Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোট কাটার অঙ্ক সিঁড়ি ভাঙা

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় তৃণমূলের গড় ভোট ছিল ৫৪.১৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসকের প্রাপ্ত ভোট বেড়ে হয়েছিল ৫৫.১৯ শতাংশ।

নেতাই গ্রামে কংসাবতীর ভাঙন রোধে পাড় বাঁধানো হয়েছে। তবে নেতাই হাইস্কুল যাওয়ার রাস্তাটি এখনও কাঁচা। নিজস্ব চিত্র

নেতাই গ্রামে কংসাবতীর ভাঙন রোধে পাড় বাঁধানো হয়েছে। তবে নেতাই হাইস্কুল যাওয়ার রাস্তাটি এখনও কাঁচা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৯ ০০:২৮
Share: Save:

উন্নয়ন তো কম হয়নি। তবু ‘ভোটবাক্সে’ কেন উপুড়হস্ত নয় জঙ্গলমহল। পঞ্চায়েত ভোটের ফল দেখেই কারণ অনুসন্ধানে নেমেছিল তৃণমূল। রোগের কারণ ধরা পড়েছে কি না, চিকিৎসায় কাজ হয়েছে কি না, তা জানা যাবে আগামী ২৩ মে, লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের দিন।

ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত ঝাড়গ্রাম বিধানসভার অধীনে রয়েছে লালগড়। যেখানে বছর দশেক আগে দিনের বেলাতেও যেতে ভয় পেতেন বাইরের লোকজন। রাজ্যে পালাবদলের পর পরিস্থিতি বদলে গিয়েছে। শান্তি ফিরেছে। হয়েছে উন্নয়নও। লালগড় ও ঝাড়গ্রামে কয়েকটা ইংরেজি মাধ্যম সরকারি স্কুল ও নতুন কলেজ হয়েছে। আমকলায় কংসাবতীর উপর সেতু হওয়ার ফলে ঝাড়গ্রাম-লালগড়ের মধ্যে যোগাযোগ খুবই সহজ হয়েছে। হয়েছে নার্সিং ট্রেনিং স্কুল। ঝাড়গ্রামে সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল। পুরোদস্তুর চালু করা না গেলেও ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকার দু’টি কিসানবাজার উন্নয়নের জানান দিচ্ছে। রামগড়ে হয়েছে পলিটেকনিক। লালগড়ে হয়েছে আইটিআই। চকচকে রাস্তাঘাট হয়েছে। লালগড়ে ঢোকার সময় চওড়া রাস্তা দেখে কলকাতার পর্যটকদের অনেকে তো রেড রোডের সঙ্গে তুলনাও করে ফেলেন। তবুও স্বস্তি নেই শাসকের।

২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় তৃণমূলের গড় ভোট ছিল ৫৪.১৩ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে শাসকের প্রাপ্ত ভোট বেড়ে হয়েছিল ৫৫.১৯ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল মাত্র ১১.৫৬ শতাংশ। ২০১৬ সালের বিধানসভায় বিজেপি-র ভোটের হার কমে হয়েছিল ১০.৪৭ শতাংশ। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে অবশ্য তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ধাক্কা লাগে। ঝাড়গ্রাম বিধানসভার অধীনে রয়েছে ১৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। এর মধ্যে লালগড় ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও ঝাড়গ্রাম ব্লকের ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে লালগড় ব্লকের ১০টি পঞ্চায়েতের মধ্যে রামগড়, সিজুয়া, বেলাটিকরি ও বিনপুর এই চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছিল বিজেপি। বাকি ৬টি (লালগড়, বৈতা, ধরমপুর, আঁধারিয়া, দহিজুড়ি, নেপুরা) গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূল দখল করেছিল। পরে সিজুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপ প্রধান-সহ বিজেপি-র চারজন সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় ওই গ্রাম পঞ্চায়েতটি এখন তৃণমূলের ক্ষমতাসীন। ঝাড়গ্রাম ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে বাঁধগোড়া ও মানিকপাড়া বিজেপি পেয়েছে। রাধানগর ও সাপধরা গ্রাম পঞ্চায়েত তৃণমূলের দখলে। গত বছর পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় সব মিলিয়ে তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪১ শতাংশ। অন্যদিকে, গত পঞ্চায়েত ভোটে ঝাড়গ্রাম বিধানসভায় বিজেপি ৪৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে।

আজ কোথায় কোথায় ভোট, দেখে নিন

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

আর এখানেই লালমাটিতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে শাসক দল। পঞ্চায়েত ভোটের পর তৃণমূলের দলীয় ময়না-তদন্তে উঠে এসেছে নানা কারণ। সংক্ষেপে যা অনেকটা এইরকম—উন্নয়ন হয়েছে ঠিকই তবে পাশাপাশি বেড়েছে স্বজনপোষণ, নেতাদের একাংশের বেড়েছে দুর্নীতিও। পরিষেবা বেড়েছে। তবে কমেছে যত্ন। সাংসদকে নিয়ে রয়েছে ক্ষোভও। ঝাড়গ্রাম বিধানসভা এলাকায় কংসাবতীর নদী ভাঙন নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। নেতাই গ্রামে ভাঙন ঠেকাতে কাজ হয়েছে। কিন্তু অন্যত্র হয়নি।

তৃণমূলের তরফে ঝাড়গ্রামের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় পঞ্চায়েত ভোটের পর বারবার এসেছেন জেলায়। নরমে,গরমে নেতাদের বুঝিয়েছেন, আদিবাসীদের মন বোঝায় আরও যত্নশীল হতে হবে। এই পরিস্থিতিতে এসে পড়েছে লোকসভা ভোট। আদিবাসী ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরেছে। আদিবাসীদের সামাজিক সংগঠনের নেতার স্ত্রীকে শাসক দল প্রার্থী করায় বেড়েছে ক্ষোভ। পরিস্থিতি যা তাতে লড়াই এ বার মূলত বহুমুখী। তৃণমূলের বিরবাহা সরেন, বিজেপির কুনার হেমব্রম, সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম, কংগ্রেসের যজ্ঞেশ্বর হেমব্রমরা রয়েছেন। ঝাড়খণ্ড পার্টি (নরেন) ও ঝাড়খণ্ড অনুশীলন পার্টির জোট প্রার্থী হয়েছেন বিরবাহা হাঁসদা। প্রার্থীর সংখ্যা ১০ ছাড়িয়েছে। ভোট কাটাকাটিতে কার পাল্লা ভারী হবে তা নিয়ে চলছে অঙ্ক কষা।

বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী বলেন, ‘‘লোক দেখানো উন্নয়ন হয়েছে। এলাকাবাসীর প্রকৃত প্রয়োজন ভিত্তিত উন্নয়ন তো হয়নি। সেই সঙ্গে পঞ্চায়েত থেকে সর্বস্তরে সীমাহীন দুর্নীতিই হয়েছে কেবল।’’ সিপিএম ও কংগ্রেসেরও দাবি, পরিকাঠামো বিহীন সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল থেকে শিক্ষক বিহীন মডেল স্কুল। এসবই হচ্ছে ভোটের স্বার্থে লোক দেখানো উন্নয়ন। বাস্তবে সাধারণ মানুষ পরিষেবাই পাচ্ছেন না। তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা চেয়ারম্যান সুকুমার হাঁসদা বলছেন, ‘‘বিরোধীরা চোখে ঠুলি পরে আছেন। তাই এই বিপুল উন্নয়ন তাঁদের চোখে পড়ছে না। আসলে এত উন্নয়নের পরে মানুষের কাছে গিয়ে বিরোধীদের বলার মতো কিছু নেই। তাই মনগড়া অভিযোগ তুলে ভোটারদের বিভ্রান্ত করার ব্যর্থ চেষ্টা হচ্ছে। জঙ্গলমহলের আমজনতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই আছেন। ভোটের ফলে সেটা প্রমাণ হয়ে যাবে।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE