প্রতীকী ছবি।
আমপান-ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতির অভিযোগ আসায় ইতিমধ্যে হুগলির এক পঞ্চায়েত প্রধানকে দল থেকেই বহিষ্কার করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘিতে এক তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সকলের সামনে কান ধরে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছেন। এমন দশা যদি তাঁরও হয়! এই ভয়ে আমপান-ত্রাণে পাওয়া টাকা রাজ্য সরকারের ঘরে ফিরিয়ে দিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের এক পঞ্চায়েত প্রধান।
গড়বেতা-৩ ব্লকের (চন্দ্রকোনা রোড) অন্তর্গত নলবনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজয় সাউয়ের এই কাণ্ডে জেলায় শোরগোল পড়েছে। অজয়ের স্ত্রী ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। বাঁশডিহার বাসিন্দা অজয়ের দাবি, ঘূর্ণিঝড়ে তাঁর বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই তাঁর স্ত্রী ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলেন। পেয়েও ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরালেন কেন? দল থেকে বহিষ্কারের ভয়ে? অজয়ের কথায়, ‘‘দলের কয়েকজন বলল, টাকাটা নেওয়া ঠিক হবে না। বিতর্ক হতে পারে। তাই ক্ষতিপূরণ হিসেবে পাওয়া টাকাটা ফিরিয়ে দিয়েছি।’’ অজয়ের স্ত্রী শুক্লা তৃণমূলের কর্মী। ওই প্রধান যে ক্ষতিপূরণের পাওয়া টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন, তা মানছেন গড়বেতা ৩-এর বিডিও অভিজিৎ চৌধুরী। বিডিও বলেন, ‘‘ওই প্রধানের স্ত্রী ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়ে ফিরিয়েও দিয়েছেন।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, সরকারের নির্দিষ্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ওই টাকা জমা হয়েছে।
আমপানে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পিছু ক্ষতিপূরণ হিসেবে ২০ হাজার টাকা করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার। ওই প্রধান-পত্নী ২০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। স্থানীয় সূত্রে খবর, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে বাড়ির ক্ষতির খাতে ২ জন ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন। এরমধ্যে একজন ছিলেন ওই প্রধানের স্ত্রী। ওই এলাকায় আরও অনেকের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ক্ষতির নিরিখে বিচার করলে প্রধানের বাড়ির ক্ষতি তুলনায় কম।
বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষতিপূরণের টাকা বিলিতে দলবাজি হচ্ছে। অভিযোগ তাহলে মিথ্যা নয়? তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘সামান্য কিছু সমস্যা হয়েছে বলে শুনছি। ত্রাণে বঞ্চনা মানা হবে না। নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা টাকা ফেরত করাচ্ছি। ফেরত না দিলে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়ে দেব!’’ দলের নির্দেশেই কি ওই প্রধানের স্ত্রী টাকা ফিরিয়েছেন? অজিতের জবাব, ‘‘ওই ঘটনার কথা শুনে দল প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে।’’ তৃণমূল সূত্রের খবর, কেন তাঁর স্ত্রী ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছিলেন, প্রধানকে তার কারণ দর্শানোর কথাও বলা হয়েছে। প্রধানের অবশ্য দাবি, ‘‘আমার আর কোনও রোজগার নেই। সামান্য জমি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে সত্যিই আমার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’’
ত্রাণ বিলিতে দুর্নীতি রেয়াত করা হবে না, বারবার তা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবারও নবান্নে সর্বদলীয় বৈঠকে সে কথা ফের জানিয়েছেন তিনি। তাঁকে বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘‘আপমানের কিছু কিছু সমস্যা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসেছে। কেউ কেউ বঞ্চিত হয়েছেন। কোনও মানুষের বঞ্চনা আমাদের সরকার সহ্য করবে না। দলবাজি প্রশ্রয় দেওয়ার জায়গা নেই।’’ আমপান পরবর্তী সময়ে ত্রাণ বিলি ঘিরে বিস্তর অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির জন্য মুখ্যসচিব, জেলাশাসক ও বিডিও-দের দায়িত্বও দিয়েছে রাজ্য সরকার। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা টাঙিয়ে দিতে বলা হয়েছে ব্লক দফতরে। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের দাবি, ‘‘পশ্চিম মেদিনীপুরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্ষতিপূরণের অপব্যবহার করা হয়েছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষতিপূরণ পাননি।’’ শমিতের কটাক্ষ, ‘‘হয়তো বঞ্চিতদের ক্ষোভে পড়ার আশঙ্কায় ওই প্রধান টাকা ফিরিয়েছেন!’’ বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে এসে ত্রাণে দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধেছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ। দিলীপ বলেন, ‘‘ত্রাণ বিলি নিয়ে সমস্যা চলছে। সমস্যার সমাধান সরকারকেই করতে হবে। তৃণমূল পার্টিকে করতে হবে। তৃণমূলের লোকেরাই লুট করছে।’’ তাঁর মন্তব্য, ‘‘প্রশাসনের কর্মীরাও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা শোনেন না। তাঁর দলের কর্মীরাও তাঁর কথা শোনেন না। এটা মুখ্যমন্ত্রীও ভাল করে জানেন!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy