয়ার চেষ্টা। আবাস যোজনার তালিকা থেকে নিজের ভাইয়ের নাম বাতিলের আবেদন করলেন তৃণমূলের এক ব্লক সভাপতি নিজেই।
শনিবার পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিকেরা গিয়েছিলেন গড়বেতা ১ ব্লকের বড়মুড়া অঞ্চলের ফুলবেড়িয়ার বনকাটা গ্রামে। ব্লকের তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রত ঘোষের ভাই সত্যব্রত ঘোষের পাকা বাড়ি রয়েছে এই গ্রামেই। আবাস যোজনার তথ্য যাচাইয়ে আসা সরকারি কর্মীদের কাছে গিয়ে নিজের ভাইয়ের নাম বাতিলের আবেদন করেন সেবাব্রত।
সত্যব্রত চাষি। সামান্য কৃষিজমি আছে। সেটাই আয়ের উৎস। তিন ছেলেমেয়ে, স্ত্রী, মাকে নিয়ে থাকেন তিনি। তিনি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি সেবাব্রতের ভাই হলেও সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করেন না। দাদার দলের সমর্থক মাত্র। বছর কয়েক আগে আবাস যোজনার সমীক্ষায় তাঁর নামই উঠেছিল তালিকায়। তখনও তাঁর পাকা বাড়ি ছিল।
এখন সেই তালিকা ধরে ধরে উপভোক্তাদের তথ্য যাচাই চলছে পঞ্চায়েত, ব্লক, জেলা স্তরে। সরকারি কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ছবি তুলছেন। শনিবার সেই কাজেই বনকাটা গ্রামে গিয়েছিলেন শ্যামনগর পঞ্চায়েতের সরকারি আধিকারিকেরা। সেই সময় সত্যব্রত বাড়িতে ছিলেন না। আধিকারিকেরা তালিকায় নাম দেখে তাঁর বাড়ির ছবিও তুলেছিলেন। সেই খবর গড়বেতায় ভাড়া বাড়িতে থাকা দাদা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রতে কাছে পৌঁছলে তিনি সটান চলে যান গ্রামের বাড়িতে। তথ্য যাচাইয়ে আসা সরকারি আধিকারিকদের বলেন, ভাইয়ের পাকা ছাদযুক্ত বাড়ি আছে। তালিকায় থাকলে তা নাম বাদ দিয়ে দিন। রাতে সেবাব্রত বিডিও ও পঞ্চায়েতের উপপ্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও একই আবেদন করেন। রবিবার পদ্ধতি মেনে সত্যব্রত ঘোষের নাম আবাস প্লাসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় বলে জানা গিয়েছে।
সত্যব্রত বলেন, ‘‘আমরা একান্নবর্তী পরিবার। দাদাই (সেবাব্রত) আমাদের অভিভাবক। দাদা যা ভাল বুঝেছেন করেছেন। ঠিকই তো আমার পাকা বাড়ি আছে। আমার পরিবর্তে কোনও গরিব পরিবার এই সুবিধা পেলে ভাল হয়।’’ বিডিও শেখ ওয়াসিম রেজার বক্তব্য, ‘‘প্রকৃত গরিবদের জন্যই এই প্রকল্প। অথচ দেখা যাচ্ছে পাকা বাড়ি থাকা সত্বেও অনেকের নাম আবাস প্লাসের তালিকায় আছে। সব তথ্যই যাচাই করা হচ্ছে। সেখানে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার আর্জি ব্যতিক্রম।’’
উল্লেখ্য, গড়বেতা ১ ব্লকে একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগে প্রশাসনিক তদন্ত চলছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে সন্ধিপুর পঞ্চায়েতে আবাসের তালিকায় নাম না থাকা সত্বেও ৩০ জনের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে তিন কিস্তির টাকা ঢোকানো হয়েছিল ডেটাবেসে কারচুপি করে। তদন্তে প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে সন্ধিপুর পঞ্চায়েতের দুই কর্মী-সহ পঞ্চায়েত সমিতির ডিলিং অফিসার গ্রেফতার হয়ে জেল হেফাজতে আছেন। যাঁদের অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকানো হয়েছিল, তাঁদের কাছ থেকে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে।
সেই তদন্তের মাঝেই তৃণমূল নেতার নিজের ভাইয়ের নাম আবাস প্লাসের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে খোঁচা দিতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সম্পাদক গৌতম কৌড়ি বলেন, ‘‘দুর্নীতি প্রসঙ্গে চাপ বাড়ছে তৃণমূলের উপর। তাই এ সব আইওয়াশ করে দৃষ্টি ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সেবাব্রতর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চান প্রকৃত গরিবরাই পাক আবাস প্লাসের বাড়ি। সেখানে আমার ভাই বলে বাড়তি সুবিধা পাক, সেটা ঠিক নয়। সবাইকে বলব, যাঁদের পাকা বাড়ি আছে, তালিকায় নাম থাকলেও, তাঁরা যেন সেই নাম বাতিল করেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy