অমর-রহে: গোলবাজারে কংগ্রেস কার্যালয়ে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
‘চাচা’- এই একটা নাম শুনলেই মনে একটা আলাদা শক্তি পেতাম। উনি ছিলেন আমার একান্ত আপন। চাচা-র প্রয়াণে যেন স্বজন বিয়োগের আঘাত পেলাম।
চাচা ছিলেন গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, জাতীয়তাবাদী মানুষ। সকলের সঙ্গেই ওঁর আত্মিক যোগাযোগ ছিল। উনি ছিলেন আমার অভিভাবক, পরামর্শদাতা। আমার নেতাও ছিলেন উনিই।
চাচা একাধিকবার বিধায়ক হয়েছেন। হয়েছেন মন্ত্রীও। এত সুদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের পরেও বিরোধীরা ওঁর বিরুদ্ধে কোনও কথা বলতে পারতেন না। সবাই ওকে ভালবাসতেন। উনি যে মাটির মানুষ ছিলেন তার প্রমাণ আমি একাধিকবার পেয়েছি। তখন ১৯৭২ সাল, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভায় চাচা মন্ত্রী। চাচা তখন নিজের খড়্গপুরের রেল বাংলোর সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে মানুষকে নিয়ে বসতেন। আমি সদ্য মেদিনীপুর কলেজ থেকে পাশ করেছি। একবার চাচাকে দেখার আগ্রহে ওখানে গিয়েছিলাম। অপরিচিত হলেও সে দিন চাচা আমাকে ডেকে কথা বলেছিলেন। সে দিনই চাচার সঙ্গে প্রথম আলাপ।
চাচা কাহিনী
জন্ম: ১১ জানুয়ারি, ১৯২৫
১৯৬২: প্রথম বিধায়ক
১৯৬৭: বিধানসভায় হার
১৯৭১: জিতে কারামন্ত্রী
১৯৭২: পরিবহণ মন্ত্রীও
১৯৭৭: ফের হার
১৯৮২ সাল থেকে ২০১১, টানা খড়্গপুর সদরের বিধায়ক
২০০১, ২০০৬, ২০১১: বিধানসভার প্রোটেম স্পিকার
২০১৬: দশবারের বিধায়কের হার
নানা সমস্যা নিয়ে সকলে তাঁর কাছে আসতেন। তিনি কাউকে ফেরাতেন না। যতটা সম্ভব তাঁর পাশে থাকার চেষ্টা করতেন। ১৯৭৮ সালে আমি খড়্গপুর-২ ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির সদস্য। চাচা তখন ওই সমিতির সভাপতি। সেই সময়ে নতুন করে চাচার সঙ্গে আলাপ। তখন আমরা একে অপরের মোটরবাইকে কত ঘুরেছি, তা বলে শেষ করা যাবে না।
২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে চাচা হেরে যান। হেরে যাই আমিও। তখন আমার খুব খারাপ অবস্থা। বাড়িতে ২৩ বছরের দুই যমজ ছেলে প্রতিবন্ধী। স্ত্রীও অসুস্থ। নিয়মিত ফোন করে চাচা আমার খবর নিতেন। খড়্গপুরে গেলে ওঁর সঙ্গে দেখা করতাম। মাস ছ’য়েক আগে চাচার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। ফোনেও কথা হলেই বলতেন বাড়িতে যেতে। আর ওঁর সঙ্গে দেখা করা হল না, এটাই আক্ষেপের। চল্লিশ বছরের সম্পর্ক এ ভাবেই শেষ হয়ে গেল। শেষ সময়ে যখন ওঁর আমন্ত্রণে সাড়া দিতে পারিনি, তখন ওঁর দেহ এলেও যাব না। এখান থেকেই মনে মনে ওঁর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy