সুক্তি সরকারের চেম্বারে রিনা ঘোষ (ডান দিকে)। পাশে ভাই শেখর ঘোষ।
আড়াই বছরের অনিশ্চয়তার পর দেবীপক্ষে সুদিন ফিরল পঞ্চাশোর্ধ্ব রিনা ঘোষের। ঝাড়গ্রাম জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে অবিবাহিতা রিনা পেলেন মাসিক পারিবারিক (ফ্যামিলি) পেনশন চালু হল। পেয়েছেন আড়াই বছরের এরিয়ার-ও। শুক্রবার রিনার প্রি-লিটিগেশন মামলার নিষ্পত্তি করেছেন জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সচিব তথা বিচারক সুক্তি সরকার।
ঝাড়গ্রাম শহরের বাছুরডোবার বাসিন্দা রিনার বাবা মৃণালকান্তি ঘোষ ছিলেন সাবেক প্রাণিপালন দফতরের খরা প্রবণ এলাকার ‘ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট’। ১৯৯১ সালে অবসরের পর তাঁর পেনশন চালু হয়। ২০০৪-এর নভেম্বরে প্রয়াত হন মৃণালকান্তি। নিয়মানুযায়ী তাঁর স্ত্রী পারুল ঘোষের নামে পারিবারিক পেনশন চালু হয়। সব ঠিকঠাকই চলছিল। তবে ২০২২ সালের ৮ এপ্রিল প্রয়াত হন পারুল। মায়ের মৃত্যুতে অথৈ জলে পড়েন রিনা। পারিবারিক পেনশন বন্ধ হয়ে যায়। ইতিমধ্যে মেদিনীপুর ভেঙে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর ভেঙে হয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলা। দুই জেলার প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে ঘুরেও কোনও সুরাহা না হওয়ায় সংসারে তীব্র অনটনে বিপর্যস্ত হন রিনা। ভাইদেরও তেমন উপার্জন নেই। রিনার শরীরে বাসা বাঁধে অসুখও।
অবশেষে ২০২২ সালের ৬ ডিসেম্বর জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন রিনা। ঝাড়গ্রাম ব্লক প্রাণিসম্পদ বিকাশ আধিকারিককে (বিএলডিও) তলব করেন বিচারক। জেলার প্রাণিসম্পদবিকাশ ও পরিষদের উপ অধিকর্তাকেও শুনানিতে ডাকা হয়। কিন্তু দফতরে মৃণালকান্তির ‘সার্ভিস বুক’ মেলেনি। রিনার কাছেও তার কপি ছিল না। তবে পেনশন পেমেন্ট অর্ডারের প্রতিলিপি ছিল। তার সূত্র ধরে প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর এবং এজি বেঙ্গলকে উপযুক্ত পদক্ষেপের জন্য নোটিস পাঠান বিচারক। এরপরই মৃণালকান্তির পেনশন সংক্রান্ত সর্বশেষ নথি ঝাড়গ্রাম ট্রেজারি থেকে ঝাড়গ্রামের বিএলডিও-কে সরবরাহ করা হয়।
প্রয়োজনীয় বিভাগীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মৃণালকান্তির পারিবারিক পেনশন প্রাপক তালিকায় তাঁর অবিবাহিতা মেয়ে রিনার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত মাসে রিনার অ্যাকাউন্টে আড়াই বছরের এরিয়ার বাবদ ২,৭৪,৯৩৬ টাকা ঢুকেছে। প্রতিপদে মাসিক পেনশনও (১০,১৯০ টাকা) চালু হল। এরপরই এ দিন প্রি-লিটিগেশন মামলাটির নিষ্পত্তি করেন বিচারক। বিচারক সুক্তি বলছেন, ‘‘উপ-অধিকর্তা ঝাড়গ্রাম প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতর, বিএলডিও দফতর, এজি বেঙ্গল এবং ঝাড়গ্রাম ট্রেজারি এই চারটি দফতরের হস্তক্ষেপে ও সহযোগিতায় ওই মহিলার পারিবারিক পেনশন চালু হয়েছে। বকেয়া টাকাও (এরিয়ার) তিনি পেয়ে গিয়েছেন।’’
এ দিন রিনা চোখের জল মুছে বলেন, ‘‘আড়াই বছরে আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। তেমন কোনও রোজগার ছিল না। চরম দুর্দশায় দিন কাটিয়েছি। পারিবারিক পেনশন চালু হওয়ায় জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy