Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামের মেয়েদের পরিণামে স্তব্ধ কোটবাড়

গ্রামেরই এক নাবালিকা মেয়ে খুন হয়ে গিয়েছে। আর তাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে নিহতেরই সহপাঠিনী আর এক নাবালিকা। ষোলো বছরের দু’টি মেয়ের এমন পরিণতিতে স্তব্ধ পটাশপুরের কোটবাড় গ্রাম। অনেকেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, এমন ঘটনা তাদের এলাকাতেই ঘটেছে। নিহত ও ধৃত বছর ষোলোর দুই কিশোরীরই বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কোটবাড় গ্রামে। দু’জনে একই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল নিহত কিশোরী।

সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামে মোমবাতি মিছিল।

সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামে মোমবাতি মিছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

গ্রামেরই এক নাবালিকা মেয়ে খুন হয়ে গিয়েছে। আর তাকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে নিহতেরই সহপাঠিনী আর এক নাবালিকা। ষোলো বছরের দু’টি মেয়ের এমন পরিণতিতে স্তব্ধ পটাশপুরের কোটবাড় গ্রাম। অনেকেই বিশ্বাস করে উঠতে পারছেন না, এমন ঘটনা তাদের এলাকাতেই ঘটেছে।

নিহত ও ধৃত বছর ষোলোর দুই কিশোরীরই বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের পটাশপুর থানার পঁচেট গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কোটবাড় গ্রামে। দু’জনে একই স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়ত। গত শনিবার সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ ছিল নিহত কিশোরী। রবিবার সকালে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা থানার বড়মাতকাতপুরে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি নয়ানজুলিতে তার দেহ পাওয়া যায়। নিহতের বাবা মেয়ের বান্ধবী ও তার বর্তমান প্রেমিকের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযুক্ত কিশোরীকে রবিবারই গ্রেফতার করে পুলিশ। সোমবার ধরা পড়ে অভিযুক্ত যুবক শেখ রফিজুল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, নিহত কিশোরীর দাদার সঙ্গে আগে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ধৃত কিশোরীর। মাস তিনেক আগে সেই সম্পর্ক ভেঙে যায়। এরপর ধৃত কিশোরীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে রফিজুলের। পুরনো সম্পর্ক ভাঙার বদলা নিতে ওই কিশোরী রফিজুলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তার সহপাঠিনী অর্থাত্‌ প্রাক্তন প্রেমিকের বোনকে খুনের ছক কষে বলে অভিযোগ।

মেদিনীপুর মেডিক্যালে ময়না-তদন্তের পরে রবিবার রাতে নিহত কিশোরীর দেহ বাড়িতে পৌঁছয়। রাতেই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। এই ঘটনায় নিহতের পরিবারের পাশেই দাঁড়িয়েছে গ্রামবাসীরা। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার সন্ধ্যায় গ্রামে মোমবাতি মিছিলও হয়। খড়াই বাজার থেকে শুরু হয়ে এই মৌনী মিছিল গোটা গ্রাম পরিক্রমা করে। মিছিলে সামিল বাসিন্দাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে ঘটনার প্রতি ধিক্কার জানানো হয়। রাজনৈতিক দল-মতের ঊর্ধ্বে এ দিনের এই মিছিল হয়। মিছিলে পা মেলান পটাশপুর পঞ্চায়েত সমিতির তৃণমূল কর্মাধ্যক্ষ তাপস বেরা থেকে সিপিএমের স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নজিবুর মল্লিক। প্রত্যেকের একটাই দাবি, “মর্মান্তিক এই ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি চাই।”


বেলদার ঘটনা প্রতিবাদে বিক্ষোভ।

এই ঘটনায় ধর্ষণের তত্ত্বও সামনে এসেছে। পুলিশ তদন্তে জানতে পেরেছে, ধৃত কিশোরীর প্রেমিক রফিজুল খুনের আগে নিহত কিশোরীকে ধর্ষণও করেছিল। রফিজুলের বাড়ি দাঁতনের খণ্ডরুইয়ে। এ দিন মিছিলে সামিল কানপুর শ্রীগুরু শিক্ষা নিকেতনের প্রধান শিক্ষক রামময় আচার্য ও গ্রামীণ ব্যাঙ্কের কর্মী রবীন্দ্রনাথ ঘড়াই বলছিলেন, “গ্রামের একটি মেয়েকে যে ভাবে নির্যাতনের পরে খুন করা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে ধিক্কার জানাতে আমরা পথে নেমেছি। কী ভাবে নিজের সহপাঠিনীকে ষোলো বছরের এক কিশোরী নৃশংস ভাবে খুনের পরিকল্পনা করল, ভাবতেই পারছি না।”

মিছিল এ দিন শেষ হয় নিহত কিশোরী বাড়ির কাছে। মিছিলে যোগদানকারীরা নিহতের পরিজনেদের সঙ্গে দেখা করে সমবেদনা জানান। নিহতের বাবা বলেন, “আমরাও বিশ্বাস করতে পারছি না মেয়ের বান্ধবী এমন একটা ঘটনা ঘটিয়েছে।” এ দিকে, ধৃত কিশোরীর ঠাঁই হয়েছে মেদিনীপুর বালিকা হোমে। তার এই পরিণামে শোকস্তব্ধ বাবা-মা। তাঁরা অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছে মুখ খুলতে চাননি। ফোনে যোগাযোগ করা হলে ধৃত কিশোরীর বাবা বলেন, “আমি অসুস্থ। কথা বলার অবস্থায় নেই।”

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy