সামনে রামনবমী। তার আয়োজনও শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। শুভেন্দু অধিকারী এবং দিলীপ ঘোষ শিবিরের ‘দ্বন্দ্ব’ মেদিনীপুরেও রয়েছে বলে কানাঘুষো চলে। সেই ‘দ্বন্দ্বে’ রাশ টানতে মাঠে নামল ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ (আরএসএস)। সম্প্রতি মেদিনীপুরে রামনবমী পালনের প্রস্তুতি বৈঠকে সঙ্ঘের কার্যকর্তারা ছিলেন। বিজেপির দুই শিবিরের বাছাই করা নেতারাও ছিলেন। কী ভাবে রামনবমী পালিত হবে, তা নিয়ে বিশদে আলোচনা হয়েছে।
মেদিনীপুরে ‘শ্রীরামনবমী সমারোহ সমিতি’র উদ্যোগে বড় কর্মসূচি হয়। গেরুয়া শিবিরের অনেকেই মানেন, এই সমিতি ‘রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ’ (আরএসএস) প্রভাবিত। ‘হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই, হিন্দুর কোনও বিভেদ নেই’- এ বার এই স্লোগান সামনে রাখছে সমিতি। তাদের উদ্যোগে এ বার কী ভাবে রামনবমী পালিত হবে, কার্যকর্তাদের কার কী ভূমিকা এবং দায়িত্ব থাকবে, ওই বৈঠকে এ সব নিয়েই আলোচনা হয়েছে বলে খবর। সুষ্ঠু ভাবে কর্মসূচি রূপায়ণে কয়েকটি উপ-কমিটিও গড়া হয়েছে বিজেপির ‘যুযুধান’ নেতাদের রেখেই।
প্রস্তুতি বৈঠকের প্রসঙ্গ এড়িয়ে আরএসএসের কার্যকর্তা সমীরণ মজুমদার বলেন, ‘‘প্রতি বছরের মতো এ বারও রামনবমী পালন হবে। মেদিনীপুর-সহ সর্বত্র পালন হবে।’’ আয়োজক সমিতির তরফে আশীর্বাদ ভৌমিকের বক্তব্য, ‘‘এ বারও সমারোহ সমিতির ব্যবস্থাপনায় তিন দিনের কার্যক্রম রয়েছে। প্রস্তুতি সারা হচ্ছে।’’ আশীর্বাদ বিজেপির যুবমোর্চার মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি।
সমিতির এই কর্মসূচির এ বার ১৭তম বর্ষ। তিন দিনের কী কর্মসূচি রয়েছে? সমিতি সূত্রে খবর, ৫ এপ্রিল দুপুরে বর্ণাঢ্য বাইক র্যালি শুরু হবে অরবিন্দনগরের টিভি টাওয়ার মাঠ থেকে। শহরের বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করবে মিছিল। ৬-৭ এপ্রিল, দু’দিন ধরে ‘শ্রীরামচন্দ্রের পূজনে’র আয়োজন করা হচ্ছে। কেরানিতলায় এই পুজোয় প্রায় ২০ ফুটের রামলালার মূর্তি থাকবে।
বছর ঘুরলে বিধানসভা ভোট। এই আবহে অন্য মাত্রা পাচ্ছে এ বারের রামনবমী। গেরুয়া শিবিরের অনেকের ধারণা, ধুমধাম করে উৎসব হলে, নির্বাচনে তা বিজেপিকে ‘ডিভিডেন্ট’ দেবে! তাই দলের দ্বন্দ্ব সামলাতে সতর্ক সঙ্ঘও। সম্প্রতি রাজ্য বিজেপির ৪৩টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ২৫টিতে সভাপতিদের নাম ঘোষণা হয়েছে। যে ১৮টি সাংগঠনিক জেলায় সভাপতির নাম ঘোষণা হয়নি, তার মধ্যে রয়েছে মেদিনীপুরও। দলের অন্দরে গুঞ্জন, এ ক্ষেত্রেও দুই শিবিরের মতানৈক্য সামনে এসেছে। তাই এ ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব।
রামনবমী পালনে গেরুয়া শিবিরের তোড়জোড়কে বিঁধে তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক দীনেন রায়ের মন্তব্য, ‘‘রাম কারও একার নয়। রাম আমাদের সবার। ধর্ম নিয়ে ওরা রাজনীতি করে। আমরা সব ধর্মকেই সমান শ্রদ্ধা করি।’’ জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস শোনাচ্ছেন, ‘‘রামনবমী কেবল উৎসব নয়। এটি হিন্দু সমাজের আত্মবিশ্বাস ও সংহতির প্রকাশ।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)