ভেড়ির নীচেই রয়েছে পাইপ লাইন। নন্দকুমারের টিকারামপুরে।
চাষের জমিতে ভেড়ি তৈরির ফলে মাটির নীচে পাতা তেলের পাইপ লাইনের ক্ষতি ও বড় ধরনের বিপদের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই আশঙ্কার জন্য জমির মালিকদের অসেচতনতাকেই দায়ী করছে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (আইওসি)।
আইওসি সূত্রে দাবি করা হয়েছে, ১৯৬৪ সালে জমি অধিগ্রহণের আগে মালিকদের ন্যায্য ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের আইন অনুসারে পাইপ লাইন রক্ষণাবেক্ষণের সময় ফসলের ক্ষতি হলে তারও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু চাষিদের অভিযোগ, জমিতে তেলের পাইপ পাতা হলেও সেখানে কী করা যাবে না তা নিয়ে তেল সংস্থার তরফে তাঁদের কিছু জানানো হয়নি।
তমলুকের নীলকুণ্ঠিয়ার চাষি রামপদ জানার দাবি, ‘‘জমি নেওয়ার সময়ে আইওসি ওই জমিতে কী করা যাবে, কী করা যাবে না সে বিষয়ে কিছু বলেনি। তাই ধান চাষে লোকসান হচ্ছে দেখে আমার মতো অনেকেই জমিকে মাছের ভেড়ি হিসাবে কাজে লাগিয়েছেন।’’ আইওসি-র পাল্টা দাবি, জমি অধিগ্রহণের আগে মালিকদের সব কিছু জানিয়ে নোটিস পাঠানো হয়েছিল। আপত্তি থাকলে তা জানানোর জন্য ২১ দিন সময়ও বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তখন কোনও আপত্তি জানাননি জমির মালিকেরা।
হলদিয়া মহকুমার মহিষাদলের গাড়ুঘাটা, গোপালপুর-সহ নন্দকুমার ব্লকের টিকারামপুর এবং তমলুকের নীলকুন্ঠিয়া-সহ একাধিক গ্রামে ইন্ডিয়ান অয়েলের পাইপ লাইন পাতা রয়েছে। ওই সব জমিতে ইদানীং চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, ভেড়ির জন্য মাটি কাটতে গেলে মাটির নীচে পাতা পাইপ লাইন ফুটো হয়ে গ্যাস পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বাসিন্দাদের দাবি, নির্গত গ্যাস ভেড়ির জলে মেশার সম্ভাবনা অত্যন্ত প্রবল। আইওসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, গ্যাস ভেড়িতে মিশলে, চিংড়ি-সহ অন্য মাছের ক্ষতি হতে পারে। সংস্থার পাইপ লাইন বিভাগের সার্ভে আধিকারিক অশোক কুমার ঢালি জানিয়েছেন, পাইপ লাইন ফুটো হয়ে গেলে মাটির স্বাভাবিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তেলের পাইপ লাইন পাতা জমিতে অবাধে ভেড়ি তৈরি হওয়ায় নজরদারির প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট তেল সংস্থার পাশাপাশি প্রশাসনের নীরবতা নিয়েও অভিযোগের আঙুল উঠেছে।
আইওসি কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিপদ টের পেয়ে তাঁরা পদক্ষেপ করার জন্য জেলাশাসক, পঞ্চায়েত এবং পুলিশের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে একাধিকবার উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি বলে অভিযোগ। তবে সংস্থার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মুকেশ কুমার জানান, ওই সব চাষিদের বিপদ সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে। এমনকী পাইপলাইন পাতা জমিতে যাতে জলাধার বা ভেড়ি তৈরি না হয় তার জন্য আইনি দিকও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জমির মালিকদের বোঝানো হচ্ছে, জমি অন্য কাজে ব্যবহারের আগে তেল সংস্থাকে জানাতে।
শঙ্কর প্রসাদ ভক্তা নামে এক জমি মালিক বলেন, ‘‘এমন বিপদ আদৌ জানতাম না। এখন বুঝেছি মাছের ভেড়ি আর পাইপ লাইন এক জমিতে থাকা মানে বিপদ। তাই মাছ তুলে নেওয়া হয়ে গেলে পাকাপাকি ভাবে ভেড়ি বন্ধ করব।’’ পাইপ লাইন পাতা জমিতে ভেড়ি আর করবেন না বলে সাফ জানিয়েছেন বাবুলাল ভক্তা, নারায়ণচন্দ্র মাইতি-সহ ১৪ জন জমি মালিক। এ ব্যাপারে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের বিদায়ী পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ সোমনাথ বেরা বলেন, ‘‘জাতীয় সম্পদের পাশাপাশি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। মানুষকে আরও সচেতন হতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy