করজোড়ে: ‘সিনার্জির মঞ্চে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
শিল্পের আশা জাগিয়ে ‘সিনার্জি’-র আসর বসল মেদিনীপুরে। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম— এই দুই জেলাকে নিয়ে এমন উদ্যোগ রাজ্য সরকারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের। তাঁদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধার কথা জানতে এবং সরকারি পরিষেবা সম্পর্কে তাঁদের স্পষ্ট ধারণা দিতে উদ্যোগপতিদের সামনাসামনি বসেছিল প্রশাসন।
তৃতীয় তৃণমূল সরকারের শুরুতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট করেছেন, এ বার তাঁর লক্ষ্য শিল্পায়ন এবং কর্মসংস্থান। জেলায় জেলায় নতুন করে আরও শিল্পতালুক হচ্ছে। মঙ্গলবার শহরের প্রদ্যোত স্মৃতি সদনে এই আয়োজনে ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, জলসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া প্রমুখ। ছিলেন ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দফতরের প্রধান সচিব রাজেশ পাণ্ডে, পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরী, ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল, পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার প্রমুখ। শিল্পসভায় একাধিক প্রশ্ন করেছেন মন্ত্রী মানসই। স্বভাবতই অস্বস্তিতে পড়েছেন একাংশ আমলা। মানস বলেছেন, ‘‘আমার প্রশ্ন আছে। এর উত্তর তিনজন (পূর্বতন) জেলাশাসকের কাছে পাইনি।’’ এ বার বর্তমান জেলাশাসকের দিকে তাকিয়ে তাঁর মন্তব্য, ‘‘এ বার উত্তর দেবেন। আমার নিজস্ব অনুরোধ এটা।’’
এই ‘সিনার্জি’তে দুই জেলার বিভিন্ন দফতরের প্রশাসনিক আধিকারিকেরাও ছিলেন। বিভিন্ন দফতরের ‘হেল্প ডেস্ক’ ছিল। জেলার উদ্যোগপতিদের সমস্যা, সুবিধা-অসুবিধা জেনে পদক্ষেপ করতে এমন বন্দোবস্ত। প্রধান সচিব রাজেশ পাণ্ডের দাবি, ‘‘অনেক প্রস্তাব আসছে। আশা করব, এখানে আরও নতুন নতুন কারখানা তৈরি হবে।’’ দুই জেলার জেলাশাসকেরাও দাবি করেছেন, ‘‘জেলায় বিভিন্ন শিল্পে বিনিয়োগ আসছে।’’ উপস্থিত উদ্যোগপতিদের কয়েকজনের মতে, ‘‘পরিস্থিতি এখন বিনিয়োগের পক্ষে। রাজ্য সরকারও সব রকম সহায়তা করার আশ্বাস দিচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বড় লগ্নির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’’ কত বিনিয়োগ হয়েছে, আগামী দিনে কত বিনিয়োগ হতে পারে, সভায় সে সব জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতর। তবে সে সব ছাপিয়ে চর্চায় থেকেছে মানসের প্রশ্নবাণ।
মানসকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি আমার সময়ে (এক সময়ে মানসও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী ছিলেন) এই জেলার জন্য ৮৫ কোটি টাকা দিয়েছিলাম স্পেশাল বিআরজিএফ ফান্ড থেকে। মাদুর, বাঁশ-সহ অন্য সব ন্যাচরাল ফাইবারের উন্নয়নে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে। সেই টাকাটা কোথায় গেল, কী ভাবে খরচা হল, আমায় জানাবেন।’’ পরক্ষণে বলেছেন, ‘‘২৫ একর জায়গা কিনে দিয়েছিলাম, ৬ কোটি টাকা দিয়ে বিদ্যাসাগর শিল্প পার্কে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ‘সেন্টার অফ এক্সিল্যান্স’ গড়ার জন্য। মাদুর, বাবুই ঘাস ইত্যাদির শিল্পের উন্নয়নের জন্য। সেই প্রকল্পের পরিস্থিতি কী?’’ তাঁর আরও প্রশ্ন, ‘‘দিল্লিকে বলে, এই সরকার (বিজেপি সরকার) ছিল না তখন, ১৬ কোটি টাকা এনেছিলাম মেদিনীপুর জেলার জন্য। মাদুর ও অন্য শিল্পের উন্নয়নের জন্য। বাম সরকার টাকাটা তিনভাগ করেছিল। সবং, ডেবরা, খড়্গপুর লোকাল। মাদুরের জন্যই ৮ কোটি। সেটার কী হল? আমি উত্তর চাই।’’
এতে দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়েন একাংশ আমলা। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, ‘সিনার্জি’-র মঞ্চে মানস গত বছরও প্রশ্ন করেছিলেন। তখন জেলাশাসক ছিলেন আয়েষা রানি। তবে তুলনায় এ বার মন্ত্রীর সুর ছিল চড়া। উপস্থিত আমলাদের প্রতি মানসের বার্তা, ‘‘আমাদের একটু সেনসিটিভ হতে হবে। একটা সরকারকে তুলে নিয়ে গ্রামে হাজির করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার— দুয়ারে সরকার। এই কনসেপ্ট পৃথিবীতে কোথাও আছে?’’
সবংয়ের বিধায়কের প্রশ্নবাণের প্রেক্ষিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহের আশ্বাস, ‘‘এক সময়ে উনি দায়িত্বে ছিলেন (সংশ্লিষ্ট দফতরের)। চেষ্টা করেছেন এই জেলাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। উনি যে তিনটি পয়েন্ট বললেন, আমরাও সেগুলি দেখছি। কোথায়, কী কাজ হয়েছে দেখে নিয়ে ওঁকে নিশ্চয়ই জানিয়ে দেব।’’
সব শুনে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধী শিবির। বিজেপির রাজ্য নেতা তুষার মুখোপাধ্যায়ের খোঁচা, ‘‘তিন- তিনজন জেলাশাসকের কাছে প্রশ্ন করেও উনি উত্তর পাননি। ভাবা যায়! তার মানে প্রশাসনই ওঁকে সহযোগিতা করছে না। ওঁর উচিত মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করা।’’ আর মানস পরে বলছে, ‘‘কয়েকটা বিষয় জানতে চেয়েছি শুধু। আর কিছু নয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy