জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় নিখোঁজদের পরিজনেরা আদালতে। নিজস্ব চিত্র
পেরিয়ে গিয়েছে আট বছর। দুর্ঘটনাস্থল থেকে সরানো হয়েছে জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের ভাঙাচোরা কামরা। কিন্তু এখনও মেলেনি মৃত্যুর শংসাপত্র।
দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিজনদের চাকরির আশ্বাস দিয়েছে রেল। চাকরির জন্য মৃত্যুর শংসাপত্র–সহ আবেদন করতে হবে। কিন্তু আট বছর ধরে মেদিনীপুর-কলকাতা যাতায়াত করেও তা মেলেনি। অবশেষে জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনায় মৃত কয়েকজনের পরিবার আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে। মঙ্গলবার কলকাতা থেকে মেদিনীপুরে এসেছিলেন কয়েকটি পরিবারের পরিজনেরা। তাঁদেরই একজন যূথিকা আটা। তাঁর স্বামী প্রসেনজিৎ আটা ওই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। মেয়ে পৌলোমীকে নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাঁর। মৃত্যুর শংসাপত্র জোগাড়ের জন্য বহু জুতোর শুকতলা খুইয়েছেন তিনি।
এমনকী, গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতেও।
কী হল সেখানে? মেদিনীপুর আদালতে আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে আসা যূথিকাদেবী চোখের জল মুছে বললেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তাঁর দফতরে ঢুকতে পারিনি। দফতরের সামনে থেকে কার্যত তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক কষ্টের মধ্যে দিন কাটছে। আমরা দিশাহারা।” ডিএনএ টেস্টের জন্য দু’বার রক্তও দিয়েছেন তিনি। কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই। সরকারের খাতায় তাঁর স্বামী এখনও নিখোঁজ।
শুধু যূথিকাদেবী নন। এমন অবস্থা আরও ১৭টি পরিবারের। দুর্ঘটনায় স্ত্রী এবং ছেলেকে হারিয়েছেন সুরেন্দ্রকুমার সিংহ। তাঁর কথায়, “অনেক খোঁজাখুঁজির পরেও স্ত্রী নীলম সিংহ এবং ছেলে রাহুল সিংহের কোনও খোঁজখবর পাইনি। নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়। ডিএনএ টেস্ট হয়। আজ পর্যন্ত ডিএনএ পরীক্ষার কোনও রিপোর্ট পাইনি।’’
যূথিকাদেবীর স্বামী, সুরেন্দ্রকুমার বাবুর স্ত্রী নীলম সিংহ এবং ছেলে রাহুল সিংহেরা ছিলেন দুর্ঘটনাগ্রস্ত জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেসের এস-৫ কামরায়। ২০১০ সালের ২৭ মে রাতে ঝাড়গ্রামের সর্ডিহা এবং খেমাশুলি স্টেশনের মাঝে দুর্ঘটনার মুখে পড়েছিল জ্ঞানেশ্বরী এক্সপ্রেস। ১৪৮ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক মানুষ। এস ৫ কামরাটি এমনভাবে দুমড়ে মুচ়ড়ে গিয়েছিল যে, অনেকের দেহ শনাক্তই করা যায়নি।
দুর্ঘটনার পরে রেল এবং রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের অর্থ পেয়েছে পরিবারগুলো। সুরেন্দ্রকুমার বলছিলেন, “মৃত্যু হয়েছে বলেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। অথচ, মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না।” প্রশাসন সূত্রের খবর, নিয়ম হল, সাত বছর কারও খোঁজ না মিললে তাঁর পরিবারকে আদালতে আবেদন করতে হয়। আদালত সবদিক বিবেচনা করে নিখোঁজকে মৃত বলে ঘোষণা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার ব্যবস্থা করে। মৃতের পরিজনদের আইনজীবী তীর্থঙ্কর ভকত বলেন, “মৃতদের পরিজনেদের নিয়ে রাজনীতি হয়েছে। মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়ার আবেদন জানিয়ে আদালতে মামলা করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy