অসুস্থ ছেলের পাশে সস্ত্রীক সুখেন্দু। নিজস্ব চিত্র
বেশি সুদের আশায় পিনকনে জীবনের সমস্ত সঞ্চয় রেখেছিলেন। ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারেননি যে আর্থিক সংস্থা প্রতারণা করবে। একমাত্র ছেলে ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। কিন্তু টাকার অভাবে ভাল করে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারেননি সুখেন্দু ঘোড়ই। শনিবার পিনকন আর্থিক প্রতারণা মামলায় সংস্থার কর্ণধার মনোরঞ্জন রায়-সহ আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা শুনিয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালত (তিন নম্বর) তথা অর্থনৈতিক অপরাধের বিশেষ আদালতের বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায়। সংস্থার স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি করে আমানতকারীদের দ্রুত টাকা ফেরাতে ‘ডিরেক্টর অফ ইকনমিক্স অফেন্স’কে নির্দেশও দিয়েছে আদালত। আদালতের রায়ে টাকা ফেরত পেয়ে ছেলের চিকিৎসা করানোর আশায় বুক বাঁধছেন সুখেন্দু।
খেজুরি থানার বীরবন্দর গ্রামে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকেন সুখেন্দু। নিজের জমি নেই। পেশায় দিনমজুর সুখেন্দু পরিচিতদের মুখ থেকে শুনে বেশি সুদ পাওয়ার আশায় পিনকন চিটফান্ডে ২০১১ সালে টাকা জমা রাখেন। প্রথম প্রথম মোটা অঙ্কের সুদ পেয়ে লোভে কয়েক বছর ধরে দফায় দফায় প্রায় ৬ লক্ষ টাকা পিনকনে জমা দিয়েছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে সুখেন্দুর একমাত্র ছেলে পুষ্পেন ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। ২০১৬ পর্যন্ত ছেলের নিয়মিত চিকিৎসা করাতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু তারপর থেকে সুদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেয় পিনকন। লগ্নি করা টাকা চাইতে গিয়ে না পেয়ে মাথায় হাত পড়ে সুখেন্দুর।
বন্ধ হয়ে যায় ছেলের চিকিৎসা। স্থানীয় পাটনা বৈকুণ্ঠ শিক্ষাসদনের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র পুস্পেন এখন চিকিৎসার অভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় শনিবার পিনকন আর্থিক প্রতারণা মামলায় পিনকন কর্তা মনোরঞ্জন রায় সহ আটজনের যাবজ্জীবন সাজা ঘোষণার পাশাপাশি প্রতারিতদের টাকা ফেরত দেওয়ার নির্দেশে ফের ছেলের চিকিৎসা শুরু নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে বীরবন্দরের ঘোড়ই পরিবার।
পিনকন আর্থিক প্রতারণা মামলায় যে ৩৯ জন সাক্ষী দিয়েছিলেন তাঁদের অন্যতম সুখেন্দু। ২০১৭ সাল থেকে মামলার দিনগুলিতে খেজুরি থেকে তমলুক আদালতে ছুটে এসেছেন। শনিবার সকাল ৯টা থেকেই মাথায় ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে ন্যায় বিচারের দাবিতে আদালত চত্বরে বসেছিলেন। রায় শোনার পর আদালত চত্বরে বিচারক ও সরকারি আইনজীবীদের নামে জয়ধ্বনি করতে শোনা যায় তাঁকে।
সুখেন্দুর কথায়, ‘‘বিচারক মৌ চট্টোপাধ্যায় ও দু’জন সরকারি আইনজীবীর আন্তরিক চেষ্টায় আমার মতো প্রতারিত সুবিচার পেলাম। যত তাড়াতাড়ি টাকা ফেরত পাব তত তাড়াতাড়ি ছেলের চিকিৎসা করাতে পারব।’’
আশার কথা শুনিয়েছেন অর্থনৈতিক দুর্নীতি দমন শাখার সরকার পক্ষের বিশেষ আইনজীবী সৌমেন কুমার দত্তও। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শীঘ্রই আমানতকারীদের টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু করব। যাঁদের কম আমানত কিংবা চিকিৎসা সংক্রান্ত বিষয় জড়িত রয়েছে তাঁদের প্রথমে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy