Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Jhargram

উৎসবে বঞ্চনার প্রতিবাদ ধামসায়

বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ছিলেন ঝুমুর গানের শিল্পী ও বাদ্যকার। দীর্ঘ প্রতিবাদ মিছিল হেঁটেছে অনেক পথ।

গান-গাইতে-দেয়-না: জেলাশাসকের দফতরের বাইরে জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

গান-গাইতে-দেয়-না: জেলাশাসকের দফতরের বাইরে জমায়েত। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২০ ০১:২৩
Share: Save:

জঙ্গলমহলের লোকসংস্কৃতির বিকাশে শুরু হয়েছিল উৎসব। এ বার ষষ্ঠ বর্ষের জঙ্গলমহল উৎসবে দেখা গেল, লোকশিল্পীদের একাংশের মধ্যে জমেছে ক্ষোভের আঁচ। উৎসবে সে ভাবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ না-পেয়ে শুক্রবার জেলাশাসকের অফিসের সামনে ধামসা-মাদল বাজিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন কয়েকশো লোকশিল্পী। তাঁদের অনেকের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘বহিরাগত শিল্পীদের প্রাধান্য বন্ধ করুন’।

বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই ছিলেন ঝুমুর গানের শিল্পী ও বাদ্যকার। দীর্ঘ প্রতিবাদ মিছিল হেঁটেছে অনেক পথ। বেজেছে ধামসা, মাদল। শিল্পীরা গেয়েছেন নানা লোকগান। জেলাশাসকের দফতরের সামনে পৌঁছনোর কিছুটা আগে পুলিশ ব্যারিকেড করে মিছিল আটকায়। এরপর অনেকে গলা ছেড়ে গাইতে শুরু করেন প্রয়াত শিল্পী বিজয় মাহাতোর জনপ্রিয় গান, ‘‘ঠিক থাকলে ঠিকেই তালে মাদলটা বাঁজাব, ধমকালে ভাই আড়েথাড়ে ধমসা গুড়ে দিব।’’ সে অর্থে দাবি পূরণ হয়নি। তা হওয়া কার্যত সম্ভবও নয়। কারণ, আজ,শনিবারই শেষ হচ্ছে উৎসব। তবে লোকশিল্পীরা প্রশাসনের কাছ থেকে পেয়েছেন আশ্বাস। ঝুমুর শিল্পীদের সঙ্গে আলোচনার পরে জেলাশাসক ঝাড়গ্রামে পৃথক ঝুমুর মেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জেলাশাসক আয়েষা রানি বলেন, ‘‘ছ’দিনের জঙ্গলমহল উৎসবে সব শিল্পীকে সুযোগ দেওয়া সম্ভব হয়নি। লোকশিল্পীদের আবেদনকে সম্মান জানিয়ে আমরা দু’দিনের ঝুমুর মেলার আয়োজন করব।’’

২০ জানুয়ারি থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের ননীবালা স্কুল মাঠে শুরু হয়েছে রাজ্য স্তরের জঙ্গলমহল উৎসব। এ বার প্রথম থেকেই অভিযোগ উঠছিল, যাঁদের জন্য উৎসব বঞ্চিত হচ্ছেন তাঁরাই। অভিযোগ, স্থানীয় লোকশিল্পীরা নয়, বহিরাগতেরাই বেশি সুযোগ পাচ্ছেন। জঙ্গলমহল ঝুমুর ও লোকশিল্পী সমন্বয় মঞ্চের উদ্যোগে শুরু হয় প্রতিবাদ। প্রশাসনের তরফ থেকে প্রাথমিক ভাবে বলা হচ্ছিল, বঞ্চনার অভিযোগ সঠিক নয়। আসলে উৎসবের দিন কমেছে। তাই অনেককে সুযোগ দেওয়া যায়নি। প্রতিবাদ থামেনি। সমন্বয় মঞ্চের ডাকে এ দিন বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। শহরের মেন রোড ঘুরে পদযাত্রা জেলাশাসকের দফতরের সামনে হাজির হয়। পদযাত্রায় মহিলাদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। মিছিল আটকানোর পর জঙ্গলমহল ঝুমুর ও লোকশিল্পী সমন্বয় মঞ্চের সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মাহাতো, সম্পাদক তাপস মাহাতো সহ ছ’জন প্রতিনিধি জেলাশাসকের সঙ্গে দেখা করে আট দফা দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। জেলাশাসক, দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও ঝাড়গ্রাম থানার আইসির সঙ্গে আলোচনায় বসেন মঞ্চের প্রতিনিধিরা। তাঁরা দাবি করেন, আগামী জঙ্গলমহল উৎসব-সহ সমস্ত সরকারি মেলার মঞ্চে স্থানীয় শিল্পীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। একই শিল্পীগোষ্ঠীকে বার বার একাধিক মেলায় অনুষ্ঠানের সুযোগ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর থেকে তালিকা নিয়ে লোকশিল্পীদের অনুষ্ঠান করার সুযোগ দিতে হবে। আলোচনায় জেলাশাসক জানিয়ে দেন, ফেব্রুয়ারির গোড়ায় অরণ্যশহরের রবীন্দ্রপার্কে দু’দিনের ঝুমুর মেলার আয়োজন করা হবে। সেখানে জেলার ৮টি ব্লকের লোকশিল্পীরা অনুষ্ঠান করার সুযোগ পাবেন। জেলাশাসকের আশ্বাস পাওয়ার পরে বিক্ষোভ থামিয়ে ফিরে যান লোকশিল্পীরা।

মঞ্চের সহ-সভাপতি সমীর মাহাতো ২০ জানুয়ারি উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঝুমুর গান করেছিলেন। মঞ্চের সভাপতি লক্ষ্মীকান্ত মাহাতোর অবশ্য দাবি, ‘‘সমীর উৎসবের মাঠে ঝুমুর গান করেছিলেন। মঞ্চে তাঁকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া হয়নি।’’ দু’দুদিনের ঝুমুর মেলার প্রশাসনিক সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লক্ষ্মীকান্ত বলেন, ‘‘সরকারি বিভিন্ন প্রচার অনুষ্ঠানে লোকশিল্পীদের ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সরকারি উৎসব ও মেলায় তাঁদের মঞ্চ দেওয়া হয় না। অথচ স্থানীয় শিল্পীরাই জঙ্গলমহলের ঝুমুর, টুসু, ভাদু, জাওয়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। এই বঞ্চনা ও যন্ত্রণার বিরুদ্ধেই আমরা পথে নেমে প্রতিবাদ করতে বাধ্য হয়েছিলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Junglemahal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy