Advertisement
৩০ অক্টোবর ২০২৪
চলছে মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্প

ঘরে ঠাঁই শ্রমিকদের, পড়ুয়াদের ক্লাস বারান্দায়

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে এলাকার বাড়ি বাড়ি শৌচাগার বানাতে এসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ঘর দখল করে থাকছেন ঠিকাদারের লোকজন। অগত্যা পড়ুয়াদের ঠাঁই হয়েছে স্কুলের বারন্দায়।

পড়াশোনা চলছে স্কুলের বারান্দায়। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

পড়াশোনা চলছে স্কুলের বারান্দায়। দেবরাজ ঘোষের তোলা ছবি।

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:২০
Share: Save:

মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে এলাকার বাড়ি বাড়ি শৌচাগার বানাতে এসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্লাস ঘর দখল করে থাকছেন ঠিকাদারের লোকজন। অগত্যা পড়ুয়াদের ঠাঁই হয়েছে স্কুলের বারন্দায়। লালগড় ব্লকের রামগড় পঞ্চায়েতের একাধিক প্রাথমিক স্কুলের শ্রেণিকক্ষের ছবিটা এখন এমনই। সারা দিনের হাড় ভাঙা খাটুনির পর রাতে শ্রেণিকক্ষে ওই বহিরাগতরা আমোদ-ফূর্তিও করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সকাল বেলা পড়ুয়ারা এসে দেখছে স্কুল চত্বর ভরে রয়েছে নানা আবর্জনায়। ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ লালগড় প্রাথমিক চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।

তবে প্রশাসন সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘মিশন নির্মল বাংলা’ প্রকল্পে আগামী মার্চের মধ্যে লালগড় ব্লকে ২৫ হাজার শৌচাগার তৈরি করে ফেলতে হবে। এই প্রকল্পে উপভোক্তা দেন ন’শো টাকা। বাকি দশ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দেওয়া হয়। পঞ্চায়েতের নিয়োগ করা ঠিকাদারের মাধ্যমে উপভোক্তার বাড়িতে শৌচাগার বানিয়ে দেওয়া হয়। ঠিকাদার তাঁর শ্রমিকদের কোথায় রাখবেন, কী খাওয়াবেন, সেটা অবশ্য প্রশাসনের দেখার কথা নয়। অথচ, রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েতের গোটা দশেক প্রাথমিক স্কুলে ও একটি হাইস্কুলের ঘর দখল করে ঠিকাদার সংস্থার শ্রমিকদের রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ।

সমস্যার সূত্রপাত দাসবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রমিকদের থাকা নিয়ে। এই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ৫৪ জন। অ্যাসবেসটসের ছাউনি দেওয়া স্কুল বাড়ির তিনটি ঘরে শিশু শ্রেণি থেকে চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস হয়। ঘরের সমস্যার জন্য একটি ঘরে একাধিক ক্লাসের পড়ুয়ারা বসে। গত ২৭ নভেম্বর ঠিকাদার সংস্থার জনা ৬ শ্রমিক একটি ক্লাস ঘরে রাতে থাকলে আপত্তি জানান কয়েকজন গ্রামবাসী। এরপরই রামগড় পঞ্চায়েতের প্রধান গঙ্গামণি সরেন লিখিত ভাবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেন, এলাকায় মিশন নির্মল বাংলা প্রকল্পে বাড়ি বাড়ি শৌচাগার নির্মাণের জন্য স্কুলে ঠিকাদারের লোকজনকে থাকতে দিতে হবে। পঞ্চায়েত প্রধান কীভাবে এমন নির্দেশ দিতে পারেন, তা নিয়ে এলাকায় প্রশ্ন উঠেছে।

দাসবাঁধ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিচার ইনচার্জ রাখালচন্দ্র দত্ত বলেন, “পঞ্চায়েত প্রধানের নির্দেশ অনুযায়ী স্কুল পরিদর্শকের অনুমতিক্রমে একটি ক্লাসঘরে ঠিকাদারের লোকজনকে থাকতে দেওয়া হয়েছে।” লালগড় চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক মলয় মণ্ডল বলেন, “অভিভাবকদের অভিযোগ পাওয়ার পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ও বিডিও সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। সরকারি প্রকল্পে কাজের গতি আনার জন্য পড়ুয়াদের পঠন পাঠনে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে সরকারি স্কুলে শ্রমিকদের থাকতে দেওয়া হয়েছে।”

স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এভাবে স্কুলের ক্লাস ঘরে বহিরাগতদের থাকতে দেওয়া যায় না। লালগড়ের বিডিও জ্যোতিন্দ্রনাথ বৈরাগী বলেন, “দ্রুত প্রকল্পের কাজ শেষ করতে হবে। পঞ্চায়েত প্রধানের আবেদনের ভিত্তিতে টিচার ইনচার্জ সাময়িক ভাবে ওই শ্রমিকদের থাকতে দিয়েছেন।” যুব তৃণমূলের লালগড় ব্লক সভাপতি তন্ময় রায়ের দাবি, “কেউ অভিযোগ করেননি। উন্নয়নে বাধা দেওয়ার কিছু বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজন অভিভাবকদের সই নকল করে প্রশাসনিক মহলে অভিযোগপত্র দিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Labours class students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE