Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বুথে বন্দুক নিশানায় বাম প্রার্থী

এ দিন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মৌসুমী দাসকে বাহারগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনেই মারধরের অভিযোগ ওঠে। মৌসুমীদেবীর এজেন্টদেরও বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়।

হলদিয়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব দেভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে ঢুকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করছেন বন্দরের তৃণমূল নেতা শ্যামল আদক। নিজস্ব চিত্র

হলদিয়ার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ব দেভোগ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি বুথে ঢুকে ভোট নিয়ন্ত্রণ করছেন বন্দরের তৃণমূল নেতা শ্যামল আদক। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৭ ০২:১৯
Share: Save:

ঠিক সিনেমার মতো। রবিবার দুপুর। পাঁশকুড়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের গুমাই প্রাথমিক স্কুলের বুথের তখন মোটামুটি ভিড়। আচমকাই কয়েকটি গাড়ি এসে থামল বুথের বাইরে। অভিযোগ, সেই বহিরাগত যুবকেরা কয়েক মিনিটের মধ্যে বুথের দখল নিয়ে শুরু করল ছাপ্পা দেওয়া। সেখানে হাজির সিপিআই প্রার্থী মমতা সিংহ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেন। কিন্তু বন্দুক উঁচিয়ে তাঁকেই তাক করল ওই যুবকদের একজন।

সে দৃশ্য দেখে ভোটাররা কাঁপছেন। বাক্যি সরছে না ভোটকর্মীদেরও। বুথে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা যখন পৌঁছলেন, ততক্ষণে ‘অপারেশন’ সেরে চম্পট দিয়েছে বহিরাগতরা। শহরের প্রাক্তন উপ-পুরপ্রধান মমতাদেবী বলছিলেন, “ছোটবেলায় ক্যারাটে শিখেছিলাম। তাই বন্দুকেও ভয় পাইনি। তবে খারাপ লাগল পুলিশ সব দেখেও ঠুঁটো হয়ে রইল।”

পুলিশ থেকে নির্বাচন কমিশন, রবিবার পাঁশকুড়ার পুরভোটে সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি কাউকেই। বিরোধী প্রার্থীকে মারধর, বিরোধী এজেন্টদের বুথ থেকে বের করে দেওয়া, অবাধে ছাপ্পা ভোট, বহিরাগতদের এনে অশান্তি করা— দিনভর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। দলের তরফে পাঁশকুড়া পুরভোটের দায়িত্বে থাকা বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তুষার মুখোপাধ্যায়ের নালিশ, “তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা একের পর এক বুথে দাপিয়ে বেড়িয়েছে। পুলিশ তাদের মদত দিয়েছে।” দিনের শেষে অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের তরফে পাঁশকুড়া পুরভোটের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তাঁর বক্তব্য, “বিরোধীরা একটা ওয়ার্ড থেকে ৪-৫ জন সমর্থককেও বের করতে পারেনি। জনসমর্থন নেই বলেই মিথ্যাচার করছে।”

এ দিন ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী মৌসুমী দাসকে বাহারগ্রাম প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনেই মারধরের অভিযোগ ওঠে। মৌসুমীদেবীর এজেন্টদেরও বুথ থেকে বের করে দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে। দুপুরে ১ নম্বর ওয়ার্ডেও বিজেপি কর্মীদের মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকেদের বিরুদ্ধে। বিস্তর অশান্তি হয়েছে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে বহু ভোটারকে ভোট দিতে বাধা দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত সেই তৃণমূল। তিলন্দপুরের বাসিন্দা নীলিমা দাসের কথায়, “ভোট দিতে গিয়েছিলাম। তৃণমূলের লোকেরা বলল, ভোট হয়ে গিয়েছে। এ রকম জীবনে দেখিনি।” ভবানীপুরের বাসিন্দা অর্চনা সিংহেরও বক্তব্য, “আমাকেও ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। বুথ থেকে ফিরে এসেছি।”

বেলা ১১টা নাগাদ ভবানীপুর প্রাথমিক স্কুলের বুথের সামনে গিয়ে দেখা যায়, তৃণমূলকর্মীরা আলোচনায় ব্যস্ত। কতজন ভোটার আর কতগুলো ভোট পড়ে গিয়েছে, আলোচনা চলছে তা নিয়েই। এক কর্মীকে বলতে শোনা যায়, “ভোটারের থেকে যেন বেশি ভোট না পড়ে সেটা দেখতে হবে!” এখানে একটি বুথে ৯৩২ জন ভোটার। বেলা ১১টাতেই ৬০২টি ভোট পড়ে গিয়েছিল।

এই সব পরিসংখ্যান তৃণমূল নেতাদের হাতে চলে এসেছে সন্ধের মধ্যেই। প্রশাসন জানিয়েছে, পাঁশকুড়ায় এ দিন ভোট পড়েছে ৮০ শতাংশের বেশি। সব দেখে-শুনে তৃণমূল শিবির চাঙ্গা।

মন্ত্রী সৌমেনবাবু জোর গলাতেই বলছেন, “যে ভাবে শান্তিতে ভোট হয়েছে তাতে বোর্ড বিরোধীশূন্যই হবে।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE