পাখিদের ভিটে ছাড়া করার পরও বন্দর কর্তৃপক্ষ অনুতপ্ত নয়। হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) অমল দত্ত বলেন, ‘‘মানছি ডাল কাটতে গিয়ে পাখির সমস্যা হয়েছে। কিন্তু এর অন্য দিকটিও রয়েছে।’’ তাঁর মতে বকেদের সংখ্যা সাঙ্ঘাতিক বেড়ে গিয়েছে। বকের কারণে দূষণ ছড়াচ্ছে। আবাসিকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছেন তাঁরা। তিনি জানান, বকের বিষ্ঠার গন্ধে এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে । জীবাণু ছড়িয়ে যদি মানুষের ক্ষতি হয় তাঁর দায় কে নেবে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। তাঁর সাফাই, ‘‘হলদিয়া পুরসভাকে আমরা আট কোটি টাকা দিয়ে থাকি কর বাবদ। তাদের এই বকের ছেড়ে যাওয়া নোংরা পরিষ্কার করার দায় রয়েছে।
নোংরা পরিষ্কারের সঙ্গে বক নিধনের কি সম্পর্ক?
এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে অমলবাবু বলেন, ‘‘আমরা গাছ কাটার বরাত দিয়ে থাকি। এক মাস ধরে গাছ কাটা হয়। প্রতি গাছ কাটার সময় দেখা সম্ভব নয় কোথায় কটা পাখি রয়েছে।’’ তাঁর যুক্তি, পাখি মারা সমর্থন না করলেও পাখির দ্বারা দূষণও মেনে নেওয়া যায় না।
এদিনও ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, বৃষ্টিতে জুবুথুবু ছানাদের ছেড়ে যায়নি মা পাখিরা। অধিকাংশই মারা গিয়েছে। মৃত পাখি থেকে দুর্গন্ধ ছড়ালেও কারও হুঁশ নেই।
প্রসঙ্গত, বন্দর আবাসনের একাধিক গাছ ট্রিমিং-এর নামে ডাল পালা ছেঁটে নষ্ট করা হয়েছে শতাধিক বকের বাসা। অধিকাংশ বাসায় পাখির বাচ্চা ছিল, যারা উড়তেই শেখেনি।
বন্দরের এই তুঘলকি কাজে মোটেই সমর্থন নেই হলদিয়ার পরিবেশ ও পশুপ্রেমী মানুষের। বিভিন্ন স্বেছাসেবী সংগঠন থেকে শুরু করে সাধারণ নাগরিকেরাও এই কাজের নিন্দা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়াতেও এই কাজের সমালোচনা শুরু হয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চের রাজ্য কমিটির সদস্য শুচিস্মিতা মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা এই কাজের তীব্র নিন্দা করছি। বন্দরের এই অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে সভা করবো হলদিয়ায়।’’ বন্দর প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। পরিবেশবিদ মৌসম মজুমদার বলেন, ‘‘আমরা ও জেলার বিজ্ঞান সংগঠনগুলি যৌথভাবে একটি ফোরাম করে আন্দোলনে সামিল হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’ তিনি জানান, তাঁরা বন্দরের এই আচরণের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রী ও জাহাজ মন্ত্রীকে সবিস্তারে জানাবেন।
হলদিয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদাস ঘটক বলেন, ‘‘পাখিরা আমাদের অস্তিত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে যুক্ত রয়েছে। এমনিই পরিবেশ দূষণের কারণে পাখির সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। তার উপর এভাবে পাখি নিধন সভ্যতার মূলে কুঠারাঘাত।’’
হলদিয়া নাগরিক মঞ্চও এই কাজের তীব্র নিন্দা করেছে। নাগরিক মঞ্চের পক্ষে অসিত শতপথি জানান, এই কাজ মেনে নেওয়া যায় না। হলদিয়ায় কিছু গাছ সংরক্ষণ করা উচিত পাখিদের থাকার জন্য। এই হঠকারি কাজের প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা পথে নামবেন।
পুরসভা কেন পাখির বিষ্ঠা পরিষ্কার করেনি সেই অভিযোগের উত্তরে হলদিয়া পুরসভার প্রশাসক ও এসডিও পূর্ণেন্দু নস্কর জানান, বন্দরের জায়গা বন্দরের সাফাই কর্মীরাই পরিষ্কার করেন। তবে তাঁরা পুরসভাকে জানালে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
পাখি নিধন সম্পর্কে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ এরকম ঘটনা দেখা উচিত বন দফতরের। আমরা কেউই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করতে পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy