আগাছায় ঢেকেছে ছোটদের খেলার সরঞ্জাম ।
ভেঙে পড়েছে খেলার দোলনা। টয় ট্রেনের রেল লাইনের ট্র্যাকের কাঠ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বাগান জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেট। এমনই বেহাল তমলুক শহরের বুদ্ধ পার্ক সংলগ্ন শিশু উদ্যান।
তমলুকের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রূপনারায়ণ নদীর তীরে বুদ্ধ পার্কের পাশে সাংসদ এলাকা উন্নয়ন তহবিলের কয়েক লক্ষ টাকা খরচ করে শিশু উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছিল পুরসভার উদ্যোগে। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে চালু করা হয়েছিল শিশু উদ্যানটি। শিশুদের খেলার জন্য দোলনা, ঘোরানো সিঁড়ি, টয় ট্রেন, পাখিঘর, ফুলের গাছ তো ছিলই। পাশেই পুকুরের জলে বোটিংয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তমলুক শহরের একটা বড় এলাকার খুদেদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠছিল শিশু উদ্যানটি। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংস্কারের অভাবে এখন শিশু উদ্যানটির হাল শোচনীয়।
বুদ্ধ পার্ক সংলগ্ন ওই শিশু উদ্যান এখন ঢেকে রয়েছে আগাছা আর ঝোপে। বাগানের সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে খাবারের বাতিল প্লাস্টিক প্যাকেট। টয় ট্রেনের জন্য পাতা লোহার রেল লাইনের নিচের অধিকাংশ কাঠ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। টয় ট্রেনের কামরাগুলি খোলা অবস্থায় পাশে পড়ে রয়েছে। শিশুদের খেলার দোলনা ভেঙে পড়ে আছে। উদ্যানের একপাশে পুকুরের মধ্যে বেদিতে বসানো বুদ্ধ মূর্তির রঙ বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। খারাপ হয়ে গিয়েছে আলোও। শিশু উদ্যানের অন্যতম আকর্ষণের বিষয় ছিল পাখিঘর। সেই ঘরে পড়ে রয়েছে ভাঙা চেয়ার, কাগজের বাক্স। অযত্নের ছাপ স্পষ্ট। আর শিশু উদ্যানের পূর্ব দিকে বিশাল জলাশয়ের বোটিং তো একেবারে বন্ধ।
ভাঙা নৌকো পড়ে রয়েছে জমিতে।
শিশু উদ্যানের এমন বেহাল দশার কারণে শহরের শিশুদের খেলার সুযোগ কমেছে বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই শিশ উদ্যানে তমলুক শহরের আবাসবাড়ি, পার্বতীপুর, শঙ্করআড়া, পায়রাটুঙি এলাকার খুদেরা নিয়মিত খেলতে আসত। কিন্তু কয়েক মাস ধরে এই শিশু উদ্যান বেহাল। ফলে শিশুদের নিয়ে অভিভাবকদের আনাগোনাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বছর নয়েকের ঋজু বলে, ‘‘আমরা কী সুন্দর সকলে খেলতে যেতাম। বর্ষার পর পুরো পার্কটা জঙ্গলে ঢেকে দেল। তারপর আর ওখানে যাই না।’’ সাত বছরের মেয়ে ঋতুজাকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে পার্কে যেতেন মৈনাকবাবু। তাঁর গলাতেও আক্ষেপের সুর। বলেন, ‘‘আসলে চারদিকে খেলার জায়গা কমে যাচ্ছে তো। তার মধ্যে এত সুন্দর পার্ক নষ্ট হয়ে গেল! ছোটদের জন্যও বার্তাটা ভাল নয়।’’
প্রায় একই ছবি তমলুক শহরের পশ্চিম প্রান্তে ধারিন্দা রেলগেট এলাকায় পুরসভার উদ্যোগে গড়ে তোলা বরদাকান্ত শিশু উদ্যানের। এখানেও কয়েক বছর আগে চালু হওয়া শিশু উদ্যানে চেয়ার, দোলনা, টয় ট্রেন এবং পুকুরের জলে বোটিং চালু করা হয়েছিল। কিন্তু এখানেও টয় ট্রেন বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। পুরো চত্বর আগাছায় ভরে গিয়েছে। আর পুকুরের বোটিং করার নৌকা তুলে ফেলে রাখা হয়েছে। পুকুর সংলগ্ন বাগানে থাকা অধিকাংশ বাতিস্তম্ভ ভেঙেগিয়েছে। লোহার চেয়ারেও ধরছে মরচে। শহরের বাসিন্দাদের অভিযোগ, এমনিতে তমলুক শহরে শিশুদের খেলার জন্য কোনও বড় পার্ক নেই। তাই শহরে দুই প্রান্তে থাকা দুই শিশু উদ্যান গড়ে ওঠায় ছোটদের একটা খেলার জায়গা হয়েছিল। কিন্তু উদ্যানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলার ফলে সেই সুযোগটা আর একেবারেই নেই।
শিশু উদ্যানের অবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়ে তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন বলেন, ‘‘শিশু উদ্যানগুলির রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। এ বার ভারী বর্ষার কারণে উদ্যানের সরঞ্জামের ক্ষতি হয়েছিল। উদ্যানগুলি পুনরায় সাজিয়ে তোলার জন্য অর্থ বরাদ্দ করে ঠিকাদার সংস্থা নিয়োগ করা হয়েছে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।’’ আবার কবে দল বেঁধে খেলা হবে, দিন গুনছে খুদেরা।
পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy