ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা । প্রতীকী চিত্র।
পকসো মামলায় অভিযুক্তের বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ আনতে আদালতের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা করাচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তই যে ধর্ষক সেটি সুনিশ্চিত করার জন্যই ভ্রূণের ডিএনএ পরীক্ষা জরুরি। বিচারকালে এটি প্রাসঙ্গিক প্রামাণ্য তথ্য হতে পারে।
ঝাড়গ্রাম জেলার এক প্রত্যন্ত গ্রামের ১৩ বছরের এক নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। ভয়ে সে বাবা-মাকে ঘটনার কথা জানায়নি। পরে নাবালিকা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হতেই বিষয়টি জানাজানি হয়। মেয়েটি ও তার পরিবার অবাঞ্ছিত সন্তান চায়নি। তাই পরিবারের লিখিত সম্মতিতে সরকারি হাসপাতালে গর্ভপাত করানো হয় নাবালিকার। ময়নাতদন্তের পর সেই ভ্রূণ ডিএন পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে। অভিযুক্ত যুবক ও নির্যাতিতা নাবালিকার রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করে পাঠানো হবে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য।
গত ২৪ এপ্রিল দিনমজুর পরিবারের ১৩ বছরের ওই নাবালিকাকে ভর্তি করানো হয়েছিল এলাকার হাসপাতালে। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে দেখেন নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা। হাসপাতালের তরফে বিষয়টি স্থানীয় থানাকে জানানো হয়। ওই নাবালিকা সপ্তম শ্রেণির পর স্কুলছুট হয়ে গিয়েছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে নাবালিকাও দিনমজুরির কাজ করতে যেত। পুলিশের প্রাথমিক জেরায় নাবালিকার বাবা-মা জানান, জানুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে তাঁদের মেয়ে এক মহিলার সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করতে ওড়িশার বালেশ্বরে গিয়েছিল। কী ভাবে নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে জানাতে পারেননি অভিভাবকরাও। আতঙ্কিত নাবালিকাও কিছু বলতে চায়নি। চিকিৎসক পরীক্ষা করে জানান, নাবালিকা পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। অর্থাৎ ওড়িশা যাওয়ার আগেই নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এক মহিলা পুলিশ অফিসার হাসপাতালে গিয়ে নাবালিকার সঙ্গে কথা বলেন। নাবালিকা মহিলা পুলিশকে জানায়, ভয়ে সে এতদিন চুপ করেছিল। এরপরই বিস্তারিত ঘটনা পুলিশকে জানায় নাবালিকা। ২৫ এপ্রিল নাবালিকার বাবা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেন। পকসো আইনের ধারায় মামলা রুজু করে তদন্তে নামে পুলিশ।
তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, নাবালিকার বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ নেই। তাই পড়শির বাড়িতে মোবাইল ফোন চার্জ দিতে যেত নাবালিকা। সুযোগ পেয়ে তাকে ধর্ষণ করেছিল পড়শির বাড়িতে ভাড়া থাকা ভিন্ রাজ্যের এক যুবক। কিন্তু ভয়ে পাঁচ মাস কাউকে কিছুই জানায়নি অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকা। গত ২৭ এপ্রিল নাবালিকাকে স্থানীয় হাসপাতাল থেকে ঝাড়গ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেদিনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ডিস্ট্রিক্ট চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির (সিডব্লিউসি) কাছে নাবালিকাকে হাজির করায় পুলিশ। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দেয় নাবালিকা। ওই রাতেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিহারের বেগুসরাইয়ের বাসিন্দা অভিযুক্ত যুবকটি ঝাড়গ্রামের একটি বালি খাদানের শ্রমিক। সে বিবাহিত এবং চার সন্তানের বাবাও। ২৮ এপ্রিল অভিযুক্তকে ঝাড়গ্রাম পকসো আদালতে হাজির করানো হলে চারদিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। পুলিশের দাবি, জেরায় ধর্ষণের কথা স্বীকার করে অভিযুক্ত। পুলিশকে সে জানায়, চিপস, চকোলেট দিয়ে নাবালিকার সঙ্গে ভাব জমায় সে। তারপর ধর্ষণ করেছিল অভিযুক্ত। কাউকে জানালে নাবালিকাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল। এরপর ভয়েই ওড়িশায় দিনমজুরির কাজ করতে চলে গিয়েছিল নাবালিকা। মাস খানেক পর বাড়ি ফিরে আসার পর নাবালিকার শারীরিক সমস্যা শুরু হয়। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন অভিভাবকরা।
হেফাজতের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অভিযুক্ত এখন সংশোধনাগারে রয়েছে। এদিকে নাবালিকার পরিবার অবাঞ্ছিত সন্তানের গর্ভপাত করাতে চান। পরিবারের লিখিত সম্মতি নিয়ে বুধবার হাসপাতালে গর্ভপাত করানো হয়। বৃহস্পতিবার ঝাড়গ্রাম পুলিশ মর্গে ভ্রূণের ময়নাতদন্ত করানো হয়েছে। জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কল্যাণ সরকার বলেন, ‘‘ভ্রূণটির ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কলকাতার সেন্ট্রাল ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠানো হবে। নাবালিকা ও অভিযুক্তের রক্তের নমুনাও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy