প্রতীকী ছবি।
নতুন কারখানা দূর অস্ত্। শিল্পতালুকে বন্ধ হওয়া কারখানা খোলেনি। ধান এবং আলু চাষেও আয় পর্যাপ্ত নয়। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা খড়্গপুর বিধানসভা এলাকায় এ বার ভোট রাজনীতির কেন্দ্রে রয়েছে কর্মসংস্থানের দাবি।
এই কেন্দ্রে লড়াই মূলত তিনমুখী। তৃণমূল, বিজেপি তো রয়েইছে। বামেদের অস্তিত্ব একেবারে ফিকে হয়নি এখানে। ২০১৩ সাল পর্যন্ত তাদের প্রভাব ছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে লাল ভোটে থাবা বসিয়েছে গেরুয়া শিবির। ২০১৮সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কর্মসংস্থানের আশা জাগিয়ে শিল্পতালুক সংলগ্ন তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করেছে বিজেপি। এমনকি,, খড়্গপুর-১ ব্লকের ২০টি পঞ্চায়েত সমিতির আসনের ৭টি পেয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা প্রার্থী দিলীপ ঘোষ বলেন, “তৃণমূল সরকারের আমলে রাজ্যের সঙ্গে খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভায় নতুন কোনও শিল্প আসেনি। উল্টে কারখানা বন্ধ হয়েছে। কৃষির অবস্থাও ভাল নয়। বেকারত্ব বেড়েছে। স্থানীয় লোক কারখানায় কাজ পাচ্ছে না। টাকার বিনিময়ে বাইরের লোক শ্রমিকের কাজ করছে। মানুষ তৃণমূলকে ভোট দেবে না।” তৃণমূল প্রার্থী মানস ভুঁইয়া আবার দুষছেন কেন্দ্রীয় সরকারের নীতিকে। তিনি বলছেন, “খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভায় যে শিল্পতালুক সেখানে বহু মানুষের চাকরি হয়েছে। কারও ক্ষোভ থাকলেও সেটা আলোচনায় মিটে যাবে। কিন্তু মোদীবাবু বছরে ২কোটি চাকরি দেবেন বলে গত চারবছরে দেড় কোটি লোকের চাকরি খেয়েছেন। আর ৬ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে ৮০ লক্ষের কর্মসংস্থান করেছেন। মানুষ বিচার করবে।”
এই খড়্গপুর বিধানসভার ৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত খড়্গপুর-১ নম্বর ব্লকের অধীনে। আর বাকি ৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত মেদিনীপুর সদর ব্লকের অন্তর্গত। খড়্গপুর ১ ব্লকে রয়েছে শিল্পতালুক আর মেদিনীপুর সদর ব্লক প্রধানত কৃষি প্রধান। সত্যি কি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে? মেদিনীপুরের পাঁচকুড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের হাতিহলকার যুবক ফরাজ মল্লিক বলেন, “তৃণমূলের আমলে রাস্তাঘাট, শৌচাগার, ঘর-বাড়ির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু শিল্পায়ন হয়নি। কৃষিতে লোকসান। খাদান বন্ধ। বেকারত্ব বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে পুলিশি হয়রানি বাড়ছে। যিনি সাংসদ হবেন তিনি যেন আমাদের জন্য লড়াই করেন।”
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এই বিধানসভার ভোটারদের একটি বড় অংশ শ্রমিক। খড়্গপুরের শিল্পতালুকের প্রায় সবকটি কারখানায় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের দাপট। ফলে আশায় রয়েছে শাসক দল। তবে রয়েছে আশঙ্কা। কারণ, বাম ভোট গেরুয়া শিবিরে গেলে তা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে তৃমমূলের। বিধানসভার ১২টি গ্রাম পঞ্চায়তের ৩টি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপির হাতে গিয়েছে। তৃণমূলের দখলে থাকা কলাইকুণ্ডা গ্রাম পঞ্চায়েতের শিল্পতালুক ঘেঁষা মথুরাকিসমতের যুবক সন্দীপ চক্রবর্তী বলেন, “মাধ্যমিক পাশ করে বসে রয়েছি। স্থায়ী কাজ নেই। বাড়ির কাছে কারখানা থাকলেও নেতারা টাকার বিনিময়ে বাইরের লোক ঢোকাচ্ছে। তাই আমরা এখন চাই বিজেপি আসুক।”
২০১৪ সালে লোকসভায় বামেদের ভোট কমে প্রায় ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছিল। তৃণমূল একাই প্রায় ৪৭শতাংশ ভোট পেয়েছিল। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ১০শতাংশ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। প্রায় ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন জোটপ্রার্থী। তবে তৃণমূল নিজেদের ৪৮ শতাংশ ভোট ধরে রেখে জিতেছিল। ব্যবধান ছিল প্রায় ১৯হাজার। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদ আসনের নিরিখে বিধানসভা এলাকায় তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান বেড়েছে। প্রায় ৪৮হাজার ‘লিড’ রয়েছে তৃণমূলের।
খড়্গপুরের বিধায়ক দীনেন রায় বলেন, “গত বিধানসভার থেকেও ‘লিড’ বাড়বে। শিল্প ও কৃষির সঙ্গে যুক্ত মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পে মানুষ উপকৃত হয়েছে। বিজেপি বলে কিছু থাকবে না।” গত বিধানসভা নির্বাচনের প্রার্থী বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি গৌতম ভট্টাচার্য বলেন, “খড়্গপুর গ্রামীণ বিধানসভায় শ্রমিক নিয়োগে তৃণমূলে সিন্ডিকেট চলছে। চাষি ফসলের নায্য দাম পাচ্ছে না। কর্মসংস্থানের দিকটি বিচার করে মানুষ তৃণমূল প্রার্থীকে পরাস্ত করবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy