(বাঁ দিকে) রাস্তার উপরেই দাঁড় করানো মোটরবাইকের সারি। মেদিনীপুরের রাজাবাজার এলাকায়। (ডান দিকে) একই কারণে যানজটে নিত্য নাকাল খড়্গুপরের খরিদা-মালঞ্চ রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র
এ যেন ‘যেমন খুশি গাড়ি রাখো’ প্রতিযোগিতা।
রাস্তার ধারে, এমনকী চার মাথার মোড়ে কেউ কেউ মোটরবাইক, সাইকেল রেখে চলে যাচ্ছেন নিজেদের কাজে। মোটরবাইকের সারির পিছনেই দাঁড়িয়ে যাচ্ছে গাড়ির লম্বা লাইন। কানফাটা হর্ন বাজিয়ে কোনও সাড়া না পেয়ে অগত্যা গাড়ির চালকই বাইক সরিয়ে পথ করে নিচ্ছেন। এত কাণ্ডের পর হয়তো দুলকি চালে বাইকের মালিক এসে উপস্থিত হন ঘটনাস্থলে। নিজের গাড়ি জায়গায় নেই দেখে চোটপাটও করেন কখনও কখনও।
দিনে দিনে গাড়ি বাড়ছে। অথচ গাড়ি রাখার জায়গা নেই। তাই চলার রাস্তাই ‘অঘোষিত পার্কিং জোন’। মেদিনীপুর ও খড়্গপুর- দুই শহরেই অবস্থাটা একই।
প্রতিদিন নানা কাজে কয়েক হাজার লোক আসেন পশ্চিম মেদিনীপুরের সদর শহর মেদিনীপুরে। কিন্তু যানজটে ভোগান্তি নিত্যদিনের ছবি। একে হকারদের দাপটে রাস্তা সঙ্কীর্ণ, তার উপরে রাস্তার ধারে বাইকের সারি ‘বিপদ’ আরও বাড়াচ্ছে।
খড়্গপুর শহরের কৌশল্যা, গোলবাজার, গেটবাজার, খরিদা এলাকায় যত্রতত্র গাড়ি রাখার ঘটনায় তিতিবিরক্ত শহরবাসী। রাস্তার এক তৃতীয়াংশ গাড়ির দখলে, বাকি রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলছে ঢিমেতালে। শহরে যান নিয়ন্ত্রণে পুরসভা নির্বিকার বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে রাস্তায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশের উপরই ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন অনেকে। শহরের এক মোটরসাইকেল আরোহী বলছেন, “রাস্তা যেন পৈতৃক সম্পত্তি। যে যেখানে পারছে গাড়ি রাখছে। এই যন্ত্রণা দেখার কেউ নেই।”
দু’ধারে দোকানপাট থাকায় এমনিতেই সঙ্কীর্ণ ওড়িশা ট্রাঙ্ক রোডের কৌশল্যা মোড় থেকে পুরাতনবাজার মোড় পর্যন্ত অংশ। তার উপরে রাস্তার দু’ধারে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় সমস্যা আরও বাড়ছে। কৌশল্যার ব্যবসায়ী স্বপন মেটল্যা বলেন, ‘‘আমাদের দোকানের সামনে যে পারছে গাড়ি রেখে চলে যাচ্ছে। দোকানে ক্রেতারা ঢুকতে সমস্যায় পড়ছেন। আর বাস-ট্রাক এসে গেলেই যানজট হচ্ছে। কোনও পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। পুলিশের বিষয়টি দেখা উচিত।’’
শহরবাসীর একাংশের দাবি, খড়্গপুরে পার্কিংয়ের মতো নির্দিষ্ট জায়গা না থাকায় সমস্যা বাড়ছে। পুরসভার অবিলম্বে পার্কিং জোনের ব্যবস্থা করা উচিত। নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া গাড়ি দাঁড় করালে জরিমানার ব্যবস্থা চালু করা হোক। খড়্গপুরের গোলবাজার ও গেটবাজার রেল এলাকার অধীনে। বাজার এলাকায় পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকায় রাস্তার ধারে গাড়ি রাখতেও বাধ্য হন অনেকে। খড়্গপুরের এক বাসিন্দার অভিযোগ, ‘‘গোলবাজার এলাকায় যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যাপারই নেই। ওই এলাকায় গেলে কয়েক ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে যেতে হয়।’’
গোলবাজার এলাকায় পার্কিং জোন তৈরির জন্য রেলের কাছে দাবি জানানো হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ। গোলবাজার হকার্স মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী শ্যামল সাহার অভিযোগ, ‘‘আমাদের দোকানগুলিতে ঢোকা-বেরনোর পথ এমনিতেই সঙ্কীর্ণ। তার ওপরে দোকানের সামনে দীর্ঘক্ষণ গাড়ি-মোটরবাইক দাঁড়িয়ে থাকলে খুব সমস্যা হয়। রেল কর্তৃপক্ষকে বারবার বলেও লাভ হয়নি। পুলিশও কোনও ব্যবস্থা নেয়না।’’
অবস্থা তথৈবচ মেদিনীপুর শহরেও। শহরের বাসিন্দা দেবব্রত শাসমলের কথায়, “নাতনিকে স্কুলে ও টিউশন পড়তে নিয়ে যাওয়ার সময় যানজটের জন্য যে কী বিপাকে পড়তে হয় তা বলার নয়। কতবার যে রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় গাড়ির ধাক্কা থেকে বেঁচেছি, তার শেষ নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের চিন্তাভাবনা করা উচিত।” একইভাবে প্রবীর পালও বলেন, “রবীন্দ্রনগরের প্রতিটি গলিতেই তো ডাক্তারের চেম্বার আর নার্সিংহোমের ছড়াছড়ি। রাস্তার ধারেই গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। আর সন্ধের পর কেরানিতলা থেকে জজকোর্ট, কালেক্টরেট মোড় এলাকা, পঞ্চুরচক, বটতলা এলাকায় যানজটে নাভিশ্বাস ওঠে।”
দিন কয়েক আগে মেদিনীপুরে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং আটকাতে অভিযান চালায় পুলিশ। যদিও পরদিন সকাল হতেই চিত্রটা সেই একই দাঁড়ায়। শহরের এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘পার্কিং জোন তৈরির কোনও উদ্যোগ নেই। একদিন অভিযান চালিয়েই দায় সেরেছে পুরসভা। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে চিন্তা করার কেউ নেই।’’ এ বিষয়ে মেদিনীপুর পুরসভার পুরপ্রধান প্রণব বসু বলেন, “পার্কিং জোন তৈরি নিয়ে এখনও তেমন কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হবে।”
রেলশহরের রাস্তা দখলমুক্ত করতে কী ভাবছে পুরসভা? খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার বলেন, ‘‘শহরে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার জন্য পুরসভার নিজস্ব জমি নেই। তবে শহরে যে হারে যানবাহন বাড়ছে তাতে পার্কিং জোন তৈরির পরিকল্পনা করতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন এ বিষয়ে উদ্যোগী হলে আমরা নিশ্চয় সহযোগিতা করব।’’ খড়্গপুরের এসডিপিও কার্তিক মণ্ডল বলেন, “জনবহুল এলাকায় গাড়ির পার্কিং জোন তৈরি নিয়ে আমরা পুরসভার সঙ্গে কথা বলব। রাস্তায় গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যেও সচেতনতার অভাব রয়েছে। আমরা এ বার অভিযানে নামব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy