সেই কিশোর বয়স থেকে ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা। প্রায় একত্রিশ বছর অরণ্যশহরে রয়েছি। কিন্তু রাতভর বৃষ্টিতে শহরের এমন ভরাডুবি সত্যি দেখিনি।
আমাদের শহরে একটা সময় জল জমার কথা ভাবাই যেত না। মাটি ছিল শুকনো, চারপাশে অজস্র ডোবা-পুকুর আর জঙ্গল। ঝাড়গ্রামের মাটিই বর্ষার সব জল টেনে নিত। প্রথম বিপর্যয় ঘটল নব্বইয়ের দশকে কয়েকটি বহুতল নির্মাণের পরে। রাস্তা তো বটেই বহুতলের একতলাতেও জল ঢুকে গিয়েছিল সেবার। ২০০৭ সালে অতি বর্ষণের সময়ও সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু এ বারের ছবিটা রীতিমতো আতঙ্ক জাগাচ্ছে।
রবিবার সারা রাতের বৃষ্টি শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা জলবন্দি। রেললাইন জলের তলায়। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ। সুষ্ঠু নিকাশি ব্যবস্থার অভাবেই এই দুর্গতি। চারটি ত্রিফলা, দুটো পাকা রাস্তা আর তিন-চারটে অসম্পূর্ণ নর্দমা করে দিলেই শহর সুন্দর হয় না। দায়িত্বজ্ঞানহীন পুরসভার জনপ্রতিনিধিরা এ কথা কবে বুঝবেন?
শহরে এখন অনেক বহুতল, নতুন বহুতল তৈরিও হচ্ছে। কিন্তু সেই অনুপাতে জল নিকাশির ব্যবস্থা নেই। আগে সিপিএমের পুরসভা এ নিয়ে কিছু ভাবেনি। কয়েকটি রাস্তায় মোরাম বিছানো আর কিছু রাস্তা সামান্য পাকা করা ছাড়া সে আমলে ঝাড়গ্রামে কোনও কাজ হয়নি। তৃণমূলের পুরবোর্ড এসে কয়েকটি পাকা রাস্তা করল। তারপরই শুরু হল এলোমেলো নর্দমা তৈরির কাজ। নর্দমার অতিরিক্ত মাটি রাস্তার ধারে পড়ে রইল, এ দিকে কোনও নর্দমাই অন্য নর্দমার সঙ্গে সংযুক্ত হল না। নর্দমার জল কোথায় যাবে, কোন পথে শহরের বাইরে যাবে— তারও ব্যবস্থা নেই। বড় বড় পুকুরগুলির একটাও সংস্কার করা হয়নি। মজে গিয়ে তাদের জলধারণ ক্ষমতাও কমেছে।
আগে বৃষ্টির জল পুকুর বা ডোবায় চলে যেত, অনেক ফাঁকা জমি ছিল সেখানে যেত। গাছ-মাটিও অনেকটা জল শুষে নিত। কিন্তু এখন কোনও ফাঁকা জায়গা নেই। এক-একটি অঞ্চলে ১০-১২টা করে বহুতল তৈরি হয়েছে। তার জন্য পুকুর-ডোবা, ফাঁকা জমি বোজানো হয়েছে। পুরসভা প্ল্যান পাশ করেই দায়িত্ব শেষ করেছে। কিন্তু এতগুলো বাড়ির জল কোথায় যাবে, সেই নিকাশি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়নি। পাশাপাশি রাস্তা ভেঙে, কেটে পাইপ লাইন বসানো হল। তার মাটিও রাস্তায় পড়ে আছে। যেখানে-সেখানে মাটি থাকায় জল জমে যাচ্ছে। ওই জল নর্দমা দিয়ে বের করে দেওয়া যেত। পাঁচ বছরেও নর্দমার কাজ হয়নি। সর্বত্র নর্দমা হয়নি, নর্দমার সংযুক্তিকরণ হয়নি। জল উপচে ঘরে ঢুকে পড়ছে।
পরিকল্পনাহীন নর্দমা, পাইপলাইন, উঁচু রাস্তা, বহুতল— সবের জেরেই অরণ্যশহর আজ জলমগ্ন। নর্দমা পরিষ্কার না করা, যেখানে-সেখানে আবর্জনা, পলিব্যাগ জমে থাকায় নিকাশিরও দফারফা। যা পরিস্থিতি পুরসভার সঙ্গে সঙ্গে মাঠে নামা উচিত ছিল। কিন্তু কাউন্সিলার বা চেয়ারম্যানের দেখা পাওয়া যায়নি। এখনই সতর্ক না হলে, শহরের জন্য আলাদা মাস্টার প্ল্যান তৈরি না হলে ঝাড়গ্রাম শহরের ঘাটাল হতে বেশি সময় নেই।
লেখক মেদিনীপুর কলেজের বাংলার অধ্যাপক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy