Advertisement
০৫ অক্টোবর ২০২৪

নিজেরা জিতলেও দলের ফলে হতাশ দুই কাণ্ডারী

ব্যক্তিগত সাফল্যের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে দলের ফলাফলে। নিজেরা সাফল্য পেয়েছেন কিন্তু দলের অনেক জেতা আসনই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার খড়্গপুরে গণনার কাজ এগিয়েছে ততই উৎকন্ঠা গ্রাস করেছে তাঁদের। এক জন তৃণমূলের কাণ্ডারী, অন্য জন কংগ্রেসের বিদায়ী পুরপ্রধান। কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে মঙ্গলবার সারাদিন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের গণনা কেন্দ্রের ভিতরেই বসেছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৫ ০০:০২
Share: Save:

ব্যক্তিগত সাফল্যের আনন্দ ম্লান হয়ে গিয়েছে দলের ফলাফলে। নিজেরা সাফল্য পেয়েছেন কিন্তু দলের অনেক জেতা আসনই হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। মঙ্গলবার খড়্গপুরে গণনার কাজ এগিয়েছে ততই উৎকন্ঠা গ্রাস করেছে তাঁদের। এক জন তৃণমূলের কাণ্ডারী, অন্য জন কংগ্রেসের বিদায়ী পুরপ্রধান।

কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে মঙ্গলবার সারাদিন কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের গণনা কেন্দ্রের ভিতরেই বসেছিলেন। এই নির্বাচনে তাঁর ওপরেই নির্ভর করে জয়ের স্বপ্ন দেখেছিল কংগ্রেস। কিন্তু সব শেষে দলের সাফল্য ১১টি আসনে। একইভাবে ১১টি আসন এসেছে তৃণমূলের হাতেও। তাদের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী দলীয় কার্যালয়ে বসেই ফলাফলের খোঁজ নিয়েছেন। বুধবারও তাঁরা ফল নিয়েই আলোচনায় মগ্ন ছিলেন দিনভর।

গত বছর ৩৫টি আসন বিশিষ্ট এই রেলশহরের পুরসভায় মাত্র ১২টি আসন নিজেদের দখলে রেখেছিল কংগ্রেস। সেখানে তৃণমূল ১৫টি আসন নিয়ে কংগ্রেসকে হটিয়ে বোর্ড গঠন করেছিল। তবে স্থায়ী পুরবোর্ড হয়নি। সাড়ে তিনবছরের মাথায় তৃণমূলকে অনাস্থা ভোটাভুটিতে ক্ষমতাচ্যুত করে কংগ্রেস। তাই এ বার দলের স্থায়ী বোর্ড গড়তে বিগত বছরের ত্রুটি বিচ্যুতিকে পর্যালোচনা করে প্রচারে নেমেছিল কংগ্রেস। আর সেই প্রচারের মুখ করা হয়েছিল বর্ষীয়ান কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞানসিংহ সোহন পাল বা রেলশহরের চাচাকে। কিন্তু দলের প্রার্থীদের এগিয়ে নিয়ে গিয়ে পুরবোর্ড গড়ার দায়িত্ব পড়েছিল বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের হাতেই। নিজের ওয়ার্ডে কম সময় দিয়ে অন্যের ওয়ার্ডে প্রচারেও গিয়েছিলেন রবিশঙ্কর পাণ্ডে।

কিন্তু তাতেও ফল ভাল হয়নি। এ বছর দু’টি আসনে নতুন করে জয়ী হলেও গত বছরের জেতা তিনটি আসন হাতছাড়া হয়েছে কংগ্রেসের। আর ওই তিনটি আসনের দু’টিতেই থাবা বসিয়েছে বিজেপি। নতুন করে জয়ী হওয়া দু’টি আসনের মধ্যে ১৩ নম্বরের বিদায়ী বাম কাউন্সিলর আগেই কংগ্রেসে এসেছিলেন। তাই জয় নিশ্চিতই ছিল। সেই সঙ্গে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে জয়ী হওয়ার পিছনেও তৃণমূলের ভোট কাটাকাটির খেলাই দায়ী বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। তাই দলের এমন খারাপ পরিস্থিতিতে কীভাবে বোর্ড গড়বেন এখন সেই কৌশল খুঁজছেন রবিশঙ্কর পাণ্ডে। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কিছুটা চিন্তা ছিল। তবে আমাদের ফল খারাপ হয়নি। রাজ্যে কংগ্রেসের যা অবস্থা তার তুলনায় তো ভালই। তবে এখন এই ফল নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে। চেষ্টা করছি বোর্ড গঠন করার।’’

অন্য দিকে, এই শহরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল দীর্ঘদিনের। শহর তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস চৌধুরী ও প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা তৃণমূলের জেলা নেতা জহরলাল পালের সম্পর্কের অবনতিই এর আসল কারণ বলে দলীয় সূত্রে খবর। এ বারও পুরভোটের প্রার্থী তালিকা নিয়ে গোলমাল দেখা দিয়েছে দুই যুযুধান গোষ্ঠীর মধ্যে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত জেলা নেতাদের হস্তক্ষেপে আসন বণ্টনে সহমত হলেও দলের আসন না পেয়ে অনেকেই নির্দল হয়েছিলেন। কিন্তু তৃণমূলের শহর সভাপতি হিসেবে পুর-নির্বাচনের বৈতরণী পার করার গুরু দায়িত্ব ছিল দেবাশিসবাবুর হাতে। সেই সঙ্গে নিজের ওয়ার্ডে দলের আসন অক্ষুন্ন রাখাও ছিল প্রার্থী দেবাশিস চৌধুরী মস্ত চ্যালেঞ্জ। তিনি নিজে অবশ্য সম্মানের সঙ্গে পাশ করেছেন।

কিন্তু অনেক প্রার্থীই দলের জেতা ৬টি আসন ধরে রাখতে পারেননি। রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই ভোট হারানোর পিছনে যে শুধু নির্দল কাঁটাই রয়েছে, তাই নয় সমান ভাবে দায়ী এলাকার অনুন্নয়নও। দলের ফলাফলের দায় নিয়ে তাই বিমর্ষ দেবাশিসবাবু। অন্য দিকে, জহরলাল পালও যেন সে দায় অস্বীকার করতে চান না। তবে দেবাশিস চৌধুরী বলেন, ‘‘হতাশ কেন হব? সারা রাজ্যে দলের এত সাফল্য তো আমাদের কাছে আনন্দের। তবে এটা ঠিক শহরে আমাদের ভাল ফল না হওয়ায় খারাপ লাগছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE