(বাঁ দিকে) তৃণমূল নেতা আবুল নাসার। (ডান দিকে) স্ত্রী সুরাইয়া পারভিন। —নিজস্ব চিত্র।
মন্দারমণির হোটেলঘর থেকে তৃণমূল নেতা আবুল নাসারের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়েছে প্রায় ২৪ ঘণ্টা আগে। সেই খবর পাওয়া ইস্তক উপ-প্রধান স্ত্রী দাবি করে আসছেন, স্বামী আত্মহত্যা করতেই পারেন না। খুন করা হয়েছে তাঁকে। শনিবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির আদালত তৃণমূল নেতার রহস্যমৃত্যুতে ধৃত দু’জনের পাঁচ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। ঠিক তখনই উত্তর ২৪ পরগনার আমডাঙার বাড়িতে বসে আর এক ‘সন্দেহভাজন’-এর নাম নিলেন আবুলের স্ত্রী, পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান সুরাইয়া পারভিন। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে তাঁর দাবি, গোটা ঘটনার ‘মূলচক্রী’ আদতে ধৃত যুবতীর মামা। যাঁকে ‘মামু’ বলে সম্বোধন করেন যুবতী। সুরাইয়ের এ-ও দাবি, তাঁর স্বামী বিশ্বস্ত। তাঁদের দাম্পত্য জীবনে কোনও অশান্তি ছিল না। বৈষয়িক এবং ব্যবসায়িক কারণে খুন হয়েছেন তাঁর স্বামী। মহিলার অভিযোগ প্রসঙ্গে পুলিশ জানিয়েছে, ‘মামু’ তথা উত্তর ২৪ পরগনার ওই তৃণমূল নেতার খোঁজ চলছে।
শুক্রবার এক বন্ধু, এক বান্ধবী এবং আর এক মহিলাকে নিয়ে পূর্ব মেদিনীপুরের সমুদ্রসৈকতের হোটেলে ওঠেন ৩৪ বছরের আবুল। হোটেল এবং পুলিশ সূত্রে দাবি, দুই মহিলাকে তাঁদের স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তৃণমূল নেতা এবং তাঁর ব্যবসায়ী বন্ধু। ওই মহিলা অবশ্য রাতেই মন্দারমণি ছেড়েছিলেন। শনিবার সকালে হোটেলের ঘর থেকে তৃণমূল নেতার দেহ উদ্ধারের পর তাঁর বন্ধু এবং বান্ধবীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামী ‘খুন’ হয়েছেন রাতেই। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘রাত (শুক্রবার) ১১টার দিকে আবুল আমাকে ভিডিয়ো কল করেছিল। তখনও সব ঠিকঠাক ছিল। ও জানিয়েছিল, সকালে মামু (ধৃত যুবতীর মামা) টাকা দেবে, ওটা নিয়েই বাড়ি চলে আসবে।’’ সুরাইয়া অবশ্য জানতেন না যে স্বামী বান্ধবীদের সঙ্গে মন্দারমণি বেড়াতে যাচ্ছেন। কখন জানলেন যে স্বামী মন্দারমণিতে রয়েছেন? মহিলা বলেন, ‘‘অন্য একটি সূত্র মারফত আমি জানতে পারি, আবুল মেয়েটিকে নিয়ে মন্দারমণি গিয়েছে। তখন আমি ওকে (আবুল) বার কয়েক ফোন করি। কিন্তু আমার ফোন ‘রিসিভ’ করেনি। পরে আমার ভাই ওকে ফোন করে। তার পর আবুল আমাকে ফোন করেছিল। জানিয়েছিল ব্যবসার কাজে গিয়েছে।’’
মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রী জানিয়েছে, স্বামী জমির কারবারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্য দিকে, ধৃত দু’জনও জমি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। সুরাইয়া বলেন, ‘‘ও (আবুল) বলেছিল, মামুর কাছ থেকে ১০ লক্ষ টাকা আনতে যাচ্ছে কোথাও। সঙ্গে আমাদের এলাকার একটি ছেলেকে (ধৃত যুবক) নিয়ে যাচ্ছে। তবে মন্দারমণি যাচ্ছে, এটা আমি জানতাম না।’’ তিনি এ-ও জানান, তৃণমূল নেতা স্বামী বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার বিকেলে। কাজ মিটিয়ে শনিবার বাড়ি ফিরবেন বলেছিলেন। সুরাইয়া বলেন, ‘‘পরে জানতে পারি, সোদপুরের মেয়েটি (ধৃত যুবতী) আমার স্বামীর সঙ্গে মন্দারমণিতে আছে। ও আমাদের পরিচিত। ওর মামা তৃণমূলের এক নেতা। তাঁর কাছ থেকেই টাকা নিতে গিয়েছিল স্বামী।’’
কখন স্বামীর মৃত্যুসংবাদ পান? সুরাইয়ার জবাব, ‘‘রাত ২টো ২০ মিনিটে। আমাকে ফোন করে ওই ছেলেটি (ধৃত যুবক) বলল, ও আত্মহত্যা করেছে।’’ বস্তুত, ওই মহিলা দাবি করেছেন, সকালে দেহ উদ্ধার হলেও তাঁর স্বামীর মৃত্যু হয় রাতেই। তাঁর কথায়, ‘‘ফোনে ছেলেটি বলেছিল, ও পাশের ঘরে ছিল। ওই মেয়েটি ওর ঘরে ছুটে গিয়ে বলেছে, ‘দেখো, তোমার দাদা কী করছে!’ তখন ও ছুটে গিয়ে দেখে সিলিং ফ্যান থেকে আবুলের দেহ ঝুলছে। আর হোটেলঘরের দরজা ভেঙে তাঁর স্বামীর দেহ উদ্ধার হয় বলে যে খবর রটানো হয়েছে, তার কোনও ভিত্তি নেই।’’
কিন্তু কী কারণে তাঁর স্বামীকে খুন করা হতে পারে? তৃণমূলের উপপ্রধানের দাবি, তাঁর স্বামী, ধৃত যুবতী এবং তাঁর ‘মামু’, এই তিন জন মিলে বছর দুই আগে সোদপুরে প্রায় ১২ কোটি টাকা মূল্যে একটি জমি কিনেছিলেন। এখন ওই জমির বাজারমূল্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা। ওই জমি আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলেন ‘মামু’। ভাগ্নিকে নিয়ে আবুলকে খুনের পরিকল্পনা করেন তিনি। সুরাইয়া বলেন, ‘‘আবুল কোনও মতে ওই জমিটি ছাড়তে চায়নি। তাই ভাগ্নিকে ব্যবহার করে মন্দারমণি নিয়ে গিয়ে আবুলকে খুন করিয়েছে মামু। আমাদের বক্তব্য, অভিযোগ সবটাই পুলিশকে জানিয়েছি। তবে পুলিশ দেহউদ্ধারের ব্যাপারে যে দাবি করছে, সেটা সত্যি নয়। কোথাও যেন মনে হচ্ছে, কিছু একটা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।’’
মৃত তৃণমূল নেতার স্ত্রীর অভিযোগ প্রসঙ্গে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) শুভেন্দ্র কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘মামু বলে যার নামে অভিযোগ জানানো হয়েছে, তিনি এখানকার বাসিন্দা নন। আমরা অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত তাঁকে ধরা সম্ভব হবে।’’
অন্য দিকে, কাঁথি আদালতে সরকারি আইনজীবী ইকবাল হোসেন দাবি করেছেন, আবুল খুনে ধৃত দু’জনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেন, ‘‘যখনই কোথাও বেড়াতে যেতেন, ওই মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন আবুল। হোটেলে একই ঘরে থাকতেন। সম্প্রতি ওই নিয়ে স্ত্রীর সঙ্গে ঝামেলা চলছিল ওই তৃণমূল নেতার। আবুল বিবাহিত। ওই মহিলা বিয়ে করেননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy