ফাইল চিত্র।
কাঁথি থানায় ঢুকেছিলেন শুক্রবার সকাল ১০টায়। বেরোলেন রাত ৮টা ১০ মিনিটে। পথবাতি দুর্নীতি মামলায় ১০ ঘণ্টা ১০ মিনিট ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পর সৌমেন্দু অধিকারী বললেন, ‘‘আমায় বসিয়ে রাখা হয়েছিল। আর কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রাখা হলেও আমার সমস্যা ছিল না।’’ রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ভাই তথা কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমেন্দুকে এত ক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ ঘিরে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে। কলকাতা হাই কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে সৌমেন্দুকে টানা ১০ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের মধ্যে রাজনৈতিক অভিসন্ধি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। উল্টো দিকে, শাসকদল তৃণমূলের বক্তব্য, এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়। এর মধ্যে রাজনীতি নেই।
শুক্রবার সকালে কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে কাঁথি থানায় যান সৌমেন্দু। একাধিক মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে খবর মেলে। তার মধ্যে রয়েছে সারদার নথি উধাও সংক্রান্ত অভিযোগ, পুরসভার ত্রিপল-দুর্নীতি, শ্মশান-দুর্নীতি সংক্রান্ত মামলা। তবে সৌমেন্দুর আইনজীবী অনির্বাণ চক্রবর্তীর দাবি, শুধুমাত্র পথবাতি মামলায় সৌমেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পরে রাতে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে থানার বাইরে বেরিয়ে এসে সৌমেন্দু বলেন, ‘‘সমস্ত কেস ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে। বাকিটা জনতা জনার্দন বুঝে নেবেন। আমাকে ডেকেছেন। বসিয়ে রেখেছেন। আরও যদি কয়েক ঘন্টা বসিয়ে রাখা হত, আমার কোনও সমস্যা ছিল না।’’
সৌমেন্দুকে জিজ্ঞাসাবাদের সময়সীমা দু’ঘণ্টা অতিক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বিষয়টি নিয়ে সরব হন তাঁর আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ মেনে সৌমেন্দু থানায় হাজির হয়েছেন। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ওঁকে সকাল ১০টার সময় আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি আগেই পৌঁছে যান। অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) আশ্বস্ত করেছিলেন, সৌমেন্দুকে দু’ঘণ্টার বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। কিন্তু দু’ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে। এখনও দেখছি ছাড়ছে না।’’
বিজেপির দাবি, সৌমেন্দুকে টানা জিজ্ঞাসাবাদ করে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়েছে। সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগই শাসকদল প্রমাণ করতে পারবে না বলে দাবি করেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর তথা বিজেপি নেতা সজল ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘এটা রাজনৈতিক জিজ্ঞাসাবাদ। এই মামলার কোনও ভিত্তি নেই। যে সময়ে দুর্নীতির কথা হচ্ছে, ওঁরা (সৌমেন্দু ও শুভেন্দু অধিকারী) তৃণমূলেই ছিলেন। এখন দেখছি সিআইডি খুব তৎপর হয়ে পড়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘মমতা কয়েক দিন আগে বলেছিলেন, তিনি রাতে ঘুমোতে পারেন না। এর একটা কারণ তো শুভেন্দু অধিকারী। তাই এ ভাবে হেনস্থা! লাভ হবে না। আদালতে কিছুই প্রমাণ করতে পারবে না।’’
পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘এটা সম্পূর্ণ ভাবে প্রশাসনিক বিষয়। কিন্তু বিরোধীরা যখন প্রশ্ন তুলছেন, পাল্টা বলতে হয় যে, ইডি-সিবিআই তদন্ত করলে সেটা রাজনৈতিক হয় না। রাজ্য পুলিশ বা সিআইডি করলে রাজনৈতিক বিষয় হয়। অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন, শুভেন্দু ও সৌমেন্দু অধিকারীরা বিজেপিতে গিয়েছেন বলে এই তদন্ত করা হচ্ছে। তাঁদের বলে রাখি, সারদা নিয়ে ২০১৩ সালে প্রশ্ন করেছিলাম। তখন তৃণমূলে ছিলেন শুভেন্দুরা। তখন ওঁরা পুলিশকে দিয়ে এই বিষয় এড়িয়ে গিয়েছেন।’’
পুরসভার কাছে শ্মশানের জমিতে দোকান তৈরি নিয়ে কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে তৃণমূল। পুরসভার ত্রিপল চুরি-সহ আরও একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয় কাঁথি থানায়। তার বিরুদ্ধেই আদালতের দ্বারস্থ হন বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি সৌমেন্দু। গত ১১ অগস্ট কলকাতা হাই কোর্ট তাঁকে অন্তর্বর্তীকালীন রক্ষাকবচ দেয়। জানানো হয়, গ্রেফতার করা যাবে না তাঁকে। এর মধ্যেও বেশ কয়েক বার কাঁথি থানায় তলব করা হয় সৌমেন্দুকে। আবার তিনি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর হাই কোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার বেঞ্চ রক্ষাকবচ দেয় তাঁকে। আদালত জানায়, সৌমেন্দুকে গ্রেফতার করা যাবে না। তবে সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্তে তাঁকে সহযোগিতা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy