Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে উল্টে গেল বাস, মৃত্যু ৬ জনের

ট্যাঙ্কারকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল হাওড়াগামী যাত্রী বোঝাই বাস। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে তমলুকের নিমতৌড়ির কাছে উত্তর নারিকেলদা গ্রামে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনায় বলি হলেন ৬জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম গৌতম মাইতি (২৮), তরুণ মাইতি (৪৫ ), অনুপম গুড়িয়া (৩৩), শিবশঙ্কর গুছাইত (৩৫) ও শেখ তাজউদ্দিন (৪৪)।

নয়ানজুলিতে পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি। নারিকেলদায় পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

নয়ানজুলিতে পড়ে রয়েছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটি। নারিকেলদায় পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

ট্যাঙ্কারকে পাশ কাটাতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গেল হাওড়াগামী যাত্রী বোঝাই বাস। মঙ্গলবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে তমলুকের নিমতৌড়ির কাছে উত্তর নারিকেলদা গ্রামে হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কে। দুর্ঘটনায় বলি হলেন ৬জন। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতদের নাম গৌতম মাইতি (২৮), তরুণ মাইতি (৪৫ ), অনুপম গুড়িয়া (৩৩), শিবশঙ্কর গুছাইত (৩৫) ও শেখ তাজউদ্দিন (৪৪)। তাঁরা যথাক্রমে চণ্ডীপুর থানার ঘোলা, কুলবাড়ি, কাঁথির কুমারপুর, মারিশদা ও রামনগরের বাসিন্দা। তবে একজনের পরিচয় জানতে পারা যায়নি। গুরুতর জখম অবস্থায় প্রাথমিকভাবে ৪৯ জনকে ভর্তি করা হয় তমলুক জেলা হাসপাতালে। এর মধ্যে ১১জনের আঘাত গুরুতর হওয়ায় তাঁদের কলকাতায় পাঠানো হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার জন্যই এমন দুর্ঘটনা। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাঙ্কারটিকে পাশ কাটাতে গিয়েই বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নয়ানজুলিতে উল্টে পড়ে। তার জেরেই এমন দুর্ঘটনা।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঁথির মীরগোদা থেকে রামনগর, চণ্ডীপুর, নন্দীগ্রাম এলাকার যাত্রী নিয়ে বেসরকারি বাসটি হাওড়ার দিকে যাচ্ছিল। বাসের ভিতর ও ছাদ মিলিয়ে প্রায় ১০০ জন যাত্রী ছিলেন। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাসটি হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে যাওয়া একটি তেল ট্যাঙ্কারকে পাশ কাটাতে যায়। সেই সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি সড়কের ফুটপাথ ছাড়িয়ে সড়কের ধারে থাকা বেশ কিছু গাছ ভেঙে উল্টে যায় পাশের নয়ানজুলিতে। ঘটনাস্থলেই মারা যান চারজন। স্থানীয় বাসিন্দারা এসে জখমদের উদ্ধার করে তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠায়। পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে এসে জাতীয় সড়ক কতৃপক্ষের ক্রেন দিয়ে বাসটিকে তুলে চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে জখমদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আরও তিনজনের মৃত্যু হয়।


দুর্ঘটনার জেকে অবরুদ্ধ জাতীয় সড়ক। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের পাশে নয়ানজুলিতে বাসটি দুমড়ে মুচড়ে পড়ে রয়েছে। বাসের ভিতরে আসেন রক্তের ছিট । বাসের কাছে যাত্রীদের জুতো, বিভিন্ন জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দা বলরাম প্রধানের কথায়, ‘‘আমি রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি, বাসট়া ছিটকে গেল নয়ানজুলিতে। কী ভয়ঙ্কর শব্দ।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, জাতীয় সড়কের বেহাল অবস্থার জন্যই বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় বাসিন্দা অমল কায়েত, উত্তম মাইতিদের অভিযোগ, ‘‘দুর্ঘটনাস্থলের ১০০ মিটার দূরে মাস ছয়েক আগে জাতীয় সড়কের উপর গর্ত তৈরি হয়েছে। ওই গর্তে গাড়ির চাকা পড়লেই ছিটকে যাচ্ছে। গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে বারবার দুর্ঘটনা ঘটছে।’’ এ দিন বাসের চালকের পিছনের দিকে আসনে বসেছিলেন কাঁথির জশাবিশা গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার বারিক। হাসপাতালে বিছনায় শুয়ে সুকুমারবাবু বলেন, ‘‘বাসটা খুব জোরে যাচ্ছিল। নিমতৌড়ি বাজারে ঢোকার আগে ট্যাঙ্কারকে পাশ কাটাতে গিয়ে বাসটা উল্টে গেল। আর কিছু মনে নেই।’’

এ দিন আহত ওই বাসযাত্রীদের তমলুক জেলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আনা হলেও সেই সময় হাসপাতালে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন জখমরা। আহতদের অনেককেই হাসপাতালের ভিতরে বারান্দার বিছানায় রাখা হয়। কাটা অংশ সেলাই করতে ভরসা ছিল টর্চের আলো। জেনারেটর চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও কোনও সুফল মেলেনি। আধঘণ্টা পরে বিদ্যুৎ আসার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। জেলা হাসপাতালের সুপার গোপাল দাসের অবশ্য বক্তব্য, ‘‘হাসপাতালের জেনারেটর দিয়ে কেবলমাত্র এমারজেন্সি বিভাগ চালু রাখা হয়। কিন্তু এ দিন ওই জেনারেটর দিয়ে হাসপাতালের সব বিভাগ চালু রাখতে গিয়ে তা বিকল হয়ে যায়। তবে আহত রোগীদের আসার পরে অন্যান্য বিভাগের পরিবর্তে দ্রুত ওই জেনারেটর দিয়ে আলো-পাখার ব্যবস্থা করা হয়।’’

হাসপাতালে আসা আহতদের চিকিৎসার জন্য কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়। জেলা হাসপাতাল চত্বরে বেআইনিভাবে পার্কিং’এর অভিযোগে বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সকে হাসপাতাল চত্বরে ঢুকতে না দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স চালকরা এ দিন কলকাতায় রোগী নিয়ে যেতে অস্বীকার করে। ফলে গুরুতর আহত রোগীদের কলকাতায় নিয়ে যেতে কিছুটা সমস্যা হয় । যদিও এরপরেই তৃণমূল নেতাদের হস্তক্ষেপে শহরের অন্যান্য জায়গা থেকে অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে এসে রোগীদের কলকাতায় পাঠানো হয়।

এ দিন ঘটনার পর থেকেই বাস চালক পলাতক। পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তকে ধরতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। এ দিন এই দুর্ঘটনার জেরে ঘণ্টা দেড়েক জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এ দিন তমলুক জেলা হাসপাতালে জখমদের দেখতে আসেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই জখমদের দেখতে এসেছি। আহতদের চিকিৎসার জন্য সবরকম সাহায্য করা হবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE