তমলুকের বার্ন ইউনিট। নিজস্ব চিত্র
শিল্পাঞ্চল হলদিয়া— সেখানে একাধিক শিল্পসংস্থা অতিদাহ্য রাসায়নিক নিয়ে কাজ করে। যে কোনও সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। অথচ, মহকুমা হাসপাতালে অগ্নিদগ্ধ রোগীর চিকিৎসার জন্য তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই!
কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাথমিক ভাবে হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালেই নিয়ে আসা হয় রোগীকে। রাখা হয় জেনারেল বেডে। পোড়া ক্ষত খুব বেশি হলে রোগীকে রাখা হয় একটি কেবিনে। তারপর ভরসা রেফার— হয় তমলুক জেলা হাসপাতাল, নয়তো কলকাতা। বার্ন ইউনিটে চিকিৎসার জন্য যে পরিবেশ, পরিকাঠামো প্রয়োজন, তা শিল্পশহরের হাসপাতালে একেবারেই নেই— স্বীকার করে নিয়েছেন সুপার সুমনা দাশগুপ্ত।
হাসপাতাল সুপার বলেন, ‘‘অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসার জন্য যে পরিকাঠামো দরকার তা এখানে নেই।’’ শুধু সরকারি হাসপাতালই নয়! হলদিয়ায় দু’টি শিল্প সংস্থার হাসপাতাল এবং একটি বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে। বার্ন ইউনিট কোথাও নেই।
তা হলে ওই শিল্পসংস্থার শ্রমিক ও কর্মচারীদের চিকিৎসার কী হয়?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক নেতা বলেন, প্রথমে মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বাড়াবাড়ি হলে সোজা কলকাতা। তা ছাড়া শ্রমিকদের ইএসআই কার্ড থাকে। ফলে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করতেও অসুবিধা হয় না।
কিন্তু অতদূরে অগ্নিদগ্ধ রোগীকে নিয়ে যাওয়ার মতো অ্যাম্বুল্যান্সও যে নেই গোটা মহকুমায়! হলদিয়ার এক স্বাস্থ্যকর্মী জানান, হলদিয়া এনার্জি লিমিটেডের একটি মাত্র অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে যেখানে ভেন্টিলেশন দিয়ে রোগীকে নিয়ে যাওয়া যায়।
অগ্নিদগ্ধের জন্য অ্যাম্বুল্যান্স জোগাড় করে তমলুক বা কলকাতা নিয়ে যেতে অনেক দেরি হয়ে যায়। শিল্প শহরে একটি আধুনিক বার্ন ইউনিট খোলার দাবি তুলছেন বাসিন্দারা। হলদিয়ার মহকুমাশাসক ও মহকুমা হাসপাতাল রোগী কল্যাণ একজিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান পূর্ণেন্দু নস্করও বলছেন, ‘‘শিল্প সংস্থাগুলির সঙ্গে কথা বলে একটি কর্পোরেট হাসপাতাল তৈরির বিষয়েই কথা হয়েছিল। সে বিষয়ে আবার কথা বলা দরকার।’’
সময় পেরিয়ে গিয়েও তেমন উন্নতি হয়নি জেলা হাসপাতালের। ২০০২ সালে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা গঠনের পরই তমলুক হাসপাতাল জেলা হাসপাতালের মর্যাদা পেয়েছিল। ২০০৭ থেকে সেখানে রয়েছে ১৫ শয্যার বার্ন ইউনিট। গোটা জেলার চাপ সামলাতে হলেও গত ১০ বছরে একটি শয্যাও বাড়েনি সেখানে। শুধু পূর্ব মেদিনীপুর নয়, সবং, পিংলা, দাসপুরের মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন ব্লক থেকেও রোগী আসেন এখানে। সারা বছর আগুনে বা অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া বহু রোগী আসেন। চাপ বাড়ে কালীপুজোর সময়। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এ সময় প্রতিবারই অগ্নিদগ্ধ রোগীর সংখ্যা বা়ড়ে জেলা হাসপাতালে।
হাসপাতাল সুপার গোপাল দাস অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের ‘বার্ন’ ইউনিট যথেষ্ট উন্নতমানের। শয্যা সংখ্যার চেয়ে রোগী সংখ্যা বেশি হলে সার্জারি বিভাগেও অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে।’’ তবে সার্জারি বিভাগে অগ্নিদগ্ধদের চিকিৎসা করতে যে অসুবিধা হয় তা মনে করছেন চিকিৎসকেরাই।
স্বাস্থ্য কর্মীদের সংগঠন ‘ওয়েস্টবেঙ্গল স্টেট হেলথ এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন’-এর জেলা সম্পাদক সত্যরঞ্জন সাহু বলেন, ‘‘ইতিমধ্যে জেলা ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের কাছে দাবি জানিয়েছি, বার্ন ইউনিটের শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে।’’
গত এক বছরে এগরা, পাঁশকুড়া, নন্দীগ্রামে তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। এগরাতে চারটি, পাঁশকুড়াতে দু’টি শয্যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বার্ন ইউনিট। তবে নন্দীগ্রামে তেমন কোনও ব্যবস্থাই নেই। পাঁশকুড়াতে আবার নেই শল্যচিকিৎসক। ফলে ২০ শতাংশ পর্যন্ত অগ্নিদগ্ধদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা হয় সেখানে। বাকিদের রেফার।
কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ‘বার্ন ইউনিট’ রয়েছে। তবে শয্যা সংখ্যা মাত্র ছয়। হাসপাতাল সুপার সব্যসাচী চক্রবর্তী বলেন, “এই হাসপাতালে তিন জন শল্য চিকিৎসক রয়েছেন। তাই চিকিৎসার সমস্যা হয় না। এ ছাড়া দগ্ধ রোগীদের ড্রেসিং-এর জন্যও ভাল বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। সাধারণত একসঙ্গে বেশি রোগী আসেন না। তাই এখনও কোনও অসুবিধা হয়নি।’’
(তথ্য: আনন্দ মণ্ডল, আরিফ ইকবাল খান, শান্তনু বেরা)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy