প্রতীকী চিত্র।
বাজি ফাটানো দেখতে জগদ্ধাত্রী পুজোর মণ্ডপের সামনে তখন ঠাসা ভিড়। সামনে দাঁড়িয়ে কচিকাঁচারা, পিছনে বয়স্করা। কিন্তু প্রথমে ফানুসে আগুন দিতেই বাধল বিপত্তি। ফানুস উড়ে পড়ল আতসবাজির স্তূপে। তার পর বিস্ফোরণের শব্দ। আর কালো ধোঁয়া।
রবিবার রাতে পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে খারুই এলাকার জামিত্যা গ্রামের এই ঘটনায় আগুনে ঝলসে গুরুতর জখম হন দুই শিশু-সহ ৬ জন। অল্পবিস্তর আহত আরও ১০। গুরুতর জখমদের তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
কালীপুজো, দীপাবলির মরসুমে এ বার দেদার ফানুস উড়েছে আকাশে। সস্তার ফানুস বিকিয়েছে রমরমিয়ে। অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ফানুস তৈরিতে যথাযথ সর়ঞ্জাম ব্যবহার করা হয় না। আর হাওয়ার দাপটেও ফানুস থেকে আগুন ধরে যাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। সেই আশঙ্কাই সত্যি হয়েছে জামিত্যা গ্রামে।
জামিত্যায় স্থানীয় দেশপ্রাণ ক্লাবের উদ্যোগে জগদ্ধাত্রী পুজো হয়। মণ্ডপের পাশেই রবিবার রাতে আতসবাজির প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। কোলাঘাটের পয়াগ গ্রাম থেকে এক কারিগরকে এনে বাজি ফাটানোর ব্যবস্থা করেছিলেন উদ্যোক্তারা। আর তা দেখতে আশপাশের গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ জড়ো হন। বিভিন্ন ধরনের বাজি দিয়ে সাজানো গাছ রাখা হয়েছিল মণ্ডপের সামনে। আর পাশে এক জায়গায় ডাঁই করে রাখা হয়েছিল আতসবাজি। বাজি প্রদর্শনীর শুরুতেই ফানুসে আগুন ধরিয়ে উড়িয়ে দেন বাজির কারিগর। কিন্তু সেই ফানুস উড়ে এসে পড়ে বাজির স্তূপে। তারপরই ঘটে বিস্ফোরণ।
আগুনে হাত-পা-পেটের একাংশ ঝলসে গিয়েছে ১২ বছরের দীপিকা বালার। তার বাবা দিলীপ বালা বলেন, ‘‘দেখার সুবিধার জন্যই ভিড়ের সামনে ছিল বাচ্চারা। আমার মেয়েও সেখানে ছিল। বাজি বিস্ফোরণের পরে ওকে কোনও রকমে উদ্ধার করে আনি।’’ চোখ ও বুকের একাংশ ঝলসে গিয়েছে অরুণ জানার। তাঁর চার বছরের ছেলের পা-ও জখম গিয়েছে। হুড়িনান গ্রামের বাসিন্দা বছর পঁয়ত্রিশের অরুণ বলেন, ‘‘আনন্দের মুহূর্তে যে এমন বিপদ হয়ে যাবে বুঝিনি।’’
গত বছরই জেলার ভগবানপুরের শিলাখালি গ্রামে কালীপুজোর মণ্ডপের কাছে এ ভাবেই প্রদর্শনীর সময় বাজির স্তূপে আগুন লেগে দু’জনের মৃত্যু হয়েছিল। ফের এমন ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের নজরদারি ও পুজো উদ্যোক্তাদের সচেতনতা নিয়ে। পুলিশ জানিয়েছে, জামিত্যার ঘটনায় তদন্ত শুরু হয়েছে। আর উদ্যোক্তারা মানছেন, মণ্ডপের সামনে এ ভাবে বাজির প্রদর্শনী করা ঠিক হয়নি। দেশপ্রাণ ক্লাবের সভাপতি তপন মাজি বলেন, ‘‘ আরও সতর্ক থাকা দরকার ছিল। তবে আমরা কোনও শব্দবাজি ব্যবহার করিনি। উড়ন্ত ফানুস বাজিতে পড়েই দুর্ঘটনা ঘটেছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy