শেষযাত্রা: জওয়ানদের কাঁধেই সবংয়ের মশাগ্রামে পৌঁছল দীপক মাইতির কফিন বন্দি দেহ। নিজস্ব চিত্র
ঘন ঘন স্লোগান উঠছিল— ‘শহিদ দীপক মাইতি অমর রহে’। তা১০ জন জওয়ান একসঙ্গে শূন্যে বন্দুক উঁচিয়ে তিন রাউন্ড গুলি চালালেন শূন্যে। প্রথা মেনে গান স্যালুটে শেষ বিদায় জানানো হল কাশ্মীরে জঙ্গি হামলায় নিহত জওয়ান দীপক মাইতিকে।
সোমবার সবংয়ের মশাগ্রামে কেলেঘাই নদী সংলগ্ন দীপকবাবুদের পারিবারিক জমিতেই শেষকৃত্য হয়েছে। গ্রামের ‘বীর শহিদ’কে শেষ দেখা দেখতে এলাকায় ঢল নেমেছিল। ভিড় সামলাতে পথে নামেন খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীও। সকাল থেকেই দীপকবাবুর বাড়িতে হাজির ছিলেন স্থানীয় বিধায়ক মানস ভুঁইয়া, সেচ কর্মধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি-সহ শাসকদলের নেতারা। শহিদকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি তথা বিধায়ক দিলীপ ঘোষ। দুপুরে গিয়েছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা, জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। সকলেই নিহত জওয়ানের পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন।
কাশ্মীরে কর্মরত ছিলেন মশাগ্রামের দীপকবাবু। শনিবার শ্রীনগর-জম্মু জাতীয় সড়কে সেনা কনভয়ে জঙ্গি হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার রাতে দিল্লি বিমানবন্দরে পৌঁছয় দীপকবাবুর কফিনবন্দি দেহ। তারপর এ দিন ভোরে কলকাতায় দেহ আসে। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের ৩০জনের একটি দল সবংয়ে নিয়ে আসে দেহটি। তাঁদের কাঁধে চেপেই সকাল ১০টা নাগাদ মশাগ্রামের বাড়িতে পৌঁছয় পরিবারের সেজ ছেলের দেহ। কান্নায় ভেঙে পড়েন স্ত্রী রিক্তাদেবী ও মা কনকলতাদেবী। বাড়ির অদূরে কেলেঘাই নদীর ধারে দীপকবাবুদের পারিবারিক জমিতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার আয়োজন হয়। ভাইপো অর্কপ্রভ ও মেয়ে রিয়া দীপকবাবুর মুখাগ্নি করে। সবংয়ের মাটিতে শহিদের ‘গার্ড অফ অনারে’র সাক্ষী থাকতে ভিড় উপচে পড়েছিল। গ্রামের এক যুবক বলছিলেন, “দেশের জন্য দীপকদার প্রাণ গেল। কিন্তু এই মৃত্যু গৌরবের। এতে জওয়ানের পেশার প্রতি শ্রদ্ধা আরও বেড়ে গেল।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু অন্ত্যেষ্টি চলাকালীন হাজির ছিলেন। পরে তিনি দীপকবাবুর স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। দিলীপবাবুর কথায়, “দীপক মাইতির শহিদ হওয়ার ঘটনা মেদিনীপুরবাসীর কাছে গর্বের। তবে কোনও জঙ্গি পার পাবে না। আর দীপকবাবুর পরিবারের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আমি প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করব।” শহিদ জওয়ানের পরিবারও জঙ্গিদের শাস্তি চায়। দীপকবাবুর স্ত্রী রিক্তাদেবী বলেন, “আমাদের পারিবারিক অবস্থা ভাল নয়। তাই সকলের কাছে পরিবারের ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছি। কিন্তু তার আগে চাই, ভারত সরকার আমার স্বামীর খুনিদের উপযুক্ত শাস্তি দিক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy