প্রশান্ত কিশোর। ফাইল চিত্র
এক ছাত্র নেতা দাবি তুললেন, অবিলম্বে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ভোট হোক। এক যুব নেতার দাবি, যত দ্রুত সম্ভব স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষা হোক। এক কৃষক নেতার নালিশ, সরকারিভাবে ধান কেনা খুব কম হচ্ছে। চাষিরা সমস্যায় পড়েছেন। ধান কেনার পরিমাণ বাড়ানো হোক।
কোনও বিরোধী সংগঠনের স্বর নয়, রবিবার সন্ধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাস্তরে তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে টিম-পিকের প্রথম বৈঠকেই শোনা গেল এমন সব বিরোধী-স্বর। দলেরই এক সূত্রের খবর, তৃণমূল নেতাদের সব কথাই মন দিয়ে শুনেছেন ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার প্রতিনিধিরা। বেশ কিছু মতামত নথিভুক্তও করেছেন তাঁরা।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক টিম-পিকে’র এক সদস্যের কথায়, ‘‘নেতাদের কথা শুনতেই আমরা এই বৈঠক করেছি। বৈঠকের রিপোর্ট শীঘ্রই পিকে-র কাছে পৌঁছবে।’’ বৈঠক জুড়েই না কি ছিল বিরোধী-স্বর? ওই সদস্যের জবাব, ‘‘যা পর্যবেক্ষণ করার আমরা করেছি।’’ বৈঠক নিয়ে বিশদে কিছু বলতে নারাজ তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি। অজিত বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে এক বৈঠক হয়েছে। সেখানে পিকে-র টিমের কর্মীরা ছিলেন। বৈঠকে গঠনমূলক আলোচনাই হয়েছে।’’
সূত্রের খবর, রবিবার সন্ধ্যায় মেদিনীপুরে জেলা পরিষদের এক বারান্দায় চেয়ার পেতে বৈঠক হয়েছে। জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির সঙ্গে বৈঠকে ছিলেন টিম-পিকে’র প্রতিনিধিরা। দলের সাংসদ, বিধায়ক, শীর্ষ জেলা নেতাদের পাশাপাশি ওই কোর কমিটিতে রয়েছেন তৃণমূলের সমস্ত শাখা সংগঠনের জেলা সভাপতিরা। অন্য দিকে, টিম-পিকের তরফে ইতিমধ্যে বিধানসভা ভিত্তিক কো-অর্ডিনেটর নিয়োগ করা হয়েছে। তাঁরাও বৈঠকে ছিলেন। সূত্রের খবর, বৈঠকে টিম-পিকের লোকেরা বলেছেন কম, শুনছেন বেশি। গোড়াতেই তাঁরা জানিয়ে দেন, খোলামেলা আলোচনার জন্যই এই বৈঠক। ভুল না সামনে এলে সংশোধনের সুযোগ থাকে না। তাই ভুলগুলি জানাও জরুরি।
গত লোকসভা নির্বাচনে কেন তৃণমূলের ভোট কমেছে, কোথায় দলের নেতাদের গাফিলতি ছিল, সে সব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। টিম-পিকে’র তরফে বোঝানো হয়েছে, তফসিলি জাতি-উপজাতির ভোট একত্রিত করতে কখনওই তৃণমূলের তরফে বিশেষ উদ্যোগ দেখা যায়নি। সেটা জরুরি। সার্বিক আলোচনার পরে নেতাদের মতামত শুনতে চায় টিম-পিকে। তখনই শাসকদলের বিভিন্ন সংগঠনের নেতাদের বিরোধী স্বর সামনে আসে। এক টিএমসিপি নেতা জানিয়ে দেন, ছাত্র ভোট চাই। নির্বাচিত ছাত্র সংসদই চাই। না হলে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা দলের থেকে বিমুখ হতে পারেন। বস্তুত, নির্বাচিত ছাত্র সংসদ তুলে দিয়ে অরাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিলের বন্দোবস্ত করেছে তৃণমূল সরকারই। তবে ওই ছাত্র নেতার বক্তব্য, সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা নির্বাচিত ছাত্র সংসই চান। এরপর এক যুব নেতা স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) পরীক্ষা দ্রুত করানোর আর্জি জানান। তাঁর বক্তব্য, এসএসসি না হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগ কমছে। এতে যুবক- যুবতীরা দলের থেকে মুখ ফেরাতে পারেন।
সূত্রের খবর, বৈঠকে অমূল্য মাইতির সঙ্গে দুলাল মণ্ডলের বচসাও বাধে। অমূল্য জেলার খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ। দুলাল তৃণমূলের কৃষক-খেতমজুর সংগঠনের জেলা সভাপতি। বৈঠকে দুলালের দাবি, সহায়কমূল্যে ধান কেনায় গতি নেই। সরকারিভাবে ধান কেনার পরিমাণও তুলনামূলকভাবে কম। গরিব চাষিরা টাকার প্রয়োজনে ফড়েদের কাছে কম দামে ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। চাষের খরচের টাকা তুলতে না পেরে কিংবা মহাজনের দেনা শোধ করতে না পেরে অনেকে সমস্যায় পড়েছেন। দুলালের বক্তব্যের বিরোধিতায় সরব হন অমূল্য। তাঁর দাবি, ধান কেনা ভালভাবেই চলছে।
কেন বচসা? পরে দুলাল বলেন, ‘‘যা বলার বৈঠকে বলেছি। এখন কিছু বলব না।’’ অমূল্যেরও বক্তব্য, ‘‘বৈঠকের ব্যাপারে কিছু বলব না।’’ বৈঠকে যে সব দাবি উঠেছে, সে সব দাবি তো বিরোধীরা তোলে? জেলা তৃণমূলের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘গণতন্ত্রে বিরোধী স্বর থাকবেই। তৃণমূল গণতান্ত্রিক।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy