মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছেন হাসপাতালের অস্থায়ী ঠিকা কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
টাকার বিনিময়ে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নিয়ে টালমাটাল রাজ্য সরকার। এ নিয়ে হাই কোর্টের কাছে ভর্ৎসনাও শুনতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। তদন্তে নেমে কোটি কোটি টাকা উদ্ধারও করেছে ইডি। এ তো গেল রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের প্রসঙ্গ। ‘কাটমানি’ বিতর্কে এ বার নাম জুড়ল ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেরও। অভিযোগ, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অস্থায়ী ঠিকাকর্মীদের কাউকে ৫০ হাজার, আবার ৬০ হাজার টাকা কাটমানি দিতে হয়েছে ঠিকাদার সংস্থাকে। আবার টাকার বিনিময়ে নিয়োগের পাঁচ-ছ’মাস বেতন পাচ্ছেন না অস্থায়ী কর্মীরা। সামনেই মকরসংক্রান্তি। উৎসবের আগে হাতে টাকা নেই ওঁদের। টাকা না পেয়ে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ৪১ জন অস্থায়ী কর্মী বিক্ষোভ দেখালেন সুপার অফিসে।
অস্থায়ী ঠিকা কর্মী বন্দনা ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ মাস বেতন পাইনি। অধিকাংশজনই টাকা দিয়ে কাজে ঢুকেছে। কেউ ৫০ হাজার, আবার কেউ ৭০ হাজার টাকা দিয়েছে। ঠিকাদার সংস্থার মালিক সুভাষ দাস টাকা নিয়েছেন। উনি স্থায়ী কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। বছর বছর ১০০০ টাকা করে বাড়ার কথাও বলেছিলেন। কিছুই হয়নি।’’ বন্দনার মতো মিতালি মাহাতো ৬০ হাজার টাকা, কাজল মাহাতো ৩০ হাজার টাকা দিয়ে কাজে ঢুকেছিলেন। মিতালি, কাজলদের কথায়, ‘‘বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বিভিন্ন রকম টাকা নিয়েছে। তারপরও গত পাঁচ থেকে ছ’মাস ধরে টাকা পাচ্ছি না। আমাদের কথা শুনবে কে?’’ যে জঙ্গলমহলের প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নানা স্বপ্ন, সেই মানুষরাই এ ভাবে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন— উঠছে এমন অভিযোগই।
সোমবার সিপিআইএয়র শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি সংগঠনের উদ্যোগে হাসপাতালের সুপার গৌতমেশ্বর মজুমদারের অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি শুরু হয়। সংগঠনের জেলা সম্পাদক গুরুপদ মণ্ডল-সহ দুই সদস্য বিকাশ ষড়ঙ্গী ও স্বপন বিশুই ছিলেন। হাসপাতালের ৪১ জন কর্মী এ দিন বিক্ষোভ দেখান। এই ৪১ অস্থায়ী ঠিকাকর্মী হাসপাতালের পুরনো ভবন, নার্সিং স্কুল, সিসিইউ, এসএনসিইউতে কাজ করেন। কর্মীরা জানাচ্ছেন, দীর্ঘদিন ধরেই হাতে হাতে টাকা দিতেন ওই এজেন্সির ঠিকাদার। কিন্তু জুলাই মাস থেকে অ্যাকাউন্টে টাকা দেওয়া শুরু হয়। তারপরই বেতন বন্ধ হয়ে যায়।
এআইটিইউসি সংগঠনের জেলা সম্পাদক গুরুপদ মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্যে সমস্ত জায়গায় দুর্নীতি হচ্ছে। তাঁর ছোঁয়া থেকে অস্থায়ী ঠিকাকর্মীর নিয়োগও বাদ যাচ্ছে না। মকর উৎসবের আগে কর্মীরা টাকা পাচ্ছে না। ১২ তারিখের মধ্যে টাকা দেওয়ার আশ্বাস মিলেছে। না হলে ফের আন্দোলন হবে।’’ এ দিন বিকেলে হাসপাতালে আসেন মহকুমাশাসক বাবুলাল মাহাতো। সুপার ও অস্থায়ী কর্মচারিদের চার সদস্যের সঙ্গে আলোচনায় বসেন তিনি। এরপর ১২ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি মিললে বিক্ষোভ উঠে যায়। মহকুমাশাসক কর্মীদের লিখিত অভিযোগ জানানোর নির্দেশ দেন। ঝাড়গ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ডেপুটি সুপার শুভ্রদীপ মাহাতো বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমরা সরাসরি ঠিকা শ্রমিকদের বেতন দিই না। ঠিকাদারই তা দেয়।’’ তবে টাকা নিয়ে কাজ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ঠিকাদার সংস্থার মালিক সুভাষ দাস। সুভাষ দাস বলেন, ‘‘বাজে কথার আমি উত্তর দেব না। কাগজ কলম কথা বলবে।’’ বেতন না পাওয়ার ব্যাপারে সুভাষ বলেন, ‘‘ওরা নিয়মিত কাজ করে না। ওদের সমস্যার জন্য বেতন হয়নি।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy