ধর্না মঞ্চে বসে সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার (বসে) ও বিদায়ী পুরবোর্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনশ্যাম সিংহ (দাঁড়িয়ে)। নিজস্ব চিত্র
বাসযোগ্য জমির রায়তি স্বত্ব ফেরানোর দাবিতে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। সেই ধর্নায় একসঙ্গে দেখা গেল বিদায়ী পুরবোর্ডের তৃণমূলের কাউন্সিলর ঘনশ্যাম সিংহ ও সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারকে। যা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তবে ওই দু’জনেই অবশ্য জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, ভুক্তভোগী এলাকাবাসী হিসেবেই তাঁরাও ধর্নায় সামিল হয়েছেন।
সোমবার ঝাড়গ্রাম জেলাশাসকের দফতরের সামনে সকাল ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত ওই ধর্না সমাবেশের ডাক দিয়েছিল ‘জমির রায়ত স্বত্ব পুনরুদ্ধার কমিটি’। শহরের ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সমন্বয়ে গঠিত ওই কমিটির আহ্বায়ক কমল দত্ত-সহ তিন প্রতিনিধি পরে জেলাশাসক আয়েষা রানির সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলাশাসক জানান, এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হচ্ছে।
ঝাড়গ্রাম শহরের ১০ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ৪২ একর রায়তি জমির সমস্যা প্রায় চল্লিশ বছরের। ২০১৮ সাল থেকে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ওই জমির সমস্যা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। সমস্যা মেটানোর জন্য প্রশাসনিক আধিকারিকদের একাধিকবার নির্দেশও দিয়েছেন মমতা। এলাকাবাসীকেও আশ্বস্ত করেছিলেন তিনি। কিন্তু স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেওয়ার দু’বছর পরেও জমির জট কাটেনি। প্রশাসন সূত্রের খবর, বাম আমলে ভূমি দফতর ওই রায়ত জমিকে রাজার বেনামি জমি বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। পরে অবশ্য হাইকোর্ট ওই ঘোষণা বাতিল করে দেয়। তবে জমির বিষয় বলে সব দিক খতিয়ে দেখতে সময় লাগছে।
জমির রায়তি স্বত্ব পুনরুদ্ধার কমিটির আহ্বায়ক কমল দত্ত জানালেন, ১৯৮১ সালে শহরের ওই দু’টি ওয়ার্ডের ৪২ একর রায়ত বাসযোগ্য জমিকে ভুলবশত ‘রাজ পরিবারের বেনামি জমি’ দেখিয়ে ভূমি দফতর খাস বলে ঘোষণা করে দিয়েছিল। অথচ বাসিন্দাদের দলিলে রায়ত বলেই ওই সব জমির উল্লেখ রয়েছে। সকলেই রায়ত জমি কিনে বাড়ি করেছেন। বাসিন্দারা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। ১৯৯৭ সালে হাইকোর্ট নির্দেশ জারি করে পুরো জমিটি রায়ত বলে জানিয়ে দেয়। জমির স্বত্ত্বও ফিরে পান বাসিন্দারা। কিন্তু ফের ১৯৯৮ সালে ভূমি দফতর ওই জমি খাস বলে ঘোষণা করে। বাসিন্দারা আবার হাইকোর্টে অবেদন করেন। ২০০০ সালে হাইকোর্ট ভূমি দফতরের নির্দেশিকা খারিজ করে জমিটি রায়ত বলে জানিয়ে দেয়। তারপরেও সমস্যা মেটেনি। কমলের ক্ষোভ, ‘‘ভূমি দফতরের ভুলে আমরা নিজভূমে পরবাসী হয়ে আছি। হাইকোর্টের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও এলাকার ছ’শো পরিবারকে এখনও জমির বৈধ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না।’’
ওই জমিতে ছ’শোরও বেশি পরিবার বহু বছর আগে বাড়ি বানিয়ে বসবাস করছেন। তার মধ্যে রয়েছেন ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর ঘনশ্যাম সিংহ ও সিপিএমের প্রাক্তন পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারও। ১৯৮১ সালের আগে জমির ক্রেতাদের দলিলে ওই জমি রায়ত হিসেবে উল্লেখও রয়েছে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত ভূমি দফতর ৪২ একর বাসযোগ্য জমির রায়ত-স্বত্ব ফিরিয়ে দেয়নি বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ।
এর ফলে ওই সব এলাকায় জমি কেনাবেচা, বাড়ি বিক্রি, বাড়ি বন্ধক রেখে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়েছেন বাসিন্দারা। এমনকী পুরসভা ওই এলাকার পুরনো বাড়ির দোতলা তৈরি কিংবা নতুন বাড়ি তৈরির জন্য অনুমোদনও দিচ্ছে না। ভূমি দফতরও জমির বার্ষিক খাজনা নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাম ও তৃণমূল সরকারের বিভিন্ন প্রশাসনিক স্তরে আবেদন করেও সমস্যার সুরাহা না-হওয়ায় ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হন এলাকাবাসী। ২০১৮-র নভেম্বরে ফের মমতা ঝাড়গ্রামে এলে তাঁকে দ্বিতীয় দফায় আবেদনপত্র দেওয়া হয়। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ডেবরার এক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হয়ে ভূমি দফতরের প্রধান সচিবকে বলেছিলেন, ‘‘আর ওয়েট করা যাবে না। কাজটা করে দিতে হবে। ঝাড়গ্রামে গেলেই ওই এলাকার লোকজন আমাকে বার বার কাগজ ধরায়।’’ কিন্তু বছর গড়িয়ে গেলেও জমি জটের সুরাহা হয়নি। গত অক্টোবরে ঝাড়গ্রামে প্রশাসনিক সভায় ফের মুখ্যমন্ত্রীর নজরে বিষয়টি আনা হয়। কিন্তু এখনও বিষয়টি যে তিমিরে ছিল সেখানেই।
মুখ্যমন্ত্রী বলার পরেও কাজ না হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। দলের ঝাড়গ্রাম নগর মণ্ডলের সভাপতি নন্দন ঠাকুর বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে বার বার বলার পরেও কাজ না হওয়ায় এটা স্পষ্ট যে সাধারণ মানুষের সুরাহা করার কোনও মানসিকতাই এই সরকারের নেই।’’ তিনি জুড়েছেন, ‘‘তৃণমূল এখন বিজেপিকে ঠেকাতে বামেদের হাত ধরতে চাইছে। তাতে লাভ হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy