কলকাতায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করে গেলেন রেলশহরের পদত্যাগী পুরপ্রধান প্রদীপ। নিজস্ব চিত্র
অভিমান শেষে আলিঙ্গন।
খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে পদত্যাগ করতে বলেছিলেন জেলা নেতৃত্ব। জানিয়েছিলেন, এ নির্দেশ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দলের নির্দেশ মানার কথা জানিয়েও প্রদীপ স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁকে পুরপ্রধান পদে বেছেছিলেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং। বিস্তর টানাপড়েনের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পদত্যাগ করেছেন প্রদীপ। শুক্রবারই কলকাতায় গিয়ে অভিষেকের সঙ্গে দেখা করলেন পদত্যাগী পুরপ্রধান। সে ছবি সমাজমাধ্যমে দিয়ে প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন প্রদীপ অনুগামীরা। প্রদীপ বলেন, ‘‘আমাকে আমাদের সকলের প্রিয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকেছিলেন। কলকাতায় আমার সঙ্গে ওঁর দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। উনি জানতেন না আমার সঙ্গে এই চক্রান্ত হয়েছে। আমি ওঁকে বিস্তারিত জানিয়েছি। উনি আমাকে সংগঠন সামলাতে বলেছেন। সঙ্গে সরাসরি ওঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেছেন। এমনকি ‘তুমি তো আমার লোক’ বলে আলিঙ্গন করেছেন। এর থেকে বড় প্রাপ্তির কিছু নেই।’’
প্রদীপের পদত্যাগ পর্ব ছিল সদ্য সমাপ্ত ফুটবল বিশ্বকাপের ফাইনালের মতোই আকর্ষণীয়। ফাইনালের মতো এখানে পট পরিবর্তন হয়েছে ঘন ঘন। এখন ‘খেলা’ শেষ। তবে কী ভাবে শেষ হল ‘খেলা’? প্রশ্ন তুলছে অংশগ্রহণে ডাক না পাওয়া ‘খেলোয়াড়’রা। নিয়মের মারপ্যাঁচে স্পষ্ট জবাব দিতে পারছে না রেফারিও। তবে ধোঁয়াশা ভরা মাঠে জয়ী দলের ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর কাছে সেই জবাব খুঁজছে বাইরে থাকা ‘খেলোয়াড়’ থেকে ‘দর্শক’রা!
কোন আইন মেনে পুরপ্রধানের পদত্যাগ স্বীকৃতি পেল সেই জবাব এখনও অধরা থেকে গিয়েছে। জবাব দিতে পারেনি কার্যত রেফারির ভূমিকায় থাকা প্রশাসনও। শুধুমাত্র পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের জমা দেওয়া পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নগরোন্নয়ন দফতরে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক। ঘটনায় পুরপ্রধানের পদত্যাগ বৈধ প্রক্রিয়ায় হয়েছে কি না, তা নিয়ে ধন্দের অবকাশ রয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। এখনও পর্যন্ত পুরপ্রধানের দায়িত্বভার নিয়ম মেনে উপ-পুরপ্রধানের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টি নিয়ে বোর্ডে থাকা একাধিক কাউন্সিলর এখনও অন্ধকারে। কাউন্সিলরদের অনেকের প্রশ্ন, প্রদীপের পুরপ্রধানের পদ ইস্তফা সম্পর্কে কেন তাঁদের অবগত করা হল না? সেই সঙ্গে যদি পুরপ্রধান পদত্যাগ করেই থাকেন তবে তাঁর বদলে কে দায়িত্ব পেয়েছেন সেটাও কেন জানানো হয়নি উঠছে সেই প্রশ্নও। সদ্য ইস্তফাপত্র জমা দেওয়া প্রদীপ বলেন, “আমার জানা ছিল না বোর্ড অফ কাউন্সিলরের বৈঠক ডেকে সেখানে ইস্তফাপত্র পেশ করার নিয়ম। মহকুমাশাসক আমাকে সেই নিয়ম জানিয়েছিলেন। তবে আমি মহকুমাশাসকের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিয়েছি। উনি জানিয়েছেন ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়েছে।” যদিও পুরপ্রধানের অনুপস্থিতিতে যাঁর দায়িত্বভার পাওয়ার কথা সেই উপ-পুরপ্রধান তৈমুর আলি খান বলেন, “আমাকে পুরপ্রধানের দায়িত্বভার নেওয়ার কথা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়নি। আমি উপ-পুরপ্রধান হিসাবে পুরসভায় কাজ করছি।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের বিষ্ণু বাহাদুর কামী বলেন, “পুরপ্রধানের পদত্যাগ বিষয়ে পুরসভা বা প্রশাসন কোনও চিঠি দেয়নি।’’ সমালোচনায় সরব বিজেপি কাউন্সিলর অনুশ্রী বেহেরা বলেন, “পুরপ্রধানের পদত্যাগের আগে তো বোর্ডের কাউন্সিলরদের জানানো উচিত ছিল।’’ জেলা শাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘আমি পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসারকে জানিয়ে দিচ্ছি, তিনি যেন পুরবোর্ডের সব কাউন্সিলরকে পুরপ্রধানের পদত্যাগের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন।’’
প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার এসডিও-র অফিসে বোর্ডের কাউন্সিরদের উদ্দেশে একটি চিঠিতে সই করেছেন প্রদীপ। সেই চিঠিতে প্রদীপ নিজের পদত্যাগের কথা জানিয়েছেন বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর। বিষয়টির কোনও আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না মিললেও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রদীপের ওই চিঠিটির প্রতিলিপি পুরসভার এগজিকিউটিভ অফিসার সব কাউন্সিলরকে দেবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy