Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ভোটে যেতে চাই, সটান বিডিও অফিসে হাজির শিক্ষক

ভোটের কাজে যেখানে অনেকে যেতেই চান না সেখানে কৌশিকবাবুর এমন আগ্রহ দেখে অনেকে তাঁকে ঠাট্টা-তামাশা করতেও ছাড়েননি। কিন্তু নাছোড় কৌশিক।

কৌশিক মাজী। (ডান দিকে) বিডিওকে দেওয়া সেই চিঠি।

কৌশিক মাজী। (ডান দিকে) বিডিওকে দেওয়া সেই চিঠি।

আরিফ ইকবাল খান
হলদিয়া শেষ আপডেট: ১২ এপ্রিল ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

এর আগে পাঁচবার পোলিং অফিসার হিসেবে ভোটের কাজে যোগ দিয়েছেন। গণতন্ত্রের বৃহত্তম উৎসবে প্রশাসনের ডাকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরেছেন। কখনও ভোটের কাজে অনীহা দেখাননি। কারণ ভোটের কাজে যেতে তিনি ভালবাসেন। তবে বিধি বাম। প্রতিবার ভোটের কাজের তাঁর ডাক এলেও এ বার আর আসেনি। তাঁর মতো অভিজ্ঞ ভোটকর্মী কেন এ বার ব্রাত্য তা ভেবেই মুষড়ে পড়েছেন তিনি। ভোটের কাজে যেন তাঁকে ডাকা হয়, প্রশাসনের কাছে সেই আবেদন জানিয়ে চিঠি লিখেছেন।

নন্দীগ্রাম-১ ব্লকের যাদুবাড়িচক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক কৌশিক মাজী। হলদিয়ার হাজরামোড়ের বাসিন্দা কৌশিক প্রতিদিন হলদি নদী পেরিয়ে নন্দীগ্রামের স্কুলে যান। সহকর্মীদের অনেকের ভোটের ডিউটি আসায় নিশ্চিন্তে ছিলেন, তাঁরও ডাক আসবে। কিন্তু তা না হওয়ায় বিচলিত হয়ে সহকর্মীদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ‘আমার কেন এল না? কোথাও কিছু গণ্ডগোল হয়েছে কি না কে জানে’! ভোটের কাজে যেখানে অনেকে যেতেই চান না সেখানে কৌশিকবাবুর এমন আগ্রহ দেখে অনেকে তাঁকে ঠাট্টা-তামাশা করতেও ছাড়েননি। কিন্তু নাছোড় কৌশিক।

এমন উলাটপুরাণ জেলার নির্বাচন সেলেও রীতিমত আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জেলার মুখ্য রিটার্নিং অফিসারকে তাঁকে ভোটের দায়িত্ব দেওয়ার জন্য চিঠিও লিখেছেন কৌশিক। আবেদন নিয়ে নন্দীগ্রাম বিডিও অফিসেও হাজির হয়েছেন। বিডিও সুব্রত মল্লিক বলেন, ‘‘উনি ভোটের কাজে যেতে চাইছেন জেনে ভাল লাগল। তবে ভোটের কাজে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার পুরো বিষয়টি দেখভাল করা হচ্ছে জেলায়। তাই ওঁকে জেলা সদরে যোগাযোগ করতে বলেছি।’’ প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, ‘‘ওই শিক্ষকের দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ দেখে অবাক হয়েছি। ভোটের কাজে না যাওয়ার জন্য যেখানে প্রায় সবাই নাম কাটাতে আগ্রহী, সেখানে কৌশিকবাবুর এমন দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ দেখে ভাল লেগেছে।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

অনেকেই তো এই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে আবেদন জানিয়েছেন। অনেকে নিরাপত্তার অভাবের অভিযোগও তুলেছেন। সেখানে আপনি নিজে থেকে কেন ঝুঁকি নিতে চাইছেন? কৌশিকের উত্তর, ‘‘আমি না গেলেও অন্য কেউ তো যাবেন। তাঁরও তো ঝুঁকি থাকবে।’’ আরও জানালেন, ‘‘এই দায়িত্ব নেওয়ার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম। নন্দীগ্রাম বিডিও অফিস, হলদিয়া মহকুমা শাসকের অফিসেও গিয়েছি। কিন্তু ভোট প্রক্রিয়ার প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়ে যাওয়ায় এবং স্কুলের দায়িত্ব থাকায় আর জেলা সদরে যাওয়া হয়নি।’’ ফলে এ বার ভোটে মন খারাপ তাঁর।

ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী চাওয়া নিয়ে ভোটকর্মীদের পাশেই দাঁড়িয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘সহকর্মীদের অনেকেই ভোটে সুরক্ষার কারণে কেন্দ্রীয় বাহিনী দাবি করেছেন। এটা অমূলক নয়। আমার সমর্থন রয়েছে। অতীতে আমার মতো অনেককে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তাই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হলে সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালনও সম্ভব হবে।’’

সাধারণভাবে ভোটকর্মীদের ভোটের কাজে না যাওয়ার মানসিকতার উল্টোপথে হেঁটে কৌশিকবাবুর এমন আচরণ যে ভোটকর্মীদের উৎসাহিত করবে, মানছে জেলা প্রশাসনও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE