এক সদ্যোজাতের মৃত্যুর ঘটনায় চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ উঠল খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। খড়্গপুরের মালঞ্চর শাস্ত্রীনগরের বাসিন্দা মৃত শিশুর বাবা অশোক গুপ্ত শুক্রবার হাসপাতাল সুপারের কাছে এই মর্মে অভিযোগ জানিয়েছেন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, অশোকবাবুর স্ত্রী লক্ষ্মীদেবী অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর থেকেই মহকুমা হাসপাতালের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ সৌরভ সেনাপতিকে দেখাতেন। গত ১০ মে দুপুরে লক্ষ্মীদেবী হাসপাতালে ভর্তি হন। অভিযোগ, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই তাঁর কিছু শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। তখন চিকিৎসক সৌরভবাবুকে খবর দেওয়া হয়। যদিও তিনি কোনও ব্যবস্থা নেননি বলে লক্ষ্মীদেবীর পরিজনেদের দাবি। কর্তব্যরত নার্সদের কাছে বিষয়টি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তারপরেও চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। পরে নার্সরা লক্ষ্মীদেবীকে একটি ইঞ্জেকশন দেন। যদিও তারপরেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি বলে অভিযোগ। অশোকবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমি ও আমার পরিবারের লোকেরা বারবার স্ত্রীর শারীরিক জটিলতার কথা চিকিৎসক সৌরভ সেনাপতি ও নার্সদের জানালেও সুফল পাইনি।’’
অভিযোগ, ওই দিন সন্ধ্যায় ফের লক্ষ্মীদেবীর শারীরিক পরিস্থিতি জটিল হলে সৌরভ সেনাপতিকে খবর দেওয়া হয়। যদিও তারপরেও কোনও ব্যবস্থা নেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। সিজার করে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দেন লক্ষ্মীদেবী। কিন্তু জন্মের পর থেকেই সদ্যোজাতের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ। অবশেষে চিকিৎসকেরা ওই সদ্যোজাতকে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রেফার করে দেয়। অবশ্য মেদিনীপুর মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হয় ওই শিশুর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। অশোকবাবুর অভিযোগ, “চিকিৎসকের গাফিলতিতে এ ভাবে ক্ষতি হয়ে যাবে ভাবতে পারিনি। আগেই তো চিকিৎসকেরা সিজার করতে পারতেন। আমি ওই চিকিৎসকের শাস্তি চাই।”
খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নতুন নয়। গত ২১ নভেম্বর সুভাষপল্লির বাসিন্দা লক্ষ্মণ রায় চিকিৎসক ও নার্সদের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর অভিযোগ, ভর্তির পরে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করলেও তাঁর স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা সবিতা রায়ের চিকিৎসা করা হয়নি। সারা রাত এ ভাবে কেটে গেলেও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ অর্কপ্রভ গোস্বামী ও সৌরভ সেনাপতি আসেননি বলে অভিযোগ। এরপরে পরদিন দুপুরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখা যায়, শিশুটি মারা গিয়েছে। সুভাষবাবুর অভিযোগ, “হাসপাতালের সব চিকিৎসক ‘প্রাইভেটে’ চিকিৎসার ফাঁদ খুলেছেন। তাই হাসপাতালে সময় দেন না। সব জেনেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনও অভিযোগে গুরুত্ব দেন না। এই তো রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল!”
অশোকবাবুর অভিযোগের পরে খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “অভিযোগের সত্যতা রয়েছে। তবে আমরা এ বিষয়ে পদক্ষেপ করতে পারি না। আমি অভিযোগটি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।” এ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরিশচন্দ্র বেরা বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। শুধু খড়্গপুর নয়, সর্বত্র শিশুমৃত্যুর ঘটনা রয়েছে। তবে কী কারণে ওই শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy