সভাস্থলে ঢোকার আগে। ছবি: কিংশুক আইচ
এক সময়ে জঙ্গলমহল অশান্ত ছিল। এখন শান্তি ফিরে এসেছে। খড়্গপুরের প্রশাসনিক কর্মসূচির মঞ্চ থেকে ফের সে কথা মনে করালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের সঙ্গে লালগড় আন্দোলনও তৃণমূলের ক্ষমতায় আসার পথ সুগম করেছিল বলে মনে করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। ক্ষমতায় আসার পরে বার বার জঙ্গলমহলে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় প্রতি বারই জঙ্গলমহলের সঙ্গে তাঁর আত্মিক যোগের কথা মনে করেয়েছেন। বৃহস্পতিবারের কর্মসূচি সরাসরি জঙ্গলমহলে ছিল না। খড়্গপুর শিল্পতালুকের অদূরে এদিনের মঞ্চও ছিল প্রশাসনিক কর্মসূচির। তবে সেখানেও জঙ্গলমহলের কথা আনলেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘আমি একদিন ঝাড়গ্রাম যেতাম, ছেলেমেয়েরা আমায় বলত, বুক কাঁপছে। কখন এসে ধরে নিয়ে চলে যাবে। কখন খুন করে দেবে।’’ জঙ্গলমহলে শান্তি ফেরাতে তাঁর সরকারের নানা পদক্ষেপের কথাও এদিন শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘মাওবাদীদের হাতে সেদিন যাঁরা খুন হয়েছিলেন, সিপিএমের আমলে, প্রত্যেক পরিবার, যাঁদের তথ্যপ্রমাণ আছে, আমরা কিন্তু সবাইকে চাকরি করে দিয়েছি। যে পরিবারগুলির খুঁজে পাওয়া যায়নি, তাদেরও আমরা আর্থিক সাহায্য দিয়েছি। অনেক ছেলেমেয়েরা, তাঁরা মূলস্রোতে ফিরে এসেছে, তাঁদেরও আমরা চাকরি-বাকরি দিয়েছি।’’ তাঁর সরকার যে আদিবাসীদের পাশে রয়েছে, সেটাও বোঝাতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘দেউচা-পাঁচামিতে অনেক আদিবাসী ভাইবোনেরা আছে। তাঁদের আমরা বাড়ি করে দিচ্ছে। জমি সিফট করার জন্য টাকা দিচ্ছি। চাকরিও করে দিচ্ছি স্পেশাল ক্যাটাগরিতে।’’
জঙ্গলমহলের নানা এলাকায় হাতির হানায় মৃত্যু বাড়ছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, হাতির হানায় কারও মৃত্যু হলে, মৃতের পরিবারের একজনকে স্পেশাল হোমগার্ড পদে চাকরি দেওয়া হবে। প্রায় বছর দুয়েক আগে, ২০২০ সালের অক্টোবরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সফরে এসে ওই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে বেশ কয়েকটি পরিবার চাকরি পেলেও, অনেক পরিবার এখনও চাকরি পায়নি। যা নিয়ে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। ওই ক্ষোভের কথা অজানা নয় মুখ্যমন্ত্রীর। এদিন তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমরা ঘোষণা করেছি, হাতিতে যদি কেউ মারা যায়, এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা পাবে তাঁর পরিবার। এবং তাঁর পরিবার একটা চাকরি পাবে।’’ এরপরই তাঁর সংযোজন, ‘‘মৃত্যু কখনও মানুষ কামনা করে না। আমরা চাই, মৃত্যু নয়। শান্তির মধ্য দিয়ে, সভ্যতার মধ্যদিয়ে, সবুজ বেঁচে থাকুক সৌন্দর্য্যের মধ্য দিয়ে।’’
কেন জঙ্গলমহলের অশান্ত দিনের স্মৃতি উস্কে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী? রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এটা কৌশল। বছর ঘুরলে পঞ্চায়েত ভোট। মুখ্যমন্ত্রী বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন, তাঁর সরকারই পারে জঙ্গলমহলে শান্তি বজায় রাখতে। জনসমর্থন তৃণমূলের দিকে থাকা মানে জঙ্গলমহলে শান্তি বজায় থাকা। তিনি জুড়েছেন, ‘‘জঙ্গলমহল সুন্দরী। ২,২২৫ একর জমি আমরা অলরেডি দিয়ে দিয়েছি। ওখানে ৭২ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে। কয়েক লক্ষ ছেলেমেয়ে চাকরি পাবে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দুর্গাপুর, বর্ধমান, বীরভূম, নদfয়া, মুর্শিদাবাদে ঢেলে কাজ হবে।’’
প্রশাসনিক মঞ্চ হলেও বিরোধীদের বিঁধতে ছাড়েননি তিনি। তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘‘আমি বলি শোনো, হিংসা করো না। রাজনীতিতে কাজের প্রতিযোগিতা করো। পারলে লড়ে নাও, পারলে গড়ে নাও, পারলে তৈরি করে নাও, পারলে সৃষ্টি করে নাও, পারলে সৃষ্টির পিছনে ছুটে যাও।’’ মুখ্যমন্ত্রী জুড়েছেন, ‘‘বোমা- বন্দুকের পিছনে ছুটে যেও না। সৃষ্টির পিছনে ছুটে গেলে আগামী দিনে আরও সৃষ্টি হবে।’’ বিজেপিকে বিঁধে মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘‘যার খেতে দেওয়ার ক্ষমতা নেই, তার রাজনীতি করার দরকার নেই।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy