বিজয় খাঁড়া। —ফাইল চিত্র।
দিনটি তাঁদের নামে। তবে এই দিনে নিজেকে ঘরবন্দি রাখেন কোলাঘাটের বিজয় খাঁড়া। কারণ, সহানুভূতির বদলে সম্মান চান তিনি।
কোলাঘাটের কোলা গ্রামের বছর পঁয়ত্রিশের বিজয় পোলিও আক্রান্ত। মাত্র আড়াই বছর বয়সে এই রোগে তিনি দুই পা এবং বাঁ’হাতের শক্তি হারিয়েছেন। এখন তিনি ৯০ শতাংশ প্রতিবন্ধী। আজ, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এই দিনের আলাদা কোনও গুরুত্ব নেই এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন যুবকের কাছে। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কোনও চাকরি না মেলায় প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি যান না। নিজের যোগ্যতার আপাতত তিনি এলাকায় চিত্র শিল্পী হিসাবে পরিচিত। রং-তুলির জোরেই জনপ্রিয় হওয়া এবং উপার্জন করার স্বপ্ন দেখেন তিনি।
২০০৯ সালে বিজয়ের বাবা মারা যান। সংসার চালাতে বিজয়ের মা মাছের ব্যবসা শুরু করেন। এখনও নিয়মিত কোলাঘাটে ফুটপাতে বসে মাছ বিক্রি করেন তিনি। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে বাগনান কলেজে ভর্তি হন বিজয়। তবে যাতায়াতের অসুবিধায় এক বছর পর কলেজের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। পড়াশোনা ছাড়ার পর শিল্প চর্চা শুরু করেন। ২০২০ সালে বিজয়ের বোন তাঁকে একটি স্মার্টফোন কিনে দেন। ইউটিউব দেখে ছবি আঁকা শুরু করেন বিজয়। সামাজমাধ্যমে যোগাযোগ হয় এক চিত্রশিল্পী যুগল সরকারের সঙ্গে। বিজয়ের কাজ দেখে মুগ্ধ হন যুগল সরকার। তিনি বিজয়কে অনলাইনে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন। এর পরে খুব অল্প সময়ে চিত্র শিল্পী হিসেবে বিজয় পরিচিতি পান।
কলকাতার একটি প্রদর্শনীতে বিজয়ের আঁকা ছবি প্রশংসা করেন গুণীজনেরা। সেখানে বিজয়ের আঁকা ছবি বিক্রিও হয়। এরপর ছবি আঁকাকেই পেশা করে ফেলেন বিজয়। অনলাইন এবং অফলাইনে ছবি আঁকার প্রশিক্ষণ দেন। বিজয়ের ছবির মূল বিষয়বস্তু হল নারী ও শিশু। আর জি করে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় মানসিকভাবে আঘাত পান। প্রতিবাদ জানাতে নারী শক্তির ওপর একটি ছবি আঁকেন।
বিজয় নিজে হাতে খেতে পারেন না। মা খাইয়ে দেন। তার পরেও থেমে নেই বিজয়ের তুলি। জল রঙ বিজয়ের প্রথম পছন্দ। এ ছাড়াও অ্যাক্রেলিক, চারকোল, কালার পেন্সিল দিয়েও ছবি আঁকেন। একাধিক চাকরির পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরি মেলেনি। তাই রঙ তুলিকে আরও বেশি করে আঁকড়ে ধরতে চান বিজয়। প্রতিবন্ধী দিবসের অনুষ্ঠানে আগে যেতেন। কিন্তু এখন আর যান না। তাঁর কথায়, ‘‘অনুষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে আমাদের প্রতি করুণা দেখানো হয়। নিজের যোগ্যতায় বাঁচতে চাই। কারও করুণায় নয়।’’
অনেকেই বিজয়কে দিয়ে ছবি আঁকান। বিজয় চান আরও মানুষ আসুক তাঁর কাছে। বিজয়ের শিক্ষাগুরু চিত্র শিল্পী যুগল সরকার বলছেন, ‘‘বিজয় এত বড় প্রতিবন্ধকতা নিয়েও যেভাবে ছবি আঁকছেন, ওর জায়গায় আমি থাকলে পারতাম না। ও একজন প্রতিভাবান চিত্র শিল্পী। অনেকের কাছেই বিজয় অনুপ্রেরণা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy