শোকস্তব্ধ বিট্টুর মা নীপা শর্মা (চশমা চোখে)। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান। স্পিনটাও ভাল করতে পারেন—তাই দ্রুত নির্বাচকদের নজরে পড়ে গিয়েছিলেন খড়্গপুরের অনিকেত ওরফে বিট্টু। কিন্তু সব স্বপ্ন থেমে গেল একুশেই।
মঙ্গলবার রাতেই কলকাতা থেকে খড়্গপুরের দক্ষিণ ইন্দার পুরনো বাড়িতে অনিকেতের নিথর দেহ এসে পৌঁছয়। বুধবার শহরের ট্রাফিকের হরিশচন্দ্র শ্মশানঘাটে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া হয়। তার আগে সারা রাত ছেলের দেহ আগলে বসেছিলেন বাবা কমল শর্মা ও মা নীপাদেবী। ছিলেন অনিকেতের পরিজন ও বন্ধুরা।
অনিকেতের মৃত্যুর পরে প্রাক্তন ও বর্তমান অনেক ক্রিকেটার সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করেছেন। এ দিন যখন শ্মশানে ছেলের দাহকাজ হচ্ছে, তখন বাড়িতে স্থির চোখে বসে ছিলেন মা নীপাদেবী। তিনি বলছিলেন, ‘‘ভাল খেলত জানতাম। মৃত্যুর পরে ওর জনপ্রিয়তা বুঝতে পারছি।’’ বাবা কমলবাবু বলছিলেন, ‘‘গত বছরও গালের কাছে বল লেগে গুরুতর চোট পেয়ে সংজ্ঞা হারিয়েছিল ছেলে। কিন্তু এ বার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবে সংজ্ঞাহীন হয়ে গেল বুঝতে পারছি না! এ বার কার জন্য বাঁচব?’’
খড়্গপুরের দক্ষিণ ইন্দার বাড়ির উঠোনে বাবার কাছেই ক্রিকেটে হাতেখড়ি হয়েছিল অনিকেতের। বছর পাঁচেক আগে তাঁর বাবা-মা গোলবাজারে পোশাকের ব্যবসা শুরু করার পরে তাঁরা সেখানেই থাকতে শুরু করেন। আট বছর বয়সে খড়্গপুরের সাউথ স্টার ক্লাবে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হন অনিকেত। তারপর খড়্গপুর ব্লুজ ক্রিকেট ক্লাব ও পি কে সান্যাল মেমোরিয়াল ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে খেলেছেন। অনিকেতের প্রথম কোচ সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মাস খানেক আগে আইআইটিতে খেলার সময়ে দেখা হয়েছিল। তার পরে সেরসা স্টেডিয়ামে খেলা চলাকালীনও কিছুক্ষণ কথা হয়। তখন আরও ভাল খেলার কথা বলেছিলাম। অনিকেতের মধ্যে বাংলা সিনিয়র দলে খেলার সম্ভবনা ছিল।’’
বাণিজ্য বিভাগে স্নাতক অনিকেত এখন সিএবির দ্বিতীয় ডিভিশনে পাইকপাড়া ক্লাবের হয়ে খেলছিলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ভক্ত এই বাঁ হাতি সাধারণত চার নম্বরে ব্যাট করতে নামতেন। তিনি প্রথম নজরে এসেছিলেন সিএবি-র অনূর্ধ্ব-১৪ অম্বর রায় প্রতিযোগিতায় ভাল খেলে।
শুধু কলকাতায় খেলা নয়, নিজের শিকড়ের প্রতিও টান ছিল অনিকেতের। তাই সিএবি লিগে খেলার পাশাপাশি তৈরি করেছিলেন খড়্গপুর স্ট্রাইকার নামে একটি ক্রিকেট দল। অনিকেত নিজেই ছিলেন সেই দলের অধিনায়ক। সেই দলের সদস্য ও অনিকেতের বন্ধু শিবম পানিগ্রাহীর কথায়, ‘‘আমি এখন ঝাড়খণ্ডে রয়েছি। ক্রিকেটে আমি ওঁর জুনিয়র ছিলাম। এই তো দুর্গাপুজোর সময়ে দেখা হল। আমায় বলল, ঝাড়খণ্ডে ভাল সুযোগ থাকলে বলতে। সেই সুযোগ আসার আগেই এই মৃত্যু ভাবতেই পারছি না।”
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার পাইকপাড়া মাঠে অনুশীলনের সময়ে পড়ে গিয়ে সংজ্ঞাহীন হয়ে গিয়েছিলেন অনিকেত। জ্ঞান আর ফেরেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy