লন্ডভন্ড হোটেল।।
কয়েক বছর আগেও এমপিএসের বিলাসবহুল হোটেল-রিসর্টগুলি গমগম করত অতিথি-পর্যটকদের ভিড়ে। ঝাড়গ্রামের উপকন্ঠে দিঘিশোলে অর্থলগ্নি সংস্থা এমপিএসের বিশাল খামার চত্বরের মধ্যেই ওই হোটেল-রিসর্টগুলিতে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন বেড়াতে আসতেন। সে সবই এখন যেন হানাবাড়ি!
মঙ্গলবার পরিদর্শনের দ্বিতীয় দিনে দিঘিশোলে এসে হতবাক হয়ে যান হাইকোর্ট নিযুক্ত কমিটির সদস্যরাও। কমিটির সঙ্গে ছিলেন আমানতকারী ও তাঁদের আইনজীবীরাও। পুলিশ পাহারা সত্ত্বেও কীভাবে দামি জিনিসপত্র লুঠ হয়ে যাচ্ছে সেই প্রশ্ন তোলেন আমানতকারীদের আইনজীবী শুভাশিস চক্রবর্তী। মূল রিসর্টের একতলায় রেস্তোরাঁয় ঢুকে দেখা যায়, জানালার কাচ ভাঙা, দামি চেয়ার সব উধাও। এসি থেকে ছোটখাট আসবাবপত্রও হাপিশ। রেস্তোরাঁর বিল মেটানোর কার্ড পাঞ্চ মেশিনটি ভাঙা, দামি স্যুইচও ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দোতলাটি নির্মীয়মাণ। কিন্তু তিনতলায় রয়েছে সার সার বিলাসবহুল থাকার ঘর। তিনতলাটি পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ভাবে বাতানুকূল। সেই এসিগুলি উধাও। ঘরের দরজা ভেঙে টিভি, ফ্রিজ, বাথরুমের গিজার এবং দরজার স্বয়ংক্রিয় লক সব নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তিনতলার পশ্চিমের বিলাসবহুল ঘরটি বরাদ্দ ছিল সংস্থার মালিক প্রমথনাথ মান্নার জন্য। এ দিন সেখানে ঢুকে প্রমথনাথের মেয়ে কৃষ্ণাদেবী কেঁদে ফেলেন। গোটা ঘর লন্ডভন্ড। সংস্থার বার কাম ব্যাঙ্কোয়েটে দামি বিদেশি মদের বোতলও ফাঁকা। সব খেয়ে সাফ করে দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। খামারের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ বিভাগের পাঁপড় তৈরির বিভাগ, ডেয়ারি প্লান্ট, গোবর গ্যাস প্লান্ট, ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টেও বেশিরভাগ যন্ত্রাংশ চুরি গিয়েছে। ল্যাবরেটরি ভবনেও চুরি গিয়েছে সরঞ্জাম। এমনকী মাটির নীচে বিদ্যুতের তারবাহী নালার ভিতর দিয়ে চোরেদের যাতায়াতের চিহ্নও পেয়েছেন প্রতিনিধিরা।
আমানতকারীদের আইনজীবী শুভাশিসবাবু বলেন, “যা বুঝছি, দীর্ঘদিন ধরে লুঠপাঠ চলছে। সর্ষের মধ্যে ভূত না থাকলে এমন সম্ভব নয়। বিষয়টি আমরা প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের নজরে আনব।” সূত্রের খবর, কমিটির সদস্যরা মালপত্র লোপাটের বিষয়ে ঝাড়গ্রামের এসপি ও বিনপুর থানার আইসির সঙ্গে কথা বলেছেন। পুলিশের বক্তব্য রিপোর্ট আকারে কমিটির চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুরের নজরে আনা হবে।
প্রমথনাথ মান্না এখন জেলবন্দি। হাইকোর্টের নির্দেশে গত বছর দিঘিশোলে এমপিএস সংস্থার রেজিস্টার্ড অফিস ‘সিল’ করা হয়েছে। গত বছর থেকে ২০ জন পুলিশকর্মী পালা করে গোটা চত্বর সর্বক্ষণ পাহারা দেন। তা-ও কেন এই দশা? ঝাড়গ্রামের এসপি সুখেন্দু হীরা বলেন, “মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে এমপিএসের অফিস ঘরটি সিল করা হয়েছিল। ওখানে আমাদের একটি পুলিশ ক্যাম্প আছে। এমপিএসের বাদবাকি এলাকা থেকে চুরির অভিযোগ পেলেই আমরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। গত কয়েক মাসে আমরা বমাল কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি।”
গত বছর এমপিএসের বাণিজ্যিক ভবন সিল হলেও একই চত্বরে থাকা বিভিন্ন বিভাগ ও ভবনগুলি অবশ্য সিল করা হয়নি। এ দিন বাণিজ্যিক ভবনের রেজিস্টার্ড অফিসের সিল খুলে ঢোকেন কমিটির সদস্যরা। এই অফিসটি অবশ্য অক্ষতই ছিল। তবে বিল বকেয়া থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তা কম্পিউটারগুলি চালানো যায়নি। তবে ঝাড়গ্রামে এমপিএসের যাবতীয় সম্পত্তির সাইট-মানচিত্রটি সংগ্রহ করেন কমিটির সদস্যরা। পরে ফের অফিসটি সিল করে দেওয়া হয়।
এমপিএসের বহুমুখি কৃষি খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মহীন হয়ে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। যাঁদের বেশির ভাগই আদিবাসী-মূলবাসী। ইতিমধ্যে আমানতকারীদের টাকা ফেরাতে বিশেষ কমিটি গড়ে দিয়েছে হাইকোর্ট। কমিটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শৈলেন্দ্রপ্রসাদ তালুকদার। কমিটির প্রতিনিধি তিন সদস্যের দল আপাতত এমপিএসের সম্পত্তির তথ্য সংগ্রহ করছেন। সোমবার থেকে শুরু হয়েছে কাজ। প্রথম দিনেই খামারের একাংশ ঘুরে প্রতিনিধিরা দেখেন বহু জিনিসপত্র লোপাট হয়ে গিয়েছে। এ দিনও দেখা যায় গোটা চত্বর থেকেই লোপাট হয়েছে জিনিসপত্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy