Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

প্রদীপ, ভেষজ রঙে সাজল ক্যাম্পাস

প্রদীপের আলোয় কোথাও সীতার অগ্নিপরীক্ষা, কোথাও জয়দ্রথের মৃত্যু-কথা তুলে ধরা হয়। এই ‘ইল্লু’ ও ‘রঙ্গোলি’ মোবাইল-ক্যামেরায় বন্দি করার হিড়িকও ছিল নজরকাড়া।

ঝলমলে: আলোর সাজ আইআইটির রাজেন্দ্রপ্রসাদ হলে। নিজস্ব চিত্র

ঝলমলে: আলোর সাজ আইআইটির রাজেন্দ্রপ্রসাদ হলে। নিজস্ব চিত্র

দেবমাল্য বাগচী
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০১৭ ০০:৫০
Share: Save:

বছরভর পড়ার চাপ। তবে দীপাবলিতে উৎসবে মাতের খড়্গপুর আইআইটি-র পড়ুয়ারা। ঐতিহ্য মেনে পরিবেশবান্ধব বিশ্ব গড়ার বার্তা দিয়েই প্রদীপ ও ভেষজ রঙে সেজে ওঠে গোটা ক্যাম্পাস। পড়ুয়াদের উৎসাহ বাড়াতে হয় প্রতিযোগিতা।

সেই ধারা বজায় রেখে এ বারও দীপাবলি উপলক্ষে ‘রঙ্গোলি’ ও ‘ইল্লু’ উৎসব হল খড়্গপুর আইআইটি-তে। বৃহস্পতিবার কালীপুজোর সন্ধ্যায় আইআইটি-র স্কলার্স অ্যাভিনিউতে এই উৎসবে পড়ুয়া ও অধ্যাপকদের ভিড় জমেছিল। আইআইটি জিমখানার উদ্যোগে প্রতিবছর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের সব আলো নিভিয়ে দু’ধারের হলগুলিতে (হস্টেল) কয়েক লক্ষ প্রদীপ জ্বালানো হয়। ভেষজ রং ও প্রদীপের আলোর সেই সাজে পড়ুয়াদের শিল্প নৈপুণ্য ছিল চোখে পড়ার মতো। বাইরের থেকেও অনেকে তা দেখতে ভিড় করেছিলেন। প্রদীপের আলোয় কোথাও সীতার অগ্নিপরীক্ষা, কোথাও জয়দ্রথের মৃত্যু-কথা তুলে ধরা হয়। এই ‘ইল্লু’ ও ‘রঙ্গোলি’ মোবাইল-ক্যামেরায় বন্দি করার হিড়িকও ছিল নজরকাড়া।

দক্ষিণ ভারতের লোকচিত্র থেকেই জন্ম নিয়েছে রঙ্গোলি। অন্ধ্রপ্রদেশে ‘মুগ্‌গু’, তামিলনাডুতে ‘কোল্লাম’ ও কেরলে ‘কোলাম’ নামে পরিচিত এই লোকচিত্র। একসময়ে কর্নাটকের বাসিন্দারা মেঝেতে হলুদ, সিঁদুর দিয়ে যে ‘রঙ্গভালি’ চালু করেছিলেন, তা থেকেই রঙ্গোলির নামকরণ বলে মনে করা হয়। সেই ১৯৮১ সাল থেকে আইআইটির আজাদ হলে প্রথম চালু হয় এই রঙ্গোলি উৎসব। পরে এই উৎসবের জাঁক বাড়াতে বাঁশের ‘চাটাই’ (খাঁচা) তৈরি করে তার উপর সমান্তরালভাবে প্রদীপ বসিয়ে ইল্লু (শব্দটি এসেছে ইলুমিনেশন থেকে) চালু হয়। এখন প্রযুক্তির ব্যবহারে নিখুঁত গ্রিড তৈরি করে ইল্লুকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলা হচ্ছে। তবে তেল প্রদীপ ও ভেষজ রঙে নির্মল পরিবেশের বার্তা দিয়ে চলেছে পড়ুয়ারা। আইআইটিতে এই উৎসবের আয়োজক জিমখানার মুখপাত্র সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র প্রত্যুষ বিবেক বলেন, “পড়াশুনোর চাপ মুক্ত হতে আমরা এই উৎসবের আয়োজন করি। সেই সঙ্গে প্রদীপ ও ভেষজ রং ব্যবহার করে পরিবেশ রক্ষার বার্তা দেওয়া হয়।”

এখন রঙ্গোলি ও ইল্লু আজাদ হলের চৌহদ্দি ছাড়িয়ে রাজেন্দ্রপ্রসাদ হল, রাধাকৃষ্ণণ হল, মদনমোহন মালব্য হল, সরোজিনী নায়ডু হল, মাদার টেরেজা হলে ছড়িয়ে পড়েছে। রাধাকৃষ্ণণ হলের থিমই এ বার ছিল মহাভারতের অভিমন্যু ও জয়দ্রথ বধের কাহিনী। প্রদীপের কারুকাজে সাজানো হয়েছিল চক্রব্যুহে অভিমন্যু বধ থেকে সূর্যকে ঢেকে জয়দ্রথ বধে কৃষ্ণ-অর্জুনের সক্রিয়তা। ওই হলের সেনেট সদস্য প্রতিষ্ঠানের চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়া হর্ষ বলেন, “আমরা তিনটি চাটাইয়ে এই দৃশ্য ফুটিয়ে তুলতে গত দেড় মাস ধরে কাজ করছি। গত বছর আমরা প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলাম। এ বারও তা পাব বলে আশা করছি।”

পিছিয়ে নেই মেয়েদের হস্টেল অর্থাৎ হলগুলিও। একসময়ে মেয়েরা রঙ্গোলিতে এগিয়ে থাকলেও এখন ইল্লুতেও তারা পিছিয়ে নেই। সরোজিনী নায়ডু হলের আবাসিক তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী সিমরন গর্গ বলেন, “আমরা গত বছর চতুর্থ পুরস্কার পেয়েছিলাম। এ বার এক মাস ধরে ইল্লুতে সীতার অগ্নিপরীক্ষা ফুটিয়ে তুলেছি। আশা করছি আমাদের ঝুলিতে পুরস্কার আসবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Diwali কালীপুজো Kali Puja 2017
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE