সুজয় ও জুন। নিজস্ব চিত্র।
গ্রাম সঙ্গেই ছিল। তবে গত লোকসভায় মুখ ফিরিয়েছিল শহর। সব ফারাক মুছল উপনির্বাচনে। আর জি করের কোনও প্রভাবই পড়ল না। গ্রাম ছাপিয়ে শহর— মেদিনীপুর বিধানসভায় জয়জয়কার তৃণমূলের।
মেদিনীপুরে তৃণমূলের সুজয় হাজরা জিতেছে ৩৩,৯৯৬ ভোটে। যদিও তিনি বলছেন, ‘‘আশা আরও বেশি ছিল। ভেবেছিলাম ৪০ হাজারের বেশি হবে ব্যবধানটা। এই শহরে ছোটবেলা থেকে বড় হয়েছি। অনেক ক্লাবের সঙ্গে, অনেক সংগঠনের সঙ্গে আমি যুক্ত।’’ সুজয়ের ব্যাখ্যা, ‘‘মেদিনীপুর শহরে যেহেতু ভোট কম পড়েছে, ৬০ শতাংশ মাত্র, সেহেতু ব্যবধানটা অনেকটা কম হয়েছে।’’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘‘মেদিনীপুরে কোনও দিনই কেউ ৭০-৮০ হাজার বা ১ লাখ ভোটে জেতেনি। ২০ বা ৩০ হাজারের বেশি মার্জিনে জিতেছে। এ রকমই মার্জিন থাকে এখানে।’’
মেদিনীপুর বিধানসভায় তৃণমূল প্রথম জেতে ২০১১ সালে, প্রায় ২৮ হাজার ভোটে। ২০১৬-তেও তারা জেতে, প্রায় ৩৩ হাজার ভোটে। আর উপনির্বাচনে সুজয় জিতলেন প্রায় ৩৪ হাজার ভোটে। সুজয়ের ঝুলিতে ১,১৫,১০৪ ভোট (৫৩.৪২ শতাংশ)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী, বিজেপির শুভজিৎ রায় পেয়েছেন ৮১,১০৮ ভোট (৩৭.৬৪ শতাংশ)। বাম আর কংগ্রেসও ধুয়েমুছে গিয়েছে। সিপিআইয়ের মণিকুন্তল খামরই ৫.৫১ শতাংশ আর কংগ্রেসের শ্যামল ঘোষ পেয়েছেন ১.৮৩ শতাংশ ভোট।
পরাজয়ের পরে বিজেপি প্রার্থী বলছেন, ‘‘উপনির্বাচনে এমনিতে ভোট কম পড়েছে। শহরে তো খুবই কম ভোট পড়েছে। প্রায় ৬০ শতাংশের মতো। সাধারণ নির্বাচনে ৮০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ে। কম ভোট পড়ায় শহরে যে ভোট পাওয়ার আশা ছিল, তা আমরা পাইনি।’’ শুভজিতের অভিযোগ, ‘‘সরকারিতন্ত্র, পুলিশতন্ত্র— সবার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে! ভোটের আগের দিন গোটা বিধানসভা জুড়ে পুলিশি তাণ্ডব চলেছে। আমাদের কার্যকর্তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, আটক করা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের লোকেরা টাকা
পয়সা ছড়িয়েছে।’’
গ্রামে তৃণমূল বিপুল ভোটে এগিয়ে। এর কারণ নিশ্চয়ই লক্ষ্মীর ভান্ডার? বিজেপি প্রার্থীর স্বীকারোক্তি, ‘‘লক্ষ্মীর ভান্ডার একটা কারণ তো অবশ্যই।’’ পাশাপাশি তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘জেলায় একটা মাত্র বিধানসভায় ভোট। ফলে ওরা (তৃণমূলের লোকেরা) অনেক বেশি মনিটরিং করতে পেরেছে। তাছাড়া, ভোটারদের একাংশের মনে হয়েছে, উপনির্বাচনে বিজেপিকে জেতালে তো আর রাজ্যে সরকার পরিবর্তন হবে না।’’
এই বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মেদিনীপুর শহরের ২৫টি ওয়ার্ডের সবকটির পাশাপাশি ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতও রয়েছে। মেদিনীপুর (সদর) ৪টি, শালবনির ৫টি। একুশের বিধানসভা ভোটে মেদিনীপুরে তৃণমূল জিতেছিল প্রায় ২৪,৩০০ ভোটে। কিন্তু গত লোকসভায় এখানে তৃণমূলের ‘লিড’ ছিল মাত্র ২,১৭০ ভোটের। গ্রামাঞ্চলে ‘লিড’ ছিল প্রায় ৭,২০০ ভোটের। কিন্তু শহরে তারা বিজেপির চেয়ে পিছিয়েছিল প্রায় ৫,১০০ ভোটে।
উপনির্বাচনের ফল পর্যালোচনা করে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, শালবনির ৫টি অঞ্চল থেকে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে। মেদিনীপুরের (সদর) ৪টি অঞ্চল থেকে তারা এগিয়ে রয়েছে প্রায় ৮ হাজার ভোটে। আর শহরে তারা এগিয়ে রয়েছে প্রায় ১৩ হাজার ভোটে। শালবনির ৫টি অঞ্চলে তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার ভোট, বিজেপি প্রায় ২৪ হাজার। মেদিনীপুরের (সদর) ৪টি অঞ্চলে তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ২৮ হাজার ভোট, বিজেপি প্রায় ২০ হাজার। আর মেদিনীপুর শহরে তৃণমূল পেয়েছে প্রায় ৫০ হাজার ভোট, বিজেপি প্রায় ৩৭ হাজার।
এই উপনির্বাচনকে ছাব্বিশের মহড়া হিসেবে দেখছে দুই দলই। সুজয়ের প্রত্যয়, ‘‘যেই প্রার্থী হোন না কেন, ২০২৬ সালে এই আসনে আমরা ৪০ হাজারের বেশি মার্জিনে জিতব।’’ শুভজিতেরও দাবি, ‘‘২০২৬-এ পরিবর্তন হবে। তৃণমূল যাবে, বিজেপি আসবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy