Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

ঝলসানো-পোড়ায় ভরসা সেই কলকাতা

মাস খানেক আগের কথা। কেশিয়াড়ির অগ্নিদগ্ধ এক মহিলাকে নিয়ে আসা হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। শরীর ঝলসে গিয়েছিল তাঁর। সর্বাঙ্গে পুড়ে যাওয়া দাগ।

মেদিনীপুর মেডক্যালের বার্ন ইউনিট। —নিজস্ব চিত্র।

মেদিনীপুর মেডক্যালের বার্ন ইউনিট। —নিজস্ব চিত্র।

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০১৬ ০০:৫২
Share: Save:

মাস খানেক আগের কথা। কেশিয়াড়ির অগ্নিদগ্ধ এক মহিলাকে নিয়ে আসা হয়েছিল মেদিনীপুর মেডিক্যালে। শরীর ঝলসে গিয়েছিল তাঁর। সর্বাঙ্গে পুড়ে যাওয়া দাগ। যন্ত্রণায় গোঙানোর শক্তিটুকুও ছিল না। কিছুক্ষণের মধ্যেই অগ্নিদগ্ধ ওই মহিলাকে ‘রেফার’ করে দেওয়া হয়েছিল কলকাতার এক হাসপাতালে।

অথচ মেদিনীপুর মেডিক্যালে বার্ন ইউনিট রয়েছে। তবে সেখানে লোকবল কম, পরিকাঠামোও পর্যাপ্ত নয়। বার্ন ইউনিটে প্লাস্টিক সার্জন থাকার কথা, কিন্তু মেদিনীপুরে তা নেই। ফলে, অস্ত্রোপচার করে ‘স্কিন গ্রাফটিং’ হয় না। সমস্যা মানছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। হাসপাতালের এক কর্তার বক্তব্য, “৬০-৭০ শতাংশ পুড়ে গেলে রোগীকে আর এখানে রাখা হয় না। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকি থেকে যায়।” তবে মেদিনীপুর মেডিক্যালের সুপার তন্ময় পাঁজার বক্তব্য, “সব ক্ষেত্রে রেফার করা হয় না। প্রয়োজন থাকলে তবেই রেফার করা হয়।’’

মেদিনীপুর মেডিক্যাল ছাড়া পশ্চিম মেদিনীপুরের আর কোনও হাসপাতালে বার্ন ইউনিট নেই। আগে মেদিনীপুর মেডিক্যালেও ছিল না। সম্প্রতি চালু হয়েছে। নয়াগ্রাম, ঝাড়গ্রাম, ঘাটাল, গোপীবল্লভপুরে গড়ে ওঠা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও নেই বার্ন ইউনিট। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা অবশ্য বলেন, ‘‘ঘাটাল, ঝাড়গ্রামে বার্ন ইউনিট চালু হবে। দ্রুত পরিকাঠামো তৈরির কাজ শেষ করে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

মেদিনীপুর মেডিক্যালের বার্ন ইউনিটে খাতায়-কলমে ১২টি শয্যা রয়েছে। তবে চালু থাকে ১০টি শয্যা। তা ছাড়া যথেষ্ট পরিকাঠামো নেই। জেলার এক স্বাস্থ্য-কর্তাও মানছেন, ‘‘অগ্নিদগ্ধ রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে সবার আগে স্থিতিশীল করা জরুরি। তবে জেলায় সেই সুযোগ কম। অথচ, কালীপুজো-দীপাবলির মরসুমে বাজি-প্রদীপ থেকে অগ্নিকাণ্ড ঘটেই থাকে। পুড়ে যাওয়া, ঝলসে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে আকছার। তবে বাস্তব হল জঙ্গলমহলের এই জেলায় অগ্নিদগ্ধের চিকিৎসার ব্যবস্থাই নেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে। জেলায় মোট ২৯টি ব্লক, ৮টি পুরসভা। আর বার্ন ইউনিট রয়েছে মাত্র একটি হাসপাতালে। জেলায় একের পর এক সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল গড়ে তাহলে লাভটা কী হচ্ছে, সেই প্রশ্ন কিন্তু হচ্ছে। যদিও জেলা এক স্বাস্থ্য-কর্তার যুক্তি, “একটা ইউনিট চালু করে দিলেই তো হল না। নতুন ইউনিট চালু করা মানে অন্তত ৬ জন কর্মী লাগবেই। নার্স নিয়োগ হচ্ছে। তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগ তো হচ্ছে না। উল্টে প্রতি মাসেই একজন-দু’জন করে কর্মী অবসর নিচ্ছেন।’’ ওই স্বাস্থ্যকর্তা আরও মানছেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীদের ভাল ভাবে ড্রেসিং করানোর কথা। কখনও কখনও অভিযোগ পাই, প্রাথমিক ভাবে ব্লকে ড্রেসিংটাই ভাল ভাবে হচ্ছে না।

তাহলে পুড়ে গেলে ভরসা সেই কলকাতাই?

জেলার এক স্বাস্থ্য- কর্তার জবাব, “পুড়ে যাওয়ার মাত্রা বেশি হলে রেফার করা ছাড়া উপায় থাকে না। এমন রোগীদের চিকিৎসা এখানে অসম্ভব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Burn Unit Midnapur medical college
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE