নিহত কৃষ্ণপ্রসাদ জানা।
কলেজের মধ্যে এক ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। শুক্রবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে। মৃত ছাত্র কৃষ্ণপ্রসাদ জানা ওই কলেজেরই তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। স্মরণকালে কোনও কলেজে এই ভাবে কোনও ছাত্রকে পিটিয়ে খুনের নজির এ রাজ্যে নেই।
পশ্চিম মেদিনীপুরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করতে এ দিন মেদিনীপুরে এসেছিলেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। বৈঠক শেষে সবংয়ের বন্যা পরিস্থিতি দেখতে যাবেন বলে ঠিক করেন মন্ত্রী। সবংয়ের ওই কলেজের ছাত্র সংসদে ক্ষমতায় রয়েছে সিপি। তাই মন্ত্রী এলে সিপি-র ছেলেরাও যাতে তাঁকে অভ্যর্থনা জানাতে যায়, সে জন্য টিএমসিপি চাপ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। সিপি রাজি হয়নি। তা নিয়েই দু’পক্ষের বচসা বাধে। তার জেরেই সিপি-র সদস্য কৃষ্ণপ্রসাদের উপর হামলা হয় বলে অভিযোগ। বাঁশ হাতে টিএমসিপি-র ছেলেরা পিছন থেকে তাঁর উপর চড়াও হয়। শুরু হয় এলোপাথাড়ি মার। একা কৃষ্ণপ্রসাদ রুখে দাঁড়াতে পারেননি। মাথায় গুরুতর চোট লাগে তাঁর। রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যান ওই ছাত্র।
ছাত্র পরিষদের অভিযোগ, এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে টিএমসিপি। ছাত্র পরিষদের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি মহম্মদ সইফুল বলেন, “ভয়ঙ্কর ঘটনা। টিএমসিপি-এর ছেলেরাই আমাদের সদস্যকে পিটিয়ে খুন করেছে।” যদিও টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি রমাপ্রসাদ গিরির বক্তব্য, ‘‘গোলমাল একটা হয়েছিল। তবে মৃত্যুটা নেহাতই দুর্ঘটনা।’’
এ দিন সবংয়ের সজনীকান্ত মহাবিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছিল। অন্য দিন গেটে পরিচয়পত্র দেখে ছাত্রছাত্রীদের কলেজে ঢুকতে দেওয়া হয়। তবে এ দিন ভর্তি প্রক্রিয়া চলায় কলেজে নতুন ছাত্রছাত্রী ও তাঁদের অভিভাবকদের ভিড় ছিল। ফলে, বহিরাগতরাও কেউ কেউ কলেজ চত্বরে ঢুকেছিল।
কলেজের সামনে চলছে ছাত্র পরিষদের বিক্ষোভ। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ।
ছাত্র পরিষদ (সিপি)-এর অভিযোগ, এ দিন সকালে খবর আসে, সবংয়ের বিভিন্ন জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে আসছেন রাজ্যের জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। এ দিন কলেজের টিএমসিপি সদস্য শেখ মুন্না-সহ জনাকয়েক সমর্থক বিভিন্ন ক্লাসে গিয়ে পড়ুয়াদের কাছে মন্ত্রীর কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার কথা বলছিলেন। সেই সময় ছাত্র পরিষদের কলেজ শাখার সভাপতি সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায় টিএমসিপিকে ক্যাম্পেন করতে নিষেধ করে। তাই নিয়েই দু’পক্ষের বচসা বাধে। নালিশ জানাতে দুই সংগঠনের নেতাই কলেজের অধ্যক্ষ কানাইলাল পড়িয়ার কাছে যান।
কানাইলালবাবু বলেন, ‘‘দুপুরে মুন্না ও সৌমেন আমরা সামনেই বচসায় জড়ায়। পরে মুন্না ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। সৌমেন অভিযোগ করে, ছাত্র সংসদের ঘরে কে বা কারা তালা লাগিয়ে দিয়েছে। কলেজের কর্মীদের সেখানে পাঠাই। তবে তাঁরা গিয়ে ছাত্র সংসদের ঘর খোলাই দেখেন। এরপরই ছাত্র সংসদের ঘরের সামনে দু’পক্ষের গোলমাল বাধে। কিছুক্ষণ পরে শুনতে পাই, কৃষ্ণপ্রসাদের ছেলের আঘাত লেগেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা।’’
কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, কৃষ্ণপ্রসাদ ২০১২ সালে একলেজের বি এ পাস কোর্সে ভর্তি হয়। তাঁর বাবা চাষবাস করেন। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে কৃষ্ণপ্রসাদই ছিলেন ছোট। ২০১৩ ও ২০১৪ পরপর দু’বছর তিনি পরীক্ষায় অকৃতকার্য় হয়েছিলেন। কৃষ্ণপ্রসাদ ছাত্র পরিষদের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ দিন কলেজের নতুন লাইব্রেরির সামনে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়েছিলেন ওই ছাত্র। সিপি নেতা সৌমেন বলেন, ‘‘বেলা একটা নাগাদ শেখ মুন্না, অসীম মাইঅতি, দেবপ্রসাদ মিত্র, শুভজিৎ দাস-সহ জনা দশেক ছাত্র অতর্কিতে আমাদের ছাত্রছাত্রীদের উপর হামলা করে তাঁরা। লাঠি দিয়ে এলোপাথারি মারতে থাকে। কৃষ্ণপ্রসাদ পালাতে যান। তখন টিএমসিপি কর্মীরা তাঁকে পিছন দিক থেকে লাঠি দিয়ে মাথায় মারে। সবং গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা জানান তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’ এ দিন ঘটনাস্থলে যান সবংয়ের কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘‘ছাত্র রাজনীতিতে এই ঘটনা লজ্জাজনক। এত বছর কলেজে আমাদের ইউনিয়ন থাকলেও এমন ঘটনা ঘটেনি।’’
ঘটনার পরেই কলেজের সামনে বিক্ষোভে বসে সিপি সমর্থকরা। দশগ্রাম-তেমাথানি রাস্তায় দেড় ঘণ্টা ধরে অবরোধ চলে। অধ্যক্ষের ঘরেও তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। এই ঘটনায় টিএমসিপি নেতা শেখ মুন্না-সহ পাঁচজনকে টিএমসিপি সমর্থককে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে কলেজের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর...
দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা, কঠোর ব্যবস্থা হবে: মুখ্যমন্ত্রী
ভয়ঙ্কর ঘটনা, স্তম্ভিত রাজনৈতিক মহল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy